বদল আনতে ভরসা সায়েমা, মরিজানরা

কেন্দ্রীয় সরকারের ‘নয়ি রোশনি যোজনা’ প্রকল্পে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলাদের মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে পুঞ্চার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ২ থেকে ৭ জুলাই, শনিবার প্রথম দফার প্রশিক্ষণ শিবির করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুঞ্চা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৮ ০২:৩৮
Share:

পুঞ্চায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার শিবিরে। নিজস্ব চিত্র

মরিজান বিবি শালপাতা সেলাই করতে পারেন। কালেমা বিবি স্যানিটারি প্যাড বানাতে পারেন। কলেজ পড়ুয়া সায়েমা খাতুন পারে অন্যদের কম্পিউটারের প্রাথমিক তালিম দিতে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলাদের সামাজিক এবং আর্থিক বিকাশে আপাতত তাঁদেরই মুখ করে তুলতে চাইছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কে কোন বিষয়ে দক্ষ এবং তার জন্য কতটা সময় দিতে পারবেন, তার তালিকা তৈরি হয়েছে।

Advertisement

কেন্দ্রীয় সরকারের ‘নয়ি রোশনি যোজনা’ প্রকল্পে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলাদের মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে পুঞ্চার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ২ থেকে ৭ জুলাই, শনিবার প্রথম দফার প্রশিক্ষণ শিবির করেছে। যোগ দিয়েছিলেন ২৫ জন। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, তিন বছরের প্রকল্পে মোট ৩৭৫ জন মহিলার প্রশিক্ষিত হওয়ার কথা। সংস্থার অন্যতম কর্ণধার চণ্ডীদাস মুখোপাধ্যায়, নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়, অনির্বাণ রায়রা বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলাদের মধ্যে শিক্ষার হার কম। নিজেদের অধিকার সম্পর্কে তাঁদের অনেকেই সচেতন নন। নানা দিক থেকে বঞ্চনার শিকার হন। শিবিরে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আর্থিক বিকাশের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।’’

তাঁরা জানান, নানা রকমের প্রকল্প নেওয়া, ব্যাঙ্ক ও সরকারি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা। চণ্ডীদাস বলেন, ‘‘মহিলাদের স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের যে সমস্ত প্রকল্প রয়েছে সেগুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা হচ্ছে। এমনকি প্রশিক্ষণের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও প্রতিটি দলের সঙ্গে সমন্বয় রাখা হবে।

Advertisement

প্রথম দফার শিবিরে পুঞ্চা ও নপাড়া পঞ্চায়েত এলাকার মহিলারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সংস্থার অন্যতম পরিচালক নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানবাজার মহকুমার বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার মহিলাদের বিভিন্ন ধাপে শিবিরের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’’ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দফার ২৫ জন মহিলাদের মধ্যে কার কোন বিষয়ে স্বাভাবিক দক্ষতা রয়েছে জেনে সেই মতো তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কয়েকটি প্রকল্প করে তাঁদের আর্থিক বিকাশের লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কেউ ঝাঁটা-ঝুড়ি বানাতে পারেন, কেউ সেলাইয়ে দক্ষ। প্রকল্পও হয়েছে সেই কথা মাথায় রেখেই।

প্রশিক্ষকেরা জানান, গোড়ায় অনেক মহিলাই আড়ষ্ট ছিলেন। এখন অনেকটাই সাবলীল হয়েছেন।

তাঁরা জানান, এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণে নানা রকমের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বোঝানো হয়েছে, স্বচ্ছ ভারত বা নির্মল বাংলা প্রকল্প কেন জরুরি। প্রশিক্ষিতেরা এখন বাড়িতে এবং পাড়ায় শৌচাগার ব্যবহার, বাল্য বিবাহ রোধ, স্কুলছুট ঠেকানোর মতো বিভিন্ন ব্যাপারে প্রচার করছেন।

শিবিরের শেষ দিনে উপস্থিত ছিলেন পুঞ্চা পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সহ-সভাপতি কৃষ্ণচন্দ্র মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘পরিবার পরিকল্পনার সুফলও মহিলাদের বোঝানো হয়েছে।’’

জাহানারা, রুকসানা বিবিরা এখন বলছেন, ‘‘আমরা আড়ালেই থাকতাম। এই শিবিরে এসে চোখ খুলে গিয়েছে। আমাদের জন্য এত প্রকল্প রয়েছে, না এলে জানতেই পারতাম না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন