মশার লার্ভা মিলল আক্রান্তের বাড়িতে

প্রতিদিনই কেউ না কেউ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন ডেঙ্গিতে। এই রোগ প্রতিরোধে ও মশার বংশবিস্তার রোধে স্বাস্থ্য দফতর দুবরাজপুর পুরসভা যৌথ ভাবে প্রচার চলাচ্ছে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৭ ০৭:০০
Share:

স্বাস্থ্যকর্তার সঙ্গে আক্রান্ত কবিতা।

ডেঙ্গি আক্রান্ত ছাত্রীর বাড়িতেই মিলল মশার লার্ভা!

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকালে দুবরাজপুরে ডেঙ্গি প্রভাবিত ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পরিস্থিতি দেখতে বেরিয়েছিলেন ডেপুটি সিএমওএইচ (২) শকুন্তলা সরকার। একটি বাড়ির উঠোন পেরিয়ে এসে বাঁ দিকে রাখা আধভাঙা প্লাস্টিকের বালতির সামনে দাঁড়িয়ে যান তিনি। কাছে গিয়ে আতঙ্কিত স্বরে বলে ওঠেন, ‘‘বাপরে বাপ! করছেন কী? এত বলার পরও....।’’ কাউন্সিলর, স্বাস্থ্যকর্মীরা এগিয়ে গিয়ে দেখেন, বালতির নীচে জমে থাকা সামান্য জলেই অসংখ্য মশার লার্ভা কিলবিল করছে। হতাশ শকুন্তলাদেবী ধমকের সুরে বলেন, ‘‘আর কবে সচেতন হবেন আপনারা?’’

হতাশ হওয়ারই কথা। কারণ যে বাড়িতে এই ছবি, দুবরাজপুর তথা জেলায় প্রথম তিন ডেঙ্গি আক্রান্তের এক জন, নবম শ্রেণির ছাত্রী কবিতা খাতুনের বাড়ি সেটা। সদ্য সিউড়ি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছে সে। তারপরও সচেতনতার বহর দেখে রীতিমতো বিরক্ত শকুন্তলাদেবী। শেষ কবিতাকে কাছে ডেকে ডেপুটি সিএমওএইচের পরামর্শ, ‘‘মা, তুই তো বড় হয়েছিস। আজ থেকে তোর কাজ হল, বাড়িতে কোথাও জল জমতে না দেওয়া।’’— মাথা নেড়ে তাতে সায় দেয় কিশোরী।

Advertisement

জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘জেলায় গত ১৫ দিনে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ জন। শুধু দুবরাজপুরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সেই সংখ্যা ২৫। বুধবার পর্যন্ত যা ২০ জন ছিল। ডেঙ্গি নির্ণায়ক ম্যাক অ্যালাইজা টেস্টের পরে বৃহস্পতিবার সংখ্যা পঁচিশে পৌঁছেছে।’’ স্বাস্থ্য দফতরের চিন্তার কারণ সেটাই।

প্রতিদিনই কেউ না কেউ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন ডেঙ্গিতে। এই রোগ প্রতিরোধে ও মশার বংশবিস্তার রোধে স্বাস্থ্য দফতর দুবরাজপুর পুরসভা যৌথ ভাবে প্রচার চলাচ্ছে। মেডিক্যাল ক্যাম্প, মশার বংশবৃদ্ধি রুখতে রাসায়নিক স্প্রে, কামান দাগা এবং জনসচেতনতা প্রচার সত্ত্বেও জনমানসে সেই সচেতনতা সে ভাবে আসেনি। এ দিন বাড়ি বাড়ি সেই কাজই করছিলেন জেলা স্বাস্থ্যকর্তারা। দেখলেন প্রায় প্রতি বাড়িতেই প্লাস্টিকের মগ, ভাঙা বালতি কিংবা অব্যবহার্য পাত্রের মধ্যে জমে থাকা জলে দিব্যি রয়েছে মশার লার্ভা।

এ দিনই কলকাতার স্বাস্থ্য দফতর থেকে এসে এলাকা ঘুরে দেখেন পতঙ্গবিদ তথা স্টেট এন্টোমোলজিস্ট সুরোজিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মশার লার্ভার নমুনা সংগ্রহ করেন তিনি। পরে পুরসভা সভা কক্ষে পুর স্বাস্থ্যকর্মী, কাউন্সিলরদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন তাঁরা। ছিলেন পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে, বিধায়ক নরেশ বাউড়িও। বৈঠক থেকে পতঙ্গবিদ সুরোজিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেপুটি সিএমওএইচরা স্পষ্ট করলেন, ডেঙ্গির জীবাণুর ধারক মানুষ। কিন্তু রোগ ছড়ানোয় মূল ভূমিকা থাকে এডিস প্রজাতির মশার। খুব ছোট্ট শরীরে সাদা সাদা স্পট যুক্ত অত্যন্ত চঞ্চল মশাগুলি। ওই মশা সংক্রামিত মানুষকে কামড়ালে ডেঙ্গির জীবাণু ঢোকে মশার শরীরে। এরপর যতগুলি মানুষকে সেই পূর্ণাঙ্গ মশা কামড়াবে জীবাণু ছাড়াবে ততগুলি শরীরে। একবার শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু প্রবেশের ৮-১০ দিনের মধ্যেই রোগ প্রকাশ পায়।

স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, ডিমপাড়ার আগে একটি স্ত্রী এডিস মশা অন্তত পাঁচটি মানব শরীর থেকে রক্ত চোষে। জমা পরিস্কার জলে একবারে ১০০-১৫০টি ডিম পাড়ে একটি এডিস মশা। জীবদ্দশায় মোট তিনবার ডিম পাড়ে। ফলে সহজেই বোঝা যায়, একটি পূর্ণাঙ্গ বাহক মশা কত সংখ্যক ডেঙ্গি জীবাণুবাহী মশা সৃষ্টি করে। রোগটি সংক্রামিত হয় দাবানলের মতো।

এডিস-কথা

একটি এডিস মশা এক কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে

সূত্র: ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগ

এর প্রতিরোধের একমাত্র উপায় মশার বংশবৃদ্ধি রোধ। সেটা হতে পারে একমাত্র লার্ভা থাকা অবস্থায় সেগুলিকে নষ্ট করে দেওয়া কিংবা ডিম পাড়ার সুযোগ না দেওয়া। তাই বাড়ির আশেপাশে কোনও পাত্রে জল জমে থাকতে দিলে হবে না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই কথাই বোঝান স্বাস্থ্যকর্মীরাও। একই সঙ্গে পরামর্শ, দিনের বেলায় যেহেতু এই মশা কামড়ায়, তাই দিন হোক বা রাত মশারি টাঙিয়ে শুতে হবে। মশার কামড় এড়াতে শরীর ঢাকা জামা কাপড় পড়তে হবে। বেশি করে জল খেতে হবে। আর জ্বর হলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

স্বাস্থ্য দফতরের কথায়, মানুষকে এই কথাগুলো বারে বারে বোঝাতে হবে। আতঙ্কিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় মোকবিলা করতে হবে পরিস্থিতির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন