কাজের ফাঁকে পুজোও দিলেন বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র
বছর দু’য়েক আগে কৌশিকী অমাবস্যার সময়ে বিদ্যুৎ-বিপর্যয়ে মুখ পুড়েছিল তারাপীঠের। তার পুনরাবৃত্তি এড়াতে এ বার উদ্যোগী হলেন খোদ বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। বুধবার তারাপীঠে এসে দফতরের আধিকারিকদের বৈঠক করেন মন্ত্রী। সেখানে গুরুত্ব পেল কৌশিকী অমাবস্যার সময়ে তারাপীঠ এলাকার বিদ্যুৎ পরিষেবা নিরবিচ্ছিন্ন রাখার বিষয়টি। তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের তরফে অন্য যে সমস্ত পরিকল্পনা রয়েছে, তার জন্য দফতরের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতারও আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
এ দিন সকালে তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের অফিসে বৈঠক করেন মন্ত্রী। তার আগে তারাপীঠ মন্দিরে পুজো দেন তিনি। এ দিনের বৈঠকে ছিলেন তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, পর্ষদের মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস-সহ বিদ্যুৎ দফতরের রামপুরহাট মহকুমার বিভাগীয় বাস্তুকার এবং অন্য আধিকারিকেরা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎমন্ত্রী দাবি করেন, ‘‘রাজ্যের কোথাও এখন আর লোডশেডিং হয় না। যদি কখনও কোথাও লোডশেডিং দেখা যায়, তা হলে সেটাও প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে। দ্রুত মেরামতিও হয়।’’ এরপরেই কৌশিকী অমাবস্যার সময়ে বিদ্যুৎ পরিষেবা নিরবিচ্ছিন্ন রাখার জন্যে সতর্ক থাকতে বলেন বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিক ও কর্মীদের। কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভীড় করেন। গতবারই প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ এসেছিলেন। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘সেই সময়ে বিদ্যুৎ না থাকা মানে আমাদের বদনাম। সেটা হতে দেওয়া যাবে না।’’ বছর দু’য়েক আগে এই কৌশিকী অমাবস্যার সময়ে তারাপীঠে ঘণ্টাচারেক বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যহত হয়। তাতে ভোগান্তিতে পড়েন তারাপীঠে আসা ভক্তেরা। তার জেরে বিদ্যুৎ দফতরের দুই আধিকারিককে বদলিও করা হয়।
বিদ্যুৎ দফতরের মাড়গ্রাম গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের সহকারী বাস্তুকার শিশুনাথ দাস জানান, তারাপীঠ এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবার উন্নতির জন্যে দুটো আলাদা ফিডার করা হয়েছে। যাতে একটা ফিডার লাইনে গোলমাল করলে অন্য একটি লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু থাকে। প্রতিটি ফিডার লাইনে ৩০০ অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়। এ ছাড়াও গত দু’বছরে তারাপীঠে ৩০টি নতুন ট্রান্সফর্মারও বসানো হয়েছে। তারাপীঠের ৩০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নতুন করে লো-টেনশন বিদ্যুতবাহী তারও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও মনসুবা মোড় থেকে তারাপীঠ পর্যন্ত মাঠে মাঠে প্রায় ১৮ কিলোমিটার জুড়ে হাই টেনশন লাইনের বিদ্যুৎবাহী তারের পরিবর্তন করা হয়েছে। তারাপীঠ এলাকায় একটি নতুন সাব স্টেশন করার জন্যে জায়গা খোঁজা হচ্ছে বলেও বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান। ‘‘তারাপীঠ শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লির জন্য সরাসরি সংযোগ দেওয়া হবে’’, বলছেন শোভনদেব।
অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ কমাতে গ্রাহকদের কাছে সতর্ক থাকার আর্জি রেখেছেন মন্ত্রী। গ্রাহকদের দাবি মেনে এ দিন তিনি তারাপীঠে কল সেন্টার খোলার অনুমোদনও দেন। তারাপীঠ এলাকার সঙ্গে সংলগ্ন সরলপুর গ্রামকে তারাপীঠ ফিডার লাইনের অন্তর্ভুক্তির জন্যে এলাকাবাসী মন্ত্রীর কাছে আবেদন রাখেন। সেটিও বিবেচনার আশ্বাস দেন মন্ত্রী। তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠক শেষেমন্ত্রী যান সিউড়ি জেলা প্রশাসনের বৈঠকে।