হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে পানীয় জল নেওয়া। বাঁকুড়ার মল্লেশ্বরপল্লিতে। নিজস্ব চিত্র
এক দিনেই জেলায় বৃষ্টি হয়েছে ২৭৪ মিলিমিটার। গন্ধেশ্বরী উপচে জলমগ্ন বাঁকুড়ার বেশ কিছু এলাকা। ব্যহত যান চলাচল।
শুক্রবার থেকেই জেলায় নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। জেলা আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার ৭৬.৪ মিলিমিটার আর শনিবার ২৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বাঁকুড়ায়। রবিবারও দিনভর হাল্কা, ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিপাত চলেছে। নিম্নচাপের জেরে জেলার নদনদীগুলিতে জল কিছুটা বাড়লেও এখনও কোথাও বন্যা পরিস্থিতি বা পরিবহণ ব্যবস্থা অচল হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা হয়নি বলেই জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
এ দিন সকালে গন্ধেশ্বরী নদীর জল উপচে বাঁকুড়ার সতীঘাট এলাকার কজওয়ের উপর দিয়ে বইতে থাকে। বাঁকুড়া শহরের সার্কাস ময়দান, হরিতকী বাগান, সুকান্তপল্লি, মল্লেশ্বরপল্লির মতো কিছু নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নামেন বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত ও পুরসভার অন্য কাউন্সিলরেরা। যন্ত্র দিয়ে আবর্জনায় বুজে যাওয়া সতীঘাটের কজওয়ের জল নিকাশি পাইপের মুখ পরিষ্কার করা হয়। অন্য দিকে, যে সমস্ত এলাকায় জল জমে গিয়েছিল, সেখানে পুরকর্মীদের নিয়োগ করে নালা পরিষ্কার করানোর কাজ শুরু হয়। দুপুরের মধ্যেই অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় বিভিন্ন জায়গায়।
বন্ধ: বৃষ্টি হলেও ছুটির দিন। বিষ্ণুপুরে রাধেশ্যাম মন্দিরে হাজির পর্যটক। ছবি: শুভ্র মিত্র
তবে মল্লেশ্বর এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। জমা জল ঢুকে পড়েছে এলাকার বহু বাসিন্দাদের ঘরের ভিতরে। অনেকেই বাড়িতে রান্না করতে পারেননি। মল্লেশ্বর এলাকার বধূ চায়না কর্মকার বলেন, “রাতের বৃষ্টিতে রাস্তার জমা জল ঢুকে পড়েছে রান্না ঘরে। জল থইথই করছে। হাঁড়ি চড়েনি। বাইরে থেকে খাবার এনে কোনও মতে চলেছে।’’ আর এক বধূ মঙ্গলা কর্মকার বলেন, “সামান্য বৃষ্টি হলেই এলাকার জমা জল ঘরে ঢুকে পড়ে। এ বারও তাই হয়েছে। রাস্তাতেও হাঁটু জল। জল নিকাশির জন্য দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু পুরসভা কোনও উদ্যোগই নিচ্ছে না।”
মহাপ্রসাদবাবু বলেন, “বেশির ভাগ জায়গা থেকেই জল নেমে গিয়েছে। মল্লেশ্বর এলাকার জল বের করার জন্য পুর কর্মীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।” ওই এলাকায় নালা গড়ার বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা যে দাবি তুলেছেন সেই প্রসঙ্গে পুরপ্রধান বলেন, “এলাকাটি খুব নিচু বলেই ওখানে জল জমছে। অপরিকল্পিত ভাবে কিছু ঘরবাড়ি হয়ে যাওয়ায় ওখানে নালা গড়ার কাজে বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে।” তিনি জানান, “সমস্ত কাউন্সিলরদের নিজের নিজের ওয়ার্ডের উপরে নজর রাখতে বলা হয়েছে। কোথাও জল জমলে যাতে দ্রুত বের করে দেওয়া যায় সেই চেষ্টা চলছে। জেলার নদী সংলগ্ন এলাকাগুলির উপরেও নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা।
রাতভর ভারী বর্ষণের ফলে কোতুলপুর, পাত্রসায়র ব্লকের বেশ কিছু এলাকায় জল জমেছে। কোতুলপুর-জয়রামবাটি রাস্তায় দেশড়া গ্রামের কাছে আমোদর নদের জলে সড়ক ভেসে গিয়েছে। রাস্তার উপরে জল উঠলেও যান চলাচলের কোনও অসুবিধা হয়নি। এ ছাড়া লেগো গ্রাম পঞ্চায়েতের দারাপুর থেকে সাগরমেজে যাওয়ার রাস্তাটিও ভেসে গিয়েছে। ওই এলাকার প্রচুর চাষজমি জলের তলায়। সদ্য রোয়া ধান ডুবে গিয়েছে। শনিবার রাত থেকেই শালি নদীর জল উপচে সোনামুখী-দুর্গাপুর রাস্তায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ওই রাস্তায় নফরডাঙায় নদীর উপরে নির্মীয়মাণ সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল না করলেও মানুষজন হেঁটে পার হচ্ছে।