বৈঠক: জিএম-এর সঙ্গে তিন বিধায়ক। নিজস্ব চিত্র
কয়লাখনিতে উৎপাদন শুরুর দাবিতে আন্দোলন চলছে নিতুড়িয়াতে। এ বার ওই দাবিতে আসরে নামল রাজ্যর শাসক দল। ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করে, পারবেলিয়া কয়লাখনিতে দ্রুত উৎপাদন শুরুর দাবি জানালেন তিন বিধায়ক। সোমবার রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি, পাড়ার উমাপদ বাউড়ি ও কুলটির উজ্জল চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা জানান, এই ব্যাপারে জেনারেল ম্যানেজার মুকেশকুমার যোশীর সঙ্গে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট আলোচনা হয়েছে। পরে জিএম বলেন, ‘‘ডিজিএমএস কয়লাখনি ও কর্মীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে পারবেলিয়াতে শ্রমিকদের খনির নিচে নামতে বারণ করা হয়েছে। তাই উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বিধায়কদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে।”
অবৈধ কয়লা খাদানের জেরে পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া ব্লকের ইসিএলের পারবেলিয়া কয়লাখনি সঙ্কটে পড়েছে। অবৈধ কয়লাখনিতে নেমে কয়লা তুলতে তুলতে দুস্কৃতীরা পৌঁছে যাচ্ছে পারবেলিয়া কয়লাখনির মধ্যে। গত মাসের শেষে পারবেলিয়াতে এসে খনিতে নেমে এই বিষয়টি দেখতে পান পরিদর্শকরা। নিরাপত্তাজনিত কারণে খনির মধ্যে কর্মী ও শ্রমিকদের নামতে বারণ করে নির্দেশ জারি করে ডিরেক্টর অফ মাইনস সেফটি। গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ওই খনিতে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে, অবৈধ কয়লাখাদানের সমস্যা মিটিয়ে কয়লাখনিতে উৎপাদন শুরুর দাবিতে লাগতার অন্দোলন শুরু হয়েছে এলাকায়। খনির শ্রমিক সংগঠনগুলি সম্মিলিত ভাবে ‘কয়লাখনি বাঁচাও কমিটি’ গড়ে আন্দোলনে নেমেছে। পুজো মিটতেই এলাকায় শুরু হয়েছে মিছিল, ধর্না, অবস্থান। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই খনির সামনে ধর্নায় বসছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। পারবেলিয়া কয়লাখনির উপরে এলাকার অর্থনীতির অনেকটাই নির্ভরশীল হওয়ায় আন্দোলনে সামিল হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরাও।
এই পরিস্থিতিতে কিছুটা দেরিতে হলেও আসরে নামল তৃণমূল। অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, ইসিএল-এর লিজহোল্ড এলাকার মধ্যেই অবৈধ কয়লা খাদান চললেও তার দায়ভার রাজ্য সরকার এড়াতে পারে না। প্রশ্ন উঠছে শাসসক দলের ভূমিকা নিয়ে। বিধায়ক পূর্ণচন্দ্রবাবু আবার নিতুড়িয়ারই বাসিন্দা। ফলে কেন তৃণমূল কয়লাখনির বাঁচাতে সরব হচ্ছে না, এই প্রশ্নও করছিলেন অনেকে? সব দিক দেখেই এ বার আসরে নেমেছে তৃণমূল। সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ শতাধিক কর্মী সমর্থক নিয়ে ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার জিএমের কাছে যান তিন বিধায়ক। কী ভাবে ইসিএল ও জেলা প্রশাসন যৌথ ভাবে কাজ করে অবৈধ কয়লা খাদানের সমস্যা মেটাতে পারে, পারবেলিয়া কয়লাখনিতে উৎপাদন শুরু করা যেতে পারে— সেই সমস্ত বিষয়ে জিএম এর সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করেন।
তবে ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, পারবেলিয়াতে কয়লাখনির পাশের অবৈধ কয়লা খাদান পুরোপুরি বন্ধ না হলে কয়লাখনির অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার কোনও সম্ভবনা নেই। জেলা প্রশাসন অবশ্য দাবি করছে, ইসিএলের সঙ্গে আলোচনার পরেই পারবেলিয়া কয়লাখনির পাশের সমস্ত অবৈধ কয়লা খাদান বন্ধ করার কাজ শুরু করা হয়েছে। সূত্রের খবর, পারবেলিয়া গ্রামে যে গোটা দশেক অবৈধ খাদান ছিল, সেগুলির বেশিরভাগই ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। পূর্ণচন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘অবৈধ কয়লা খাদানের সমস্যা নজরে আসতেই প্রশাসন সেগুলি পুরোপুরি বন্ধ করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। কয়লাখনিতে উৎপাদন শুরু করার জন্য আমাদের কাছে ইসিএল যে ধরনের সাহায্য চাইছে, তার সবটাই করা হচ্ছে। আমরা চাইছি সমস্যা মিটিয়ে দ্রুত উৎপাদন শুরু হোক।’’