সময়সীমা বাঁধলেন খাদান মালিকেরা

শুক্রবার জেলাশাসককে স্মারকলিপি দিতে এসে কমিটির নেতাদের হঁশিয়ারি— মুখ্যমন্ত্রী জেলায় আসছেন। সব কথা জানানো হবে তাঁকেও। ১০ জানুয়ারির মধ্যে অচলাবস্থা কাটলে ভাল, না হলে জেলায় পুরোপুরি বন্ধ হবে পাথর শিল্পাঞ্চল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৫
Share:

বিক্ষোভ: সিউড়ির কালেক্টরেট মাঠে জেলার পাথর শিল্প বাঁচাও কমিটির অবস্থান। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

জেলায় ‘বন্ধ’ থাকা পাথর শিল্পাঞ্চলে অচলাবস্থা কাটাতে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিল পাথর শিল্পাঞ্চল বাঁচাও কমিটি।

Advertisement

শুক্রবার জেলাশাসককে স্মারকলিপি দিতে এসে কমিটির নেতাদের হঁশিয়ারি— মুখ্যমন্ত্রী জেলায় আসছেন। সব কথা জানানো হবে তাঁকেও। ১০ জানুয়ারির মধ্যে অচলাবস্থা কাটলে ভাল, না হলে জেলায় পুরোপুরি বন্ধ হবে পাথর শিল্পাঞ্চল।

জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীর অনুপস্থিতিতে ওই স্মারকলিপি নেন অতিরিক্ত জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস। নেতারা জানান, পাথর শিল্পাঞ্চলের জটিলতা কাটাতে কোনও আশার কথা অতিরিক্ত জেলাশাসক শোনাতে পারেননি। বীরভূম জেলা শিল্পাঞ্চল কমিটির সভাপতি নাজির হোসেন মল্লিক এবং সম্পাদক কমল খান পরে সাংবাদিকদের জানান, প্রশাসন এবং রাজ্য সরকার ঠিক করুক কী ভাবে সমস্যা মেটানো হবে। জেলার অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডের অন্যতম পাথর শিল্পাঞ্চল। অবৈধ তকমা নিয়ে ওই শিল্পাঞ্চল চলুক, তা তাঁরা চান না।

Advertisement

কমিটির দাবি, পরিবেশ আদালত এবং ‘ই-অকশন’-এর ভিত্তিতে ছাড়পত্র না পাওয়ায় জেলার পাথর শিল্পাঞ্চলের ২১৭টি খাদানের মধ্যে খাতা-কলমে মাত্র ৬টি খাদান থেকে পাথর উত্তোলন করার অনুমতি মিলেছে। বাকিগুলি সরকারি ভাবে বন্ধ। পাথর খাদান বন্ধ থাকায় সমস্যায় ১ হাজার ১৬৭টি পাথর ভাঙার কলও (ক্রাসার)। এতে মার খাচ্ছে শিল্পাঞ্চলের উপর নির্ভরশীল পাথর খাদান মালিক, ক্রাসার মালিক ও কয়েক লক্ষ শ্রমিক। প্রশাসনের জরিমানার কোপে বিপন্ন খাদান-ভিত্তিক পরিবহণ ব্যবস্থাও। কমিটির বক্তব্য, বৈধ-অবৈধ ঝামেলা মিটিয়ে সুষ্ঠু সমাধানসূত্র বের করুক সরকার।

শুক্রবার জেলার রাজগ্রাম, নলহাটি, রামপুরহাট, শালবাদরা, পাঁচামী, তালবাঁধ তথা মহম্মদবাজার এলাকার পাথর খাদান মালিক, ট্রাকমালিক, ক্রাসার মালিক এবং শির্লাঞ্চলের উপর নির্ভরশীল শ্রমিকদের বিশাল জমায়েত হয় সিউড়ি জেলাপরিষদের মাঠে। শিল্পাঞ্চল বন্ধ থাকায় কী কী সমস্যায় তাঁদের পড়তে হচ্ছে— তা নিয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন নেতারা। এর আগে শিল্পাঞ্চলে অচলাবস্থা কাটানো এবং অন্য দাবিতে লেখা পোস্টার নিয়ে শহরে মিছিল করেন তাঁরা।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, আগে খাদান থেকে পাথর তোলার অনুমোদন পেতে আবেদন করতে হতো জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে। তার পর রাজ্য সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের অনুমোদন সাপেক্ষে ‘পারমিট’ মিলত। কিন্তু গত বছর জানুয়ারিতে পরিবেশ আদালত নির্দেশ দেয়— বালি, পাথর, মোরাম তুলতে গেলে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র লাগবে। গত বছর প্রশাসনিক তরফে আরও একটি নির্দেশ জারি করা হয়। তাতে বলা হয়েছিল— সরকারি শর্ত পূরণ করে মোটা টাকার বিনিময়ে ‘ই-অকশন’ প্রক্রিয়ায় সামিল হতে হবে। তার ভিত্তিতেই মিলবে পাথর খাদানের লিজ। সে সব শর্ত পূরণ না হওয়ায় নোটিস জারি করে বেশির ভাগ পাথর খাদান বন্ধের নির্দেশ দেয় বীরভূম জেলা প্রশাসন।

তবে কাগজ-কলমে পাথর শিল্পাঞ্চল বন্ধ থাকলেও বাস্তব পরিস্থিতি আলাদা বলে অভিযোগ। জেলা প্রশাসনের অন্দরমগলের খবর, সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মেনে কাজ চলছে ‘বন্ধ’ প্রায় প্রতিটি খাদানই। প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, শিল্পাঞ্চল নিয়ে জটিলতার প্রধান সমস্যা জেলার পাথর খাদানগুলির প্রায় ৯০ শতাংশই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিতে থাকায়। খনিজ সম্পদে সরকারের অধিকার থাকলেও, ব্যক্তিগত জমি খাদানের জন্য নিলামে তোলার ক্ষেত্রে আইনগত বাধা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, পাথর শিল্পাঞ্চল বন্ধে শক্তিপ্রয়োগ করলে কয়েক লক্ষ মানুষ কর্মহীন হবেন। তাতে ছড়াতে পারে উত্তেজনা। প্রশাসন তা-ই এ নিয়ে এখনই কড়া পদক্ষেপ করতে চায়নি। শিল্পাঞ্চলে ‘কাজকর্ম’ হলেও সরাসরি সেখান থেকে রাজস্ব আদায় করা যাচ্ছে না দেখে ঘুরপথে পাথর পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত যানবাহনের কাছ থেকে জরিমানা নিয়ে এখনও পর্যন্ত ৪৫ কোটি টাকার বেশি আদায় করেছে প্রশাসন।

পাথর খাদানের মালিক-সহ অন্যান্য পক্ষের যুক্তি— জরিমানা করে বেশি আয় হচ্ছে বলে গোটা পাথর শিল্পাঞ্চলকে অবৈধ তকমা দিলে সমস্যা মেটে না। পাথর শিল্পাঞ্চল থাকা ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান সরকার সমধানসূত্র বের করেছে। সেই পথে কেন হাঁটছে না এ রাজ্যের সরকার। তাঁদের বক্তব্য, দিনদশেক পাথর শিল্পাঞ্চল বন্ধ থাকলে রাজ্যজুড়ে নির্মাণকাজ থমকে গেলে তখনই টনক নড়বে প্রশাসনের।

জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ বলছেন, অচলাবস্থা কাটাতে একগুচ্ছ প্রস্তাব শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরের তরফে কোনও নির্দেশ এখনও আসেনি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘জেলা প্রাশাসনের তরফে আমাদের জানানো হয়েছে। স্থায়ী সামাধনসূত্র খোঁজার চেষ্টা চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন