প্রতিবাদ: আদালত চত্বরে বিক্ষোভ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাস্তার ধারে সারি সারি মালবাহী ট্রাক ও অন্য যানবাহন দাঁড় করিয়ে তোলা আদায় করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, সরকারি দফতরের স্টিকার লাগানো দু’টি গাড়ি নিয়ে ওই কাজ করছিলেন কয়েক জন। আচমকা ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশের টহলদারি ভ্যান। ১০ জনকে ধরে ফেলা হয়। আটক করা হয় সরকারি স্টিকার লাগানো দু’টি গাড়ি। পুলিশের দাবি, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, সরকারি আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে ওভারলোডিং, চালান সহ অন্য কাগজপত্র পরীক্ষার নামে ২০০-৩০০ টাকা করে তোলা আদায় করছিলেন ওই যুবকেরা।
এমনই কাণ্ড ঘটেছে নানুরের পালিতপুর মোড় সংলগ্ন বাদশাহী সড়কে।
ওই গ্রেফতারির প্রতিবাদে বুধবার আদালত চত্বরে বিক্ষোভ দেখায় বীরভূম জেলা ট্রাক অনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সম্পাদক আজিজুল শেখ জানান, ধৃতেরা একাধিক ট্রাক বা ডাম্পারের মালিক। পুলিশের একাংশের তোলাবাজির বিরুদ্ধে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রাক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের কাছে খবর আসে, ধর্মঘট অমান্য করে নানুরের ওই এলাকা দিয়ে কিছু ট্রাক চলাচল করছে। মঙ্গলবার সংগঠনের সদস্যরা সে সব ট্রাক দাঁড় করিয়ে ধর্মঘটে সামিল হওয়ার অনুরোধ করছিলেন। পুলিশ তাঁদের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ সরকারি স্টিকার লাগানো দু’টি গাড়ি এসে দাঁড়ায় ওই মোড়ে। গাড়ি থেকে জনাসাতেক যুবক নামেন। আরও কয়েক জন ছিলেন গাড়িতে। পুলিশের অভিযোগ, ওই যুবকেরা রাস্তার পাশে একের পর এক বালি ও পাথর বোঝাই ট্রাক, অন্য মালবাহী যান দাঁড় করিয়ে সে সবের নথি পরীক্ষার নামে তোলা আদায় শুরু করেন। অধিকাংশ চালকই টাকা দিয়ে চলে যান। যাঁরা দিতে অস্বীকার করেন, গাড়িতে বসে থাকা যুবকদের দেখিয়ে তাঁদের বলা হয়— ‘ওরা নামলে কিন্তু কেস দিয়ে দেবেন’।
আটক গাড়ি। নিজস্ব চিত্র
বুধবার নানুরের বিভিন্ন এলাকায় পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে সেখানকার বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছিল পুলিশের একাধিক ভ্যান। পুলিশের দাবি, বাসাপাড়া ফাঁড়ির একটি টহলদারি গাড়ি ওই মোড়ে পৌছয়। পুলিশের গাড়ি দেখে ও যুবকদের কয়েক জন পালান। ১০ জনকে ধরে ফেলা হয়।
ঘটনার সমালোচনায় সরব বিরোধী নেতারা। বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম বক্তব্য— পুলিশ, প্রশাসনের লোকেদের একাংশ যে গাড়ি দাঁড় করিয়ে টাকা তোলে, গত কালের ঘটনা তার প্রমাণ। সেই সুযোগে ভুয়ো সরকারি কর্মীর পরিচয় দিয়ে তোলাবাজিও চলছে।
পুলিশ অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, ধৃতেরা পাড়ুইয়ের ভেড়ামারি এবং রসইপুর গ্রামের বাসিন্দা। ১৮ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে বয়স। এর আগেও তারা একই ধরণের কাজ করেছে বলে জেরায় স্বীকার করেছেন। পুলিশ ধৃতদের মধ্যে আজহারউদ্দিন শেখ, আসমত শেখকে ৭ দিন নিজেদের হেফাজত চেয়েছিল। আদালত তাদের পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করে।