অভাব জয় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিএসসি

এখনও এবড়োখেবড়ো আলপথ দিয়ে ঢুকতে হয় গ্রামে। সাফল্যের পথটাও মসৃণ ছিল না। তবে মানবাজার ২ ব্লকের লেওয়াগাড়া গ্রামের নির্মলকুমার টুডুকে সেই সমস্ত দমাতে পারেনি। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তাঁর হাতে সাম্মানিক ডিএসসি তুলে দিয়েছেন উপাচার্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোরো শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:১২
Share:

সম্মান: সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে নির্মলকুমার টু়ডু। নিজস্ব চিত্র।

এখনও এবড়োখেবড়ো আলপথ দিয়ে ঢুকতে হয় গ্রামে। সাফল্যের পথটাও মসৃণ ছিল না। তবে মানবাজার ২ ব্লকের লেওয়াগাড়া গ্রামের নির্মলকুমার টুডুকে সেই সমস্ত দমাতে পারেনি। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তাঁর হাতে সাম্মানিক ডিএসসি তুলে দিয়েছেন উপাচার্য।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নির্মলবাবু। জানালেন, বাবা মা ছিলেন কৃষিশ্রমিক। জমিতে যা ধান হত তাতে পরিবারের সবার খাওয়ার সংস্থান হতো না। এমনও হয়েছে, বাবা মা কাজ করতে গিয়েছেন বর্ধমান বা হুগলি। সঙ্গে যেতে হয়েছে তাঁকেও। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত রোজই গরু চরাতে যেতে হতো। কেটে আনতে হতো ঘাস।

বৃহস্পতিবার সমাবর্তনে নির্মলবাবুর বাবা জলহরি টুডু এবং মা সরলা টুডুও এসেছিলেন। জলহরিবাবু বলেন, ‘‘এমন অনেক দিন গিয়েছে, রাতে না খেয়ে শুয়ে পড়তে হয়েছে। কখনও ছেলেটার থেকে কোনও অনুযোগ শুনিনি।’’

Advertisement

পড়াশোনা প্রথমে জো়ড়াশাল গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বান্দোয়ানের এন ঝা হাইস্কুল থেকে। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন শিক্ষকেরা। হস্টেলে খরচ লাগত না। সেই সাহায্য পেয়েছেন স্কুলের পাঠ মিটে যাওয়ার পরেও।

উচ্চশিক্ষা প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, তার পরে ওড়িশার ইউনিভার্সিটি অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলোজিতে। সেই সময়ে স্কুল থেকে পেয়েছেন প্রতি মাসে পাঁচশো টাকা করে। নির্মলবাবু বলেন, ‘‘ওই সময়টায় প্রহ্লাদ মাহাতো, সাম্যবিপ্লব মাহাতো, অসিত মান্ডি, রোহিতাশ্ব মণ্ডলের মতো শিক্ষকদের সাহায্য না পেলে এই দিনটা আমার জীবনে হয়তো আসত না।’’

স্কলারশিপ পেয়ে বিশ্বভারতীতে গবেষণা শুরু করেন নির্মলবাবু। তখন স্কুলকে টাকা ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। শিক্ষকেরা বলেন, না। বরং দুঃস্থ মেধাবী পড়ুয়াদের ভার নিক কৃতী ছাত্র।

শিক্ষকদের সেই কথা এখনও অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন তিনি। এ এন ঝা হাইস্কুলের তখনকার শিক্ষক সাম্যবিপ্লব মাহাতো এখন পুঞ্চার নপাড়া হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক। শুক্রবার তাঁর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন নির্মলবাবু। সাম্যবিপ্লববাবু বলেন, ‘‘ছোট থেকেই ও মেধাবী ও পরিশ্রমী। দারিদ্র ওর কাছে হার মেনেছে।’’

কৃষি মন্ত্রকের ট্রাইবাল সাবপ্ল্যান প্রোজেক্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকল্প নিয়ে বান্দোয়ানের দু’টি গ্রামে কাজ করছেন নির্মলবাবু। প্রাণিসম্পদ বিকাশের মাধ্যমে হারাদা ও রিঠাগোড়া গ্রামের মোট ৩০টি পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নতি তাঁর লক্ষ্য।

বান্দোয়ানের বাসিন্দা সাঁওতালি সাহিত্যিক মহাদেব হাঁসদা বলেন, ‘‘অভাবের বিরুদ্ধে নির্মলের লড়াইয়ের কথা আমরা জানি। ওঁর জীবন অন্যদেরও আলো দেখাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন