চালককে দিয়ে স্ত্রীকে খুন, দাবি পুলিশের

নানুরের নিমড়া গ্রামের বাসিন্দা আলমিনা বেগমকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তাঁর স্বামী আলাউদ্দিন শেখ এবং সফিকুল ইসলাম ওরফে বুড়োকে গ্রেফতার করেছে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ। খুনের পিছনে কী কারণে ছিল, কী ভাবে বছর পঁয়ত্রিশের আলমিনাকে খুন করা হয়েছিল, তদন্তে নেমে ও ‌ধৃতদের জেরা করে সে-সবই জানা গিয়েছে বলেও পুলিশের দাবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০৭
Share:

বোলপুর এসডিপিও অফিসে সাংবাদিক বৈঠক। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

দেহ মেলার আট দিনের মাথায় নানুরের বধূ খুনের ঘটনার কিনারা করা গিয়েছে বলে দাবি করল পুলিশ। নানুরের নিমড়া গ্রামের বাসিন্দা আলমিনা বেগমকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তাঁর স্বামী আলাউদ্দিন শেখ এবং সফিকুল ইসলাম ওরফে বুড়োকে গ্রেফতার করেছে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ। খুনের পিছনে কী কারণে ছিল, কী ভাবে বছর পঁয়ত্রিশের আলমিনাকে খুন করা হয়েছিল, তদন্তে নেমে ও ‌ধৃতদের জেরা করে সে-সবই জানা গিয়েছে বলেও পুলিশের দাবি।

Advertisement

রবিবার সকালে একটি সাংবাদিক বৈঠকে ওই খুনের তদন্ত নিয়ে বিশদে তথ্য দেন এসডিপিও (বোলপুর) সৌম্যজিৎ বড়ুয়া। তিনি দাবি করেছেন, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছেন, পেশায় গাড়ির ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন তাঁর একটি গাড়ির চালক সফিকুলকে দিয়ে আলমিনাকে খুন করিয়েছেন। জেলার পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘খুনের ঘটনার তদন্ত করে খুব তাড়াতাড়ি দোষীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে নিয়ে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমরা চেষ্টা করব, যাতে শীঘ্রই আলাউদ্দিন ও সফিকুল উপযুক্ত সাজা পায়।’’ ধৃতদের রবিবার বোলপুর আদালতে তোলা হয়। ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম তাঁদের পাঁচ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

ঘটনার সূত্রপাত গত ১ ডিসেম্বর। ওই দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ শ্রীনিকেতনের লোহাগড় গ্রামের এক যুবক অন্য দিনের মতোই তাঁর কাজের জায়গায় যাচ্ছিলেন। স্থানীয় চিপকুঠি জঙ্গলের ভিতরেই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির মাছচাষের পুকুর ধারের রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন তিনি যান। রাস্তা থেকে নেমে একটু জঙ্গলের দিকে এগোতেই বহুদিনের পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে। সেদিকে তাকাতেই তিনি একটি মাঝবয়সী মহিলার মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। প্রথম দিকে ওই মহিলার পরিচয় জানা যায়নি। দুপুরের দিকে জানা যায়, দেহটি নিমড়ার আলমিনা বেগমের। পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণ দেখে প্রথম থেকেই প্রাথমিক পুলিশের সন্দেহ ছিল, আলমিনাকে খুন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে তদন্তে যান পুলিশ সুপার। পরে পুলিশ কুকুর নিয়ে যাওয়া হয় তদন্তে। ইতিমধ্যেই মৃতার স্বামী আলাউদ্দিন শেখকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছিল পুলিশ। কিন্তু প্রথমে তাঁর থেকে কিছুই জানা যায়নি বলে পুলিশের দাবি। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, আলাউদ্দিনের গাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা রয়েছে। কিন্তু, ঘটনার দিন থেকেই নিখোঁজ ছিলেন সফিকুল ওরফে বুড়ো। তাতে সন্দেহ আরও বাড়ে। নিমড়া গ্রামেই সফিকুলের বাড়ি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য শনিবার তাঁকে ধরতে সমর্থ হয় পুলিশ। খুনের ঘটনায় ধরা পড়লেও এর আগে সফিকুলের কোনও ‘ক্রিমিনাল রেকর্ড’ বা অপরাধের ইতিহাস নেই বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে তিনি নেশা করতেন এবং সেই বিষয়টিকেই আলাউদ্দিন কাজে লাগিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

Advertisement

এখানেই মিলেছিল দেহ। নিজস্ব চিত্র

পুলিশের দাবি, আলাউদ্দিনের প্রথম পক্ষের স্ত্রী ছিলেন আলমিনা। তাঁদের দুই সন্তান। পরবর্তী কালে আলাউদ্দিন নিমড়ার আরও এক মহিলাকে বিয়ে করেন। পুনরায় তিনটি মেয়ে হয়। দুই স্ত্রী আলাদা আলাদা বাড়িতে থাকতেন। প্রাপ্য টাকা নিয়ে প্রায়ই আলমিনার সঙ্গে আলাউদ্দিনের অশান্তি হত। স্থানীয় সূত্রেও সে কথা জানা গিয়েছে। এই অশান্তির ফলেই আলমিনাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেন আলাউদ্দিন—এমনই দাবি পুলিশের।

এসডিপিও এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন, পুলিশি জেরার মুখে তাঁদের কাছে সফিকুল কবুল করে নেন যে, তিনিই খুন করেছেন আলমিনা বেগমকে। এই কাজের জন্য তাঁকে প্ররোচিত করেছিলেন আলাউদ্দিন শেখ। এই কাজের

জন্য টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন আলাউদ্দিন। পুলিশ জানায়, পরিকল্পনা মাফিক ১ ডিসেম্বর নিমড়া গ্রাম থেকে স্কুটি করে আলমিনাকে বোলপুরে নিয়ে আসেন সফিকুল। তাঁদের যাওয়ার কথা ছিল পাড়ুইয়ের এক তান্ত্রিকের বাড়িতে। পাড়ুই যাওয়ার পথেই এই চিপকুঠির জঙ্গল। সেখানেই বাথরুম করতে যাওয়ার নাম করে জঙ্গলের ভিতরে আলমিনাকে নিয়ে যান সফিকুল।

পুলিশের আরও দাবি, জেরায় সফিকুল জানিয়েছেন, জঙ্গলের ওই পরিত্যক্ত বাড়িটিতে নিয়ে গিয়ে তিনি গলা টিপে খুন করেন আলমিনাকে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ওই মহিলার মাথায় ইট দিয়ে আঘাতও করেন। জনমানবহীন ওই জায়গায় সফিকুলকে কেউ দেখতেও পাননি। কাজ সেরে স্কুটি নিয়ে চুপচাপ সেখান থেকে সফিকুল সরে পড়েন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন