টিসন কোথায়? পুলিশ নীরবই

নাবালক খুনের দেড় বছর পরেও মূল অভিযুক্তের টিকি ছুঁতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পরেপরেই যে চার জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তারাও এখন জামিন পেয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এলাকা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০৭
Share:

হামলার পরে। —নিজস্ব চিত্র

নাবালক খুনের দেড় বছর পরেও মূল অভিযুক্তের টিকি ছুঁতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পরেপরেই যে চার জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তারাও এখন জামিন পেয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এলাকা। নাবালকের পরিবারের সমর্থক তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে গত কয়েক মাসে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে খুনে অভিযুক্ত দুষ্কৃতীদের। জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ করে চলেছে দু’পক্ষের বোমাবাজি— স্তব্ধ হয়েছে জনজীবন। পুলিশ এসে তখনকার মতো পরিস্থিতি সামাল দিলেও কয়েক দিনের মধ্যেই সোঁতশাল ফিরেছে চেনা গোলমালেই! সেই ছবি বজায় রেখে বৃহস্পতিবার আবার অশান্ত হল মহম্মদবাজারের এই এলাকা।
এ দিন ঠিক কী হয়েছে?

Advertisement


সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ টিসনের দলবল তৃণমূল সমর্থকদের উপরে চড়াও হয়ে মারধর করে বলে অভিযোগ। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা আব্বাস শেখ বলেন, ‘‘গত রবিবার বোম মারার ঘটনায় অভিযুক্ত টিসনের বাবা আবুল খায়েরকে এ দিন সকালে পুলিশ গ্রেফতার করে। তারপরেই ওরা দলবল পাকিয়ে আমার কাকা আব্দুল হালিমের বাড়িতে চড়াও হয়। দুটি মোটরবাইক, বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। দরজা জানালা বন্ধ করে কোনও রকমে সকলে রক্ষে পেয়েছেন বাড়ির লোকজন।’’ স্থানীয় তৃণমূল সমর্থক রকেট শেখ, লিটন শেখ, সইবুল শেখ-সহ কয়েক জনকে মারধরের অভিযোগও এনেছেন তিনি।
এমনটাই কি চলবে? মূল অভিযুক্ত ইকবাল শেখ ওরফে টিসন কি আর গ্রেফতার হবে না? এলাকায় কি আর শান্তি ফিরবে না? পুলিশের উদ্দেশে সোঁতশালবাসীর এমন হাজারো প্রশ্ন রয়েছে। পরিস্থিতি এখন এমন হয়েছে যে, দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পুলিশের আঁতাতের অভিযোগও তুলতে শুরু করেছেন কেউ কেউ!
বীরভূম জেলা পুলিশ অবশ্য সে অভিযোগ নস্যাৎ করেছে। পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমারের দাবি, ‘‘দুষ্কৃতীদের আড়ালের প্রশ্নই ওঠে না। টিসনকে গ্রেফতার করা হবেই।’’ খোদ পুলিশ সুপারের প্রতিশ্রুতির পরেও তেমন যেন আশ্বস্ত হতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, সবার আগে টিসনকে গ্রফতার করা হোক। পুলিশ অবশ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে স্থানীয়দের আশ্বস্ত করছে। হাত গুটিয়ে বসে নেই তা প্রমাণ করতে গত রবিবার বোমাবাজিতে অভিযুক্ত টিসনের বাবা আবুল খায়েরকে এ দিন সকালেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তারপরেই অবশ্য চেনা গোলমালে ফিরেছে সোঁতশাল।
তৃণমূলের তরফে দাবি, টিসনকে গ্রেফতারের দাবিতে গত সাত অগস্ট এলাকায় মিছিল বের হয়। তারপর থেকে নাবালকের পরিবার, তৃণমূল নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের উপর নানা ভাবে হামলা চালিয়ে আসছে টিসনের দলের লোকজন। বোমা-রক্তের পরিবেশে নাম করে কেউ কোনও মন্তব্যও করতে চাইছেন না। অনেকেই বললেন, ‘‘পুলিশ এলাকায় শান্তি ফেরাক। তারপরে অন্য কথা!’’ সমস্ত অভিযোগকে মিথ্যে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উড়িয়ে দিয়েছেন টিসনের ভাই রোজ শেখ। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘পাঁচামি-সোঁতশাল পাথর খাদান শ্রমিক ইউনিয়ানের প্রায় চার কোটি টাকা আব্বাসরা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছে। সেই টাকার হিসাব চাওয়ার পর থেকেই ওরা নানা ভাবে আমাদের আক্রমণ ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।’’ সে কথা অবশ্য মানতে চাননি তৃণমূল নেতা আব্বাস।
অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, হামলা তার প্রেক্ষিতে পাল্টা হামলা লাগাতার চলছেই। তাতে দাঁড়ি পড়ে শান্তি কবে ফিরবে, তারই অপেক্ষায় সোঁতশালের আমজনতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন