পুলিশ হতে চায় আমির

আমিরের গ্রাম থেকে মাদ্রাসা তিন কিলোমিটার দূরে। প্রতিদিন বাসে যাতায়াত করতে হয়েছে। একটিও টিউশনি ছিল না।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

নানুর শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০০:৫৪
Share:

সফল: শেখ আমির। নিজস্ব চিত্র

সবে পড়তে বসেছে, এমন সময়েই শুরু হয়েছে এলাকা দখলের জন্য বোমা-গুলির লড়াই। তার জন্য পড়া বন্ধ করে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়তে হয়েছে। কত দিন তো স্কুলেই যাওয়া হয়নি। রাজ্য মেধা তালিকায় ষষ্ঠ হওয়া সেই শেখ আমিরের নামই মুখে মুখে ফিরছে। রাজ্য রাজনীতিতে পরিচিত নাম নানুরের বাসাপাড়া। এক সময় রাজনৈতিক সন্ত্রাসে এই তল্লাট ছিল আলোচিত নাম। সেই গ্রামের আমির সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। বাবা কলকাতায় বেসরকারি একটি বাসের কন্ডাক্টর। সেই আয়েই আমিরদের দুই ভাইবোনের পড়াশোনা সহ চার সদস্যের সংসার চলে। বোন সাবিনুর খাতুন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। প্রথমে বাসাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, বঙ্গছত্র হাইস্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পরে স্থানীয় নওদা-পালুন্দি হাই মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় আমির। এ বার ওই স্কুল থেকে ৬৮৯ নম্বর নিয়ে পাশ করেছে।

Advertisement

আমিরের গ্রাম থেকে মাদ্রাসা তিন কিলোমিটার দূরে। প্রতিদিন বাসে যাতায়াত করতে হয়েছে। একটিও টিউশনি ছিল না। মাদ্রাসার শিক্ষকেরাই পড়াশোনায় সাহায্য করেছেন। এখন ওই মাদ্রাসাতেই সায়েন্স নিয়ে পড়তে চায়। পড়াশোনা ছাড়াও খেলাধুলো, আবৃত্তিতে সমান আগ্রহ রয়েছে আমিরের।

আর স্বপ্ন?

Advertisement

আমিরের কথায়, ‘‘এখন আমাদের এলাকা শান্ত হয়েছে। কিন্তু, ছোটবেলায় রাজনৈতিক সংঘর্ষে প্রতিদিন এলাকা উত্তপ্ত হতে দেখেছি। তখন ওই সব সংঘর্ষ থামানোর জন্য পুলিশ হওয়ার ইচ্ছা জাগে। আজ আর সেই তাপ উত্তাপ নেই। কিন্তু, ইচ্ছেটা থেকে গিয়েছে।’’ মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৈয়দ নাসিরুদ্দিন বলছেন, ‘‘দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনা করেছে ছেলেটি। ও শুধু মেধাবী নয়, বিনয়ীও। আমাদের প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মুখ উজ্জ্বল করেছে।’’

ছেলের স্বপ্নের কথা শুনে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন মা আমিনা খাতুন। তিনি বলছেন, ‘‘কোনও রকমে আমাদের সংসার চলে। জানি না ওকে শেষ পর্যন্ত পড়াতে পারব কি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন