প্রায় পাঁচ ঘণ্টার অবরোধে প্রশাসন ভবনে আটকে আড়াইশো কর্মী-আধিকারিক

আদিবাসী আন্দোলনে ‘রুদ্ধ’ সদর

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বীরভূম সফরের আগের দিন আদিবাসী সংগঠনের বিক্ষোভে উত্তাপ ছড়াল জেলা সদর সিউড়িতে। বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিলেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৩
Share:

আন্দোলন: তির-ধনুক নিয়ে শহরের রাস্তায় আদিবাসীরা। সোমবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বীরভূম সফরের আগের দিন আদিবাসী সংগঠনের বিক্ষোভে উত্তাপ ছড়াল জেলা সদর সিউড়িতে। বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিলেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। নানা দাবি নিয়ে ‘ভারত জাকাত মাঝি পরগণা মহল’-এর আন্দোলনের জেরে সোমবার বিকেল সাড়ে চারটে থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত অফিসেই আটকে থাকলেন জেলা প্রশাসনের প্রায় আড়াইশো আধিকারিক ও কর্মী। অবস্থান-বিক্ষোভে ব্যাহত হয় শহরের জনজীবন। যানজট ছড়ায় শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রশাসনের আশ্বাসে রাতে অবরোধ ওঠে। তবে, শহর স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগে।

Advertisement

আজ, মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রীর রামপুরহাটে যাওয়ার কথা। তাঁর জেলা সফরের জন্য জেলাশাসক-সহ অন্য শীর্ষ আধিকারিকেরা এ দিন রামপুরহাটে ছিলেন। রাতে সেখান থেকে ফিরে প্রশাসনিক ভবনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। বৈঠকের পরে তিনি বলেন, ‘‘আদিবাসী সংগঠনের তরফে বেশ কিছু দাবি নিয়ে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ছিল। আমি জেলা সদরে ছিলাম না। ফিরে দেখি, অফিসেই সরকারি কর্মী-আধিকারিকেরা আটকে রয়েছেন। আমি ওঁদের দাবিগুলি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছি। এর পরেই সংগঠনের তরফে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।’’

এ দিন দুপুর থেকেই সংগঠনের সদস্যেরা সিধো-কানহু মঞ্চের কাছে জমায়েত হন। সেখানে নিজেদের মধ্যে একটি বৈঠক করেন। তার পরে বিভিন্ন দাবি সংবলিত পোস্টার হাতে নিয়ে জেলাশাসকের কার্যালয় পৌঁছে সব দিক ঘিরে ফেলেন। শহরের বিভিন্ন ব্যস্ত মোড়ে অবরোধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। পুলিশে থাকলেও বলপ্রয়োগের রাস্তায় হাঁটেনি। আদিবাসী সংগঠনের নেতাদের বক্তব্য ছিল— বেশ কিছু দাবি নিয়ে তাঁরা স্মারকলিপি দিতে জেলাশাসকের কার্যালয়ে এসেছেন। যতক্ষণ না জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে তা দিতে পারছেন, ততক্ষণ সব দিক আটকে তাঁরা অবস্থান-বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। এই অবস্থানের ফলে অফিসে আটকে পড়েন কর্মীরা।

Advertisement

আদিবাসী সংগঠনের নেতারা জানান, প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে অলচিকি হরফে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা, জেলায় বন্ধ থাকা আদিবাসী ছাত্রাবাসগুলি চালু করা, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে আদিবাসী ছাত্রী ও মহিলাদের ধর্ষণে অভিযুক্তদের উপযুক্ত শাস্তি-সহ ১০ দফা দাবিতে ওই আন্দোলন। সংগঠনের নেতা নিত্যানন্দ হেমব্রম জানান, গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর অলচিকি হরফে ছাপানো বই, অলচিকিতে পড়ানোর উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি, আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ-সহ একাধিক দাবিতে পথ অবরোধ কর্মসূচি করেছিল আদিবাসী সংগঠন। তা পালিত হয় মহম্মদবাজারেরও। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। সংগঠনের নেতাদের বক্তব্য, এ রাজ্যে বাংলার পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা সাঁওতালি। গত বছর ৫ সেপ্টেম্বর সাঁওতালি এডুকেশন বোর্ড গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল রাজ্য সরকারকে। তা মানা হয়নি। ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম ও বর্ধমান-সহ বিভিন্ন জেলা থেকে ১২০০-র বেশি আদিবাসী ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছে। কিন্তু সাঁওতালিতে পাঠ নেওয়ার উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে উঠছে না। আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার দাবিতে আন্দোলন চলবে বলেও জানিয়েছেন নিত্যানন্দবাবুরা।

এমনিতেই গত বছরের পঞ্চায়েত ভোটের ফলে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক ‘উদ্বেগে’ রেখেছে শাসকদলকে। মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের আগের দিন এমন আদিবাসী বিক্ষোভে অস্বস্তি ছড়িয়েছে দলে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সফরের জন্যে আমি রামপুরহাটে ছিলাম। জেলাশাসকও ওঁদের জানিয়েছিলেন তিনি ব্যস্ত। তার পরেও আদিবাসীরা কেন এমন করলেন বুঝতে পারছি না। এই আন্দোলনের পিছনে কারও ইন্ধন থাকতে পারে। আমরা খোঁজ নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন