ভয় ভেঙে এগিয়ে এসে সাধারণ মানুষই ভেস্তে দিল সন্ত্রাসের ছক!
দফায় দফায় বহিরাগত দুষ্কৃতীদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ালো একজোট জনতা। শনিবার দিনের শেষে বাঁকুড়ার সোনামুখীতে পুলিশের হাতে আটক চার। উদ্ধার ৪৫টি তাজা বোমা। কতকটা একই কায়দায় বাঁকুড়াতেও একটি বুথে হামলা চালিয়ে পালানোর পথে জনতার হাতে ধরা পড়ে দুই বহিরাগত। মার খাওয়ার পরে ঠাঁই মেলে থানায়।
ঘটনা হল, ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগেই শুক্রবার সোনামুখীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়ি থেকে ৩৭ জন বহিরাগতদের ঘেরাও করে পুলিশে দিয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা ও বাম কর্মীরা। প্রতিরোধের শুরু সেখান থেকেই। যার রেশ রইল ভোটের দিনেও। এ দিন কাকভোরে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আরএসপি প্রার্থী তথা বিদায়ী উপপুরপ্রধান তপন দত্তের বাড়ির সামনে চেল মোড়ে জমা হয়েছিল জনা ৪০ বহিরাগত দুষ্কৃতী। খবর পেয়ে বেশ কিছু বামকর্মী তপনবাবুর বাড়িতে আসলে পথে দুষ্কৃতীদের হাতে তাঁরা মার খান বলে অভিযোগ। পাড়ায় বহিরাগতরা ঝামেলা করছে, খবর রটতেই এলাকাবাসীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরই মাঝে ৬টা নাগাদ পুলিশের গাড়ি পাড়ায় ঢুকতেই চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। তত ক্ষণে উত্তেজিত জনতাও রাস্তায় নেমে পড়েছে। দুষ্কৃতীদের ছুটতে দেখে পিছু নেয় এলাকাবাসীও। দু’জনকে ধরে ফেলে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। পুলিশ স্থানীয়দের হাত থেকে উদ্ধার করে তাদের থানায় নিয়ে গিয়ে আটক করে। এর পরেই চেলমোড়ে দোকানের পাশে একটি ফাঁকা জায়গায় বস্তাবন্দি ২২টি তাজা বোমা উদ্ধার হয়। ওই ঘটনার পর দিনভর উত্তেজিত ছিলেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ভোট চলাকালীন এই ওয়ার্ডে বিশেষ একটা দাপিয়ে বেড়ানোর সাহস পায়নি তৃণমূল কর্মীরাও। পরে চম্পট দেওয়া বহিরাগতদের মধ্যে থেকে দু’জনকে পুলিশ পুরসভা লাগোয়া অলিগঞ্জ গ্রাম থেকে ধরে আটক করে। তাদের কাছ থেকেও বেশ কিছু তাজা বোমা উদ্ধার হয়।
এ দিকে, ভোট চলাকীন দুপুর প্রায় দেড়টা নাগাদ বহিরাগত দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বাঁকুড়া পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তারাবিদ্যাপীঠ ৮৮ নম্বর বুথে। প্রথমেই ঢিল ছুড়ে তারা ভোটারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তার পর বুথে ঢুকে এজেন্টদের মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ। চোট পান রাজকুমার গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক ভোটকর্মী। প্রায় মিনিট দ’শেক বুথের ভিতরে দাপিয়ে বেড়ানোর পরে চম্পট দেয় তারা। ঝামেলার কথা শুনেই বুথে ছুটে আসেন বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি সুভাষ সরকার। বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে আসেন ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) বাপ্পাদিত্য ঘোষও। হামলাকারীদের বাইক ভাঙচুর করে এলাকাবাসী। এরই মধ্যে খবর আসে এলাকার কাছাকাছি এক হামলাকারীকে দেখা গিয়েছে। শুনেই ছুটে যায় জনতা। অভিযুক্ত যুবককে ধরে শুরু হয় মার। শেষে ডিএসপি-র নেতৃত্বে উত্তেজিত জনতাকে সরিয়ে প্রায় একঘণ্টা পরে ফের শুরু হয় ভোট গ্রহণ। পুলিশ ওই বহিরাহত যুবককেও আটক করে।
ভোট পর্ব মেটার পরে তপনবাবু বলেন, “সোনামুখীর জনতা সব রকম ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে পথে নেমে সন্ত্রাসের মোকাবিলা করেছেন। মানুষ জেগে উঠলে আগ্নেয়াস্ত্রধারী দুষ্কৃতীরাও যে কিছু করতে পারবে না, তা প্রমাণিত হল”। অন্য দিকে, বাঁকুড়ায় পুলিশের ভূমিকায় খুশি সুভাষবাবু। তিনি বলেন, “১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ছাড়া আর কোথাও তেমন সমস্যা হয়নি। পুলিশের কাজেও দ্রুততা দেখা গেছে”।
তবে, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ জেলায় শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হয়েছে বলে দাবি করলেও দিনের শেষে সোনামুখীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পুনর্নিবাচন চেয়েছে শাসকদল! রাজ্যের পরিষদীয় সচিব তথা ছাতনার বিধায়ক শুভাশিস বটব্যালের দাবি, “ভোটে সন্ত্রাস করতে সিপিএমই এলাকায় বহিরাগত ঢুকিয়েছিল। মানুষ ওদের রুখে দিয়েছেন।’’
জেলাশাসক বিজয় ভারতী অবশ্য এ দিনই জানিয়ে দিয়েছেন, কোথাও-ই পুনর্নিবাচন হবে না!