প্লাস্টিক-মাদকে কেন না, শেখাচ্ছে এনসিসি

জেলা থেকে আসা ৪০০ ক্যাডেটস। বর্ধমান এনসিসির গ্রুপ হেডকোয়ার্টারের উদ্যোগে ওই প্রশিক্ষণ শিবিরের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে এনসিসি সিউড়ি-র ১৫ ব্যাটালিয়ন।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

রাজনগর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৮ ০২:৪৬
Share:

লাউজোড়ে। নিজস্ব চিত্র

প্রধানমন্ত্রী বিমা যোজনায় সুবিধা পেতে গ্রামবাসীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাহায্য করা থেকে শৌচাগার পাওয়ার জন্য আবেদনপত্র লিখে দেওয়া। মাদক ও প্লাস্টিক দূষণের কুফল নিয়ে সামাজিক সচেতনতার মতো প্রচার। গ্রামের স্কুলে ১০ দিনের ‘কম্বাইন অ্যানুয়াল ট্রেনিং’ ক্যাম্পে এসে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সেই কাজই করছেন কয়েক’শো এনসিসি ক্যাডেটস। রাজনগরের লাউজোড় গ্রামে গেলে এখন দেখা যাবে এমন ছবি।

Advertisement

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজনগরের লাউজোড় স্কুল এলাকায় একটি ‘স্মল আর্মস ফায়ারিং রেঞ্জ’ গড়েছিল এনসিসি। তার পর থেকে নিয়মিত এনসিসি ক্যাডেটসদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবির চলছে। ১ জুলাই থেকে এখন চলছে পঞ্চম কম্বাইন অ্যানুয়াল ট্রেনিং ক্যাম্প। যোগ দিয়েছেন পাঁচটি
জেলা থেকে আসা ৪০০ ক্যাডেটস। বর্ধমান এনসিসির গ্রুপ হেডকোয়ার্টারের উদ্যোগে ওই প্রশিক্ষণ শিবিরের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে এনসিসি সিউড়ি-র ১৫ ব্যাটালিয়ন।

এনসিসি জানিয়েছে, সামাজিক ওই কর্মসূচির জন্য মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা বাড়াছে। তার জন্যেই আরও বেশি করে গ্রামের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছেন বিভিন্ন স্কুল, কলেজ থেকে আসা এনসিসি ক্যাডেটসরা। লেফট্যানেন্ট কলোনেল অলোক ঘোষ জানাচ্ছেন, পড়ুয়াদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে, একতা ও শৃঙ্খলাপরায়ণ করে তুলতে স্কুল কলেজের পড়ুয়াদের এনসিসি শেখানো হয়। সেই সঙ্গে সমাজের প্রতি তাদের যে দায়বদ্ধতা থাকা জরুরি, সেটার পাঠও দেওয়া হচ্ছে। আগামী দিনে দিল্লিতে স্থলসেনা ক্যা
ম্পে কোন কোন এনসিসি ক্যাডেটস নির্বাচিত হবেন, তার প্রাথমিক বাছাই পর্ব চলছে এখানে। জুন মাসেই এমন একটি ক্যাম্প হয়েছিল। এ বারও বীরভূম, দুই বর্ধমান, হুগলি এবং পুরুলিয়ার বিভিন্ন স্কুল কলেজ থেকে আসা ৪০০ পুরুষ ও মহিলা ক্যাডেটসদের ‘ওয়েপন ট্রেনিং’, ‘ফায়ারিং’, ‘ম্যাপ রিডিং ড্রিল’ এবং ‘ফিল্ড ক্রাফ্ট’ ও ‘অবস্টাক্যাল রেস’ এর মতো বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও যোগ্যতা যাচাই হবে ক্যাডেটসদের। তার সঙ্গেই চলছে গ্রামের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের কাজ।

Advertisement

ঠিক কী করছেন পড়ুয়ারা?

এনসিসি আধিকারিকরা বলছেন, ‘‘গ্রামের স্কুলেই যেহেতু কর্মকাণ্ড চলছে, তাই ওই গ্রামের মানুষকে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প— যেমন প্রধানমন্ত্রী বিমা যোজনা, স্বচ্ছ ভারত মিশন, বেটি বাঁচাও এ নানা প্রকল্পের সুবিধা জানানো হচ্ছে। সে সব মানুষ পেয়েছেন কি না দেখা হচ্ছে। এ ছাড়াও প্লাস্টিক ব্যবহার, মাদক কিংবা নেশার সম্পর্কে
সচেতন করার চেষ্টা চালাচ্ছে ক্যাডেটসরা।’’ লেফট্যানেন্ট জানাচ্ছেন, গ্রামে যাঁদের বাড়িতে এখনও শৌচাগার নেই বা বছরে ১২ টাকা খরচ করে বিমার সুবিধা নিতে পারেন, তাঁদের চিহ্নিত করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে গ্রামটিকে দত্তক নেওয়ার কথাও ভাবছেন বলেও জানিয়েছেন।

গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, এনসিসি ক্যাডেটসদের সঙ্গে গ্রামে প্রচার চালাতে সঙ্গে রয়েছে সুবেদার মেজর দেশরাজ, ১৫ ব্যাটালিয়নের সেকেন্ড অফিসার একে দে, মেজর রিন্টুকুমার বিশ্বাস, বোলপুরের এনসিসি অফিসার একে সাধু সহ অনেকে। সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের এসিসি ক্যাডেট আলমআরা খাতুন, কৃষ্ণচন্দ্র কলেজের মল্লিকা বাগদি, পুরুলিয়া পঞ্চকোট মহাবিদ্যালয়ের এনসিসি ক্যাডেট আদিত্য বাউড়ি, পুরুলিয়ারই রামানন্দ সেন্টেনারি কলেজের ঝন্টুলাল মাহাতদের কথায়, ‘‘ক্যাম্পে ট্রেনিংয়ের এর ফাঁকে এই ভূমিকা উপভোগ করছি।’’ প্রশ্ন হল, নির্মল বীরভূমের নির্মল রাজনগর ব্লকের লাউজোড়ে শৌচাগার তৈরির
সচেতনতার আর প্রয়োজন কী? এনসিসি আধিকারিক ক্যাডেটসদের সমীক্ষা বলছে, গ্রামে এখনও অনেক পরিবার রয়েছে যাঁদের এখও শৌচাগার নেই। গ্রামের মানুষও একই কথা বলছেন। তাঁদের দাবি, পাঁচশোর বেশি পরিবারের বাস রাজনগরেরে তাঁতিপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের লাউজোড় গ্রাম। এখনও প্রায় ২০ শতাংশ পরিবারে শৌচাগার হয়নি।

বিডিও (রাজনগর) দীনেশ মিশ্র অবশ্য এ দাবি মানতে নারাজ। তিনি বলছেন, ‘‘২০১১ সালের সমীক্ষা (বেসলাইন সার্ভে) অনুযায়ী যাঁদের বাড়িতে শৌচাগার ছিল না, সেই তালিকার সব
শৌচাগার হয়েছে। তার বাইরেও শৌচাগার নির্মিত হয়েছে। তাই এত শতাংশ বাড়িতে শৌচাগার না থাকার অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য নয়। তবে আবেদন এলে নিশ্চয়ই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন