নালিশ ক্ষুব্ধ পুরুলিয়াবাসীর
Dengue

নালায় মশা চাষ করাচ্ছে পুরসভাই

শেষমেশ নিকাশি নালার জমা জল পরিষ্কারের আশ্বাস দিয়ে রেহাই পেলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাড়িতে জল জমালে, মশা ডিম পেড়ে বিপদ বাড়াবে। বাসিন্দাদের এই বার্তা দিতে গিয়ে তা যে বুমেরাং হবে আঁচ করতে পারেননি কাউন্সিলর। সেটাই হল। পুরসভা কেন নিকাশি নালার জল পরিষ্কার করেনি, সেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হল পুরুলিয়ার এক তৃণমূল কাউন্সিলরকে। শেষমেশ নিকাশি নালার জমা জল পরিষ্কারের আশ্বাস দিয়ে রেহাই পেলেন তিনি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া পুরসভার এগ্‌জিকিউটিভ অফিসার সুদীপ্ত দেবনাথকে নিয়ে এলাকার অবস্থা সরেজমিনে দেখতে বেরিয়েছিলেন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিভাসরঞ্জন দাস। এই এলাকা থেকেই শহরে প্রথম ডেঙ্গি আক্রান্তের খবর মিলেছিল। বাড়ির মধ্যে জল না জমিয়ে রাখার কথা বলছিলেন তাঁরা। অনেকে মন দিয়ে শুনছিলেন। হঠাৎ-ই ছন্দপতন। জটলার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা এক বাসিন্দার বেমাক্কা প্রশ্ন ছুটে আসে কাউন্সিলরকে লক্ষ্য করে। তিনি বলেন, ‘‘সচেতনতার প্রচার অনেক হয়েছে। কিন্তু যেখানে জল জমে রয়েছে, যা আপনাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, তা আগে পরিষ্কার করুন।’’ বাসিন্দারা কাউন্সিলর ও পুরসভার আধিকারিককে দেখান, এলাকার বহু জায়গায় নিকাশি নালায় জল জমে রয়েছে। বিভাসবাবু বলেন, ‘‘আমি দু’-তিন দিন শহরের বাইরে ছিলাম। এ দিন ফিরেই সরেজমিনে দেখতে বেরিয়েছি। সব নিকাশি নালা দ্রুত পরিষ্কার করা হবে।’’

বস্তুত, ডেঙ্গি মোকাবিলায় সমস্ত পুরসভা ও পঞ্চায়েতকে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ডেঙ্গি রোখার যা প্রথম ধাপ, সেই পরিচ্ছন্নতার কাজে শুধু ৫ নম্বর ওয়ার্ডই নয়, পুরসভার কোনও এলাকাতেই তেমন অগ্রগতি খুঁজে পাচ্ছেন না পুরুলিয়ার শহরের বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ায় ঘুরতে বেড়িয়ে বিভিন্ন এলাকায় সেই ছবিই দেখা গিয়েছে।

Advertisement

শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের রাজাবাঁধের ধার বরাবার এলাকার অন্যতম প্রধান নিকাশি নালা চলে গিয়েছে কেতিকা এলাকার দিকে। নিকাশি নালার চারপাশে ভনভন করছিল মশা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আবর্জনা সাফাই দূরের কথা। পুরসভার প্রতিনিধিদের তাঁদের এলাকায় পা-ও পড়ে না।

১২ নম্বর ওয়ার্ডের দোলগোবিন্দ চট্টোপাধ্যায় লেন-এর মধ্যে দিয়ে গিয়েছে এলাকার প্রধান নিকাশি নালা। এখানেও নালার সাফাই নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের আঁচ পাওয়া গিয়েছে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নিমটাঁড় এলাকায় চলতি মরসুমে প্রথম ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর হদিস মিলেছিল। সেখানে গিয়েও দেখা গিয়েছে একই ছবি। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ধোবঘাটা বাউরি পাড়া এলাকাতেও দেখা গিয়েছে এলাকার প্রধান নিকাশি নালায় জমে রয়েছে আবর্জনা, জল।

শহরের বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের হদিস মেলার পরে গত রবিবার পুরুলিয়া পুরসভার সঙ্গে বৈঠকে শহরের সমস্ত বড় নিকাশি নালাগুলি পরিষ্কারের নির্দেশ দেন জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়। নির্দেশ ছিল, কোনও প্রধান নিকাশি নালাগুলিতে যেন জল না জমে থাকে। বুধবারই ছিল সাফাইয়ের সময় সীমা। তারপরেও কিন্তু ছবিটা বদলায়নি।

রাজাবাঁধের পাড় এলাকায় বাসিন্দা নুরজাহান বিবি বলেন, ‘‘নালা শেষ কবে পরিষ্কার হয়েছে মনে নেই। মশার উৎপাতে দিনের বেলাতেও দরজা-জানলা বন্ধ করে থাকতে হয়। মশারিও খোলা হয় না।’’ বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, নিকাশি নালায় আবর্জনা পড়ে থাকায় নোংরা জল জমছে। চাষ হচ্ছে মশার। তাঁদের অভিযোগ, পুরসভা সব জেনেও চুপচাপ বসে রযেছে। এলাকার কাউন্সিলর রবিশঙ্কর দাসও স্বীকার করছেন, ‘‘দীর্ঘদিন ওই নিকাশি নালা পরিষ্কার হয়নি। বেহাল অবস্থার কথা আমি একাধিকবার পুরসভায় জানিয়েছি।’’

পাশের ২২ নম্বর ওয়ার্ড দিয়ে নিচু এলাকার দিকে চলে গিয়েছে এই নিকাশি নালা। এলাকার বাসিন্দা শেখ সামশের জানান, নর্দমার জলে মশার লার্ভা গিজগিজ করছে। দোলগোবিন্দ চট্টোপাধ্যায় লেনের প্রধান নিকাশি নালায় পড়ে রয়েছে প্লাস্টিক, থার্মোকল-সহ নানা আবর্জনা।

এলাকার বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন শিকদারের কথায়, ‘‘মশার উপদ্রবে দিনেও মশারি টাঙাতে হচ্ছে।’’ বাসিন্দারা জানান, নালা বুজে গিয়ে এমন হয়েছে যে বর্ষায় ঘরের মধ্যে ড্রেনের নোংরা জল ঢুকে যায়।

২৩টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি এই পুরসভায় প্রায় ৭০০ সাফাই কর্মী রয়েছেন। জেলাশাসক জানিয়েছিলেন, সাফাই কর্মী কম নয়। তিনি প্রয়োজনে দিনে দু’বার সাফাই করার কথা বলেছিলেন।

কিন্তু তার পরেও কাজ হচ্ছে না কেন?

পুরসভার এগ্‌জিকিউটিভ অফিসারের দাবি, ‘‘পুরএলাকার আবর্জনা সাফাই নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই সমস্যা চলছে। জেলাশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা সাফাই কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করে কাজ শুরু করেছি।’’ উপ পুরপ্রধান বৈদ্যনাথ মণ্ডলের দাবি, ‘‘এত বড় শহর। তিন দিনের মধ্যে সমস্ত বড় নিকাশি নালা সাফাই করা দুরূহ কাজ। তবে পুরসভা চেষ্টা করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন