মনের জোরেই হলে নাজিমুল

সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়েও নিজে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে গিয়েছে নাজিমুল। তার পরেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুখটাও যে কি, ধরা পড়েনি এখনও। মাঝে কিছু দিন শয্যাশায়ী হয়েছিল নাজিমুল। কিন্তু, সামনেই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক। তাই উঠে দাঁড়ায় সে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৮ ০০:০০
Share:

লড়াই: বাবার কোলে নাজিমুল। নিজস্ব চিত্র

সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়েও নিজে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে গিয়েছে নাজিমুল। তার পরেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুখটাও যে কি, ধরা পড়েনি এখনও। মাঝে কিছু দিন শয্যাশায়ী হয়েছিল নাজিমুল। কিন্তু, সামনেই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক। তাই উঠে দাঁড়ায় সে। পরীক্ষা যে দিতেই হবে। সেই মনোবল থেকেই বোলপুরের নীচুপট্টি নীরোদবরণী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুল হক এ বারে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল পরীক্ষাকেন্দ্র বোলপুর তারাশঙ্কর বিদ্যাপীঠে।

Advertisement

নাজিমুলের বাবা শেখ আইনুল হক পেশায় রাজমিস্ত্রি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় ছেলের শারীরিক বিকৃতি দেখে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যান তিনি। তখন থেকেই শুরু হয় চিকিৎসা। অনেক রকম শারীরিক পরীক্ষা করে ধরা পড়ে, নাজিমুলের শরীরে হরমোন স্বাভাবিক পরিমাণে তৈরি হচ্ছে না। সে জন্যই তার বৃদ্ধি একটা জায়গা পর্যন্ত হয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রথমে বাড়ির সবাই ভেঙে পড়লেও পরে কলকাতা, রাজস্থানে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয় নাজিমুলকে। তাতেও কোনও লাভ হয়নি। এরপরে আরও বাড়াবাড়ি আকার নেয় রোগটা। কয়েক মাস আগেও বিছানায় শুয়ে থাকত সে। বেশি নড়াচড়া করারও ক্ষমতা ছিল না। আইনুলের কথায়, ‘‘এই অবস্থাতেও ও যে তিন ঘণ্টা বসে পরীক্ষা দিতে পারবে, সেটাই আমরা কেউ ভাবতে পারিনি। যা করছে সবই ছেলের মনের জোর।’’ তিনি জানালেন, ছেলের সাইকেলটা এখনও রেখে দিয়েছেন তিনি। হয়তো এই মনের জোরেই একদিন আবার উঠে দাঁড়াবে নাজিমুল। এই আশাতেই রয়েছে পুরো পরিবার।

৭০ শতাংশ প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট রয়েছে নাজিমুলের। কিন্তু, আঠারো বছর না হওয়া পর্যন্ত যেহেতু কোনও ভাতা পাওয়া যায় না, তাই আপাতত সরকারি কোনও সাহায্য সে পায় না। এর মধ্যেই ৬টি বিষয়ের পরীক্ষা দিয়েছে সে। সব বিষয়ের পরীক্ষা ভাল হয়েছে বলেই জানিয়েছে নাজিমুল। অথচ, পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা সেটাই নিশ্চিত ছিল না। নাজিমুলের কথায়, ‘‘যখন সবার বই কেনা হয়ে গিয়েছে, আমার বই তখনও আসেনি। বাড়িতে বলেছিলাম আমাকে বই দাও। আমি পড়ব, পরীক্ষা দেব। এরপরেও পড়তে চাই আমি। যতদূর পারব পড়াশোনা করব।’’ এখনও কোনও লক্ষ্য স্থির করতে না পারলেও আগামী দিনে কলাবিভাগে পড়ার ইচ্ছে রয়েছে। নাজিমুলের সহপাঠীরাও চাইছে, পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করে পড়াশোনা চালিয়ে যাক সহপাঠী।

Advertisement

বোলপুর তারাশঙ্কর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক নিত্যানন্দ বাড়ুই জানালেন, নাজিমুলের বাবা জানতেন না যে দরখাস্ত করলে এমন ক্ষেত্রে আরও আধ ঘণ্টা সময় বেশি পাওয়া যায়। যেহেতু কোনও দরখাস্ত হয়নি, সেই অনুমতিটা নাজিমুল পায়নি। ‘‘তবে ও একটুও বসে থাকে না। তিন ঘণ্টাতেই যতটা পারছে খাতায় লিখছে’’— বলছেন নিত্যানন্দবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন