রামপুরহাটের দুমকা মোড়ে প্রশাসনের অভিযান। —নিজস্ব চিত্র
দু’দিন আগে বাঁকুড়া সফরে গিয়ে বালিতে রাশ টানার জন্যে পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন, এ সব আর কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। সাফ বার্তা পেয়ে অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে বীরভূম জেলা প্রশাসন। কী ভাবে বালি পাচারে রাশ টানা যায়— তার রূপরেখা ঠিক করতে বুধবার ঘণ্টাখানেক ভিডিও কনফারেন্স হয়। জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, ১৯টি ব্লকের বিডিও, ডিএলআরও, বিএলআরও, তিন মহকুমাশাসক, এসডিপিও, সব থানার কর্তারা ছিলেন।
ডিএলআরও নীলকমল বিশ্বাস জানান, যে কোনও মূল্যে অবৈধ বালি পাচার, পাথর পাচার রোখা হবে। প্রয়োজনে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পথে যাওয়া হবে। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, পাচার রুখতে সারা বছরই প্রশাসনিক স্তরে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জেলার মাত্র পাঁচটি পাথর খাদান ছাড়া অন্য খাদান থেকে পাথর উত্তোলনও বন্ধ করা আছে। তারপরেও ঝাড়খণ্ড থেকে পাথর নিয়ে এসে জেলায় ক্রাসিং করে মাল বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযান চালাতে গেলে কর্মীদের মারধর থেকে রাজস্ব আদায় কেন্দ্রে বোমা রাখা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ সমস্ত কিছুর মোকাবিলার কর্মসূচি ঠিক করতেই ওই ভিডিও কনফারেন্স বলে জানা গিয়েছে।
বৈঠকের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ফলও ফলতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন জায়গায় টহল দেয় পুলিশ। অতিরিক্ত পাথর, বালি বোঝাই গাড়ি থেকে বালি-পাথর নামাতেও দেখা গিয়েছে রামপুরহাট–দুমকা রোডের উপরে ঝনঝনিয়া সেতু লাগোয়া এলাকায়। রামপুরহাট মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস জানান, অতিরিক্ত বালি-পাথর বোঝাই গাড়ি দেখার জন্যে পরিবহণ দফতরের কর্মী থেকে বিএলআরও, বিডিও, পুলিশ একযোগে কাজ করছে।
এরই মধ্যে রয়েছে অভিযোগও। মুরারইয়ের দুলান্দি গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্রাম সংলগ্ন ঝাড়খণ্ড এলাকার বাঁশলৈ নদী থেকে বালি তুলে মুরারই থানার দুলান্দি গ্রামে রাস্তার ধারে জড়ো করে রাখছেন বালি মাফিয়ারা। সেই বালি ট্রাক্টর, ট্রাকে করে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশ, প্রশাসনকে অভিযোগ করেও কোনও সুরাহা হচ্ছে না বলে গ্রামবাসীর অভিযোগ।
নীলকমলবাবুরা বড় বড় দবি করলেও অন্য কথা বলছেন জেলার বহু মানুষই। স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের দাবি, ‘‘খাতায়কলমে জেলার বালিঘাট, পাথর খাদান-ক্রাশার বন্ধ থাকলেও, বাস্তবে বহু জায়গাতেই তা চালু আছে। পুলিশ-প্রশাসনের উপরমহলের অনেকেই নির্ধারিত মাসোহারার বিনিময়ে এ নিয়ে নীরব থাকেন।’’ এই অসাধু চক্রকে ভাঙার ক্ষমতা প্রশাসনের কর্তাদের রয়েছে তো? বাসিন্দাদের এই প্রশ্নের যদিও জবাব মিলছে না।