সুলভ: বাঁকুড়ায় সুফল বাংলার বিপণি প্রথম দিনেই ভিড় টানল। নিজস্ব চিত্র
কিসান মান্ডি গড়ে লাভটা কী হল, তা নিয়ে এত দিন প্রশ্ন তুলে আসছিলেন বিরোধীরা। এ বারে খোদ কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্তর সামনে সেটাই বলে বসলেন বাঁকুড়ার পুরপ্রধান তৃণমূলের মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত। জেলার দু’টি নতুন সুফল বাংলার স্টল ও জয়পুরে কিসান মান্ডি উদ্বোধন করতে শুক্রবার বাঁকুড়ায় এসেছিলেন মন্ত্রী। তাঁর সামনেই বাঁকুড়ার নতুন চটি এলাকায় গড়ে ওঠা কিসান মান্ডিটি চালু না হওয়া নিয়ে আক্ষেপ করেন পুরপ্রধান। মঞ্চে তিনি ‘‘কিসান মান্ডি এমন জায়গায় হল যেখানে কেউ আসছেন না। মান্ডি চালু করতে না পারাটা আমাদের ব্যর্থতা।’’
মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প কিসান মান্ডি বা কৃষক বাজার। ফড়েদের হাত এড়িয়ে কৃষকেরা যাতে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছতে পারেন, সে কথা ভেবেই এই উদ্যোগ। রাজ্যের প্রতিটি ব্লকেই মান্ডি গড়ে ওঠার কথা। কিন্তু অনেক ব্লকেই মান্ডি চালু হওয়ার পরে দেখা গিয়েছে অধিকাংশ দোকান বন্ধ। ব্যবসায়ীদের দাবি, বিক্রিবাটা হচ্ছে না। এর জন্য অনেকেই মান্ডি গড়তে ভুল জায়গা বাছার অভিযোগ তুলেছিলেন। বাঁকুড়ার পুরপ্রধানের মুখেও একই অভিযোগ শোনা গিয়েছে। তিনি বলেন, “এলাকাটি শহরের মাঝে নয়, বাস যোগাযোগ নেই। শহরের আশপাশের গ্রাম থেকে চাষিরা এখানে আনাজ নিয়ে আসতে সমস্যায় পড়েন। ক্রেতারাও এতটা রাস্তা উজিয়ে আসতে চান না। এই সমস্ত কিছু মিলিয়েই বাজার চালু হচ্ছে না।” নতুন একটি মান্ডি উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে পুরনো মান্ডি চালু না হওয়া নিয়ে এই কথা বিতর্ক উস্কে দিয়েছে।
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া জেলায় এখনও পর্যন্ত ন’টি কিসান মান্ডি গড়া হয়েছে। বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, শালতোড়া, ছাতনা, কোতুলপুর, পাত্রসায়র ও ইন্দাসে আগেই মান্ডি উদ্বোধন হয়ে গিয়েছিল। শুক্রবার মন্ত্রী বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরে সুফল বাংলার স্টল ও জয়পুরের কিসান মান্ডিটি উদ্বোধন করেন। ওন্দা ব্লকে মান্ডি গড়ার কাজ চলছে। উদ্বোধন হওয়ার পরেও বাঁকুড়ায় কোনও মান্ডিই এখনও পুরোদস্তুর চালু হয়নি। গত বছর নতুনচটি এলাকার কিসান মান্ডিটি উদ্বোধন করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। প্রায় ছ’কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তোলা ওই মান্ডিতে মোট ২২টি স্টল ও কৃষকদের বসার জন্য বিশাল আড়ৎ রয়েছে। সব ক’টি স্টল লটারি করে ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ী বা কৃষক— কেউই মান্ডিতে আসছেন না। ফলে বাজার বসছে না।
জেলার কিসান মান্ডিগুলির এই অবস্থার জন্য রাজ্য সরকারের পরিকল্পনার অভাবকেই দায়ী করে এসেছেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, বাজার বা শহর থেকে অনেক দূরে গড়া হয়েছে কিসান মান্ডিগুলি। নতুনচটির মান্ডিটি বাঁকুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র মাচানতলা মোড় থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। কিন্তু ওই জায়গাটিই বাছা হল কেন? দফতরের কর্মী ও আধিকারিকদের একাংশের দাবি, মাচানতলা এলাকায় জমি পাওয়া যায়নি। নতুনচটিতে সরকারি জমি থাকায় সেখানেই মান্ডি গড়া হয়।
অবশ্য শুধু জায়গা বাছাইয়ের ভুল নয়, মহাপ্রসাদবাবুর অভিযোগ জেলা কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও। এ দিন মঞ্চে তিনি বলেন, ‘‘উদ্বোধন হওয়ার সময়ে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে লোক জড়ো করলাম। উদ্বোধন হওয়ার পরে আর দফতরের আধিকারিকেরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগই করলেন না।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। সব শুনে তিনি নিদান দেন, “যে সমস্ত ব্যবসায়ীকে স্টল দেওয়া হয়েছে তাঁরা যদি দোকান না খোলেন তাহলে নোটিস দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে স্টল কেড়ে নেওয়া হোক। বহু ব্যবসায়ী রয়েছেন যাঁরা স্টল পাচ্ছেন না বলে ব্যবসা করতে পারছেন না।”
মহাপ্রসাদবাবুদের অভিযোগে নড়েচড়ে বসেছেন মন্ত্রী। এ দিনই তিনি কৃষি বিপণন দফতরের কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন, বাঁকুড়া পুরসভা ও জেলা পরিষদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বাজার পুরোদমে চালু করতে হবে। পরে তিনি বলেন, “এক মাসের মধ্যেই যাতে বাজার চালু হয়ে যায় দফতরের আধিকারিকদের আমি সেই নির্দেশ দিয়েছি।”
পুরপ্রধানের এই বক্তব্য নিয়ে নতুন করে মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরাও। ফরওয়ার্ড ব্লকের অগ্রগামী কিসান সভার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মানিক মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, পরিকল্পনা করে মান্ডি গড়া হচ্ছে না। কোটি কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি হয়ে পড়েই থাকছে। আখেরে এতে যে কারও লাভ হচ্ছে না, সেটা তৃণমূল নেতৃত্বই এ বারে মেনে নিল।’’