সাঁতার থেকে সেলাই, পথ দেখান বদরদা

জন্ম থেকে শারিরীক প্রতিবন্ধকতা সঙ্গী বছর ছাপ্পান্নের বদরুদ্দোজার। নলহাটি পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভাড়াবাড়িতে থাকেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নলহাটি শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪৯
Share:

প্রত্যয়ী: মহম্মদ বদরুদ্দোজা শেখ। নিজস্ব চিত্র

চার বছর পর জাতীয় স্তরের প্যারা-অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন নলহাটির বসন্ত গ্রামের শামিমা খাতুন। ওই জয়ের অন্যতম কারিগর, শামিমার প্রশিক্ষক মহম্মদ বদরুদ্দোজা শেখকে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে সম্মানিত করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পাশাপাশি পুরস্কার পেলেন নলহাটিরই শামিমা, তুলাবতী লেট। তিনিও বদরুদ্দোজারই ছাত্রী।

Advertisement

জন্ম থেকে শারিরীক প্রতিবন্ধকতা সঙ্গী বছর ছাপ্পান্নের বদরুদ্দোজার। নলহাটি পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভাড়াবাড়িতে থাকেন তিনি। গ্রামের স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ। তার পর সেলাইয়ের কাজ শিখতে সোনারকুণ্ড গ্রামের বাড়ি থেকে হেঁটে নলহাটি বাজারে যেতেন। বাড়িতে পাঁচ ভাই, দুই বোন। বদরুদ্দোজার পাশাপাশি তিন ভাই, এক বোন প্রতিবন্ধী। ১৯৮২-৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে সেলাই মেশিন কিনে ফুটপাতে বসেন তিনি। তখনই ভাবতে শুরু করেন প্রতিবন্ধীদের কল্যাণের কথা।

স্থানীয় সূত্রে খবর, রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মেলনীর সদস্য হয়ে বীরভূম জেলায় তিনি গড়ে তোলেন সংগঠন। বর্তমানে সেটির সদস্যসংখ্যা পৌঁছেছে দেড় লক্ষে। বদরুদ্দোজা সংগঠনের জেলা সম্পাদক। প্রতিবন্ধীদের শংসাপত্র আদায়, তাঁদের কল্যাণে কেন্দ্রীয় আইন কার্যকর করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন। আদিবাসী যুবকদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘আদিবাসী ইভেন গাঁওতা’। এক সময় নিজে ফুটবল খেলতেন চুটিয়ে। তার পর প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন অল্পবয়সী প্রভিভাদের। নব্বইয়ের দশক থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বদরুদ্দোজার প্রশিক্ষণে থাকা অনেক খেলোয়াড় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ফুটবলে দাপট দেখান।

Advertisement

২০০২ সালের পর প্রতিবন্ধী স্কুলপড়ুয়াদের সাঁতার শেখানোর কাজ শুরু করেন বদরুদ্দোজা। নলহাটি থানার কোগ্রামের সুপর্ণা মাল, কয়থা গ্রামের আকাল চৌধুরী, কুসুমজলি গ্রামের অর্চনা হেমব্রম, বিবিয়ানা টুডু, বসন্ত গ্রামের শামিমা খাতুনদের খুঁজে নিয়ে আসেন তিনি-ই। প্রতিবন্ধীদের একের পর এক সাঁতার প্রতিযোগিতায় রাজ্যস্তর থেকে জাতীয়স্তরে চ্যম্পিয়ন হন তাঁর ছাত্রীরা। ২০১০ সালে কমনওয়েলথ গেমসে প্রতিবন্ধীদের সাঁতার প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন সুপর্ণা মাল। চলতি বছরে রাজস্থানে জাতীয় স্তরের প্যারা-অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় শামিমা খাতুন ৫০ মিটার এবং ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল সাঁতারে স্বর্ণপদক জেতেন। আরও দু’টি ইভেন্টে তিনি একটি রুপো ও একটি ব্রোঞ্জ পান। বদরুদ্দোজা জানান, প্যারা-অলিম্পিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় ১০ বছর ধরে প্রতি বারই তাঁর ৩-৪ জন ছাত্রছাত্রী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

ফুটবল, সাঁতারই নয়। ‘বদরদা’র কাছে সেলাইয়ের কাজ শিখে ৩০–৪০ জন তরুণ-তরুণী স্বনির্ভর হয়েছেন। নলহাটিতে তাঁর ভাড়াবাড়িতে খোলা কাপড়ের দোকানে রয়েছেন ১৪ জন কর্মচারী। বদরুদ্দোজা জানান, প্রতিবন্ধী কল্যাণে অনেক আইন রয়েছে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কিন্তু অনেকের কাছে সে সবের সুবিধা পৌঁছচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন