পড়ার রেশনে বরযাত্রীর ভোজ

বাবা-মা মারা গিয়েছেন ছোটবেলায়। মামারাই মানুষ করেছেন হীরাকে। কিন্তু বিয়ের ভোজের খরচ আসবে কোথা থেকে তা ভেবে কূল পাচ্ছিলেন না।

Advertisement

সমীর দত্ত

মানবাজার শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৭ ০১:২১
Share:

বাবা-মা মারা গিয়েছেন ছোটবেলায়। মামারাই মানুষ করেছেন হীরাকে। কিন্তু বিয়ের ভোজের খরচ আসবে কোথা থেকে তা ভেবে কূল পাচ্ছিলেন না।

Advertisement

তাতে কী! পাশের বাড়ির কাকু, পাড়ার জেঠুরাও হীরার আপনজন। পাড়ার মেয়ের বিয়েতে সবাই নিজেদের এক সপ্তাহের রেশন আগাম উপহার দিয়ে দিলেন। তা দিয়েই হল বিয়ের আয়োজন। রবিবার রাতে মানবাজার থানার মানপুর গ্রামের হীরা সাত পাকে বাঁধা পড়েছে পুঞ্চা থানার মেনে়ডি গ্রামের পাত্রের সঙ্গে।

হীরা বাউরির বাড়ি ছিল মানবাজার থানার ভেঙ্গারডি গ্রামে। ছোটবেলায় বাবা-মা মারা যাওয়ার পরে দুই মামা, লক্ষ্মণ বাউরি ও ধনঞ্জয় বাউরি তাকে নিজেদের কাছে নিয়ে আসেন। পেশায় তাঁরা ক্ষুদ্র চাষি। লক্ষ্মণবাবু ও ধনঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘অন্য আয়োজন কোনও রকমে করা গেলেও ভোজের খরচ জোগাড় করতে পারছিলাম না।’’ ব্যাপারটা জানতে পেরে এ গিয়ে আসেন গ্রামেরই কিছু বাসিন্দা। প্রায় একশো জন পড়শি এক সপ্তাহের রেশন তুলে লক্ষ্মণবাবুদের দেন। হীরার দুই মামা বলেন, ‘‘ওঁরা না থাকলে ব়ড্ড মুশকিল হতো।’’

Advertisement

মানপুর গ্রামের স্বপন বাউরি, বৃহস্পতি বাউরিরা বলেন, ‘‘হীরা তো আমাদের গ্রামেরই মেয়ে। চোখের সামনে বড় হয়েছে। ওর বিয়েতে আয়োজনে ত্রুটি হলে সেটা আমাদের গ্রামেরই অসম্মান। আমরা কি তা হতে দিতে পারি?’’ মৃত্যুঞ্জয় বাউরি, কার্তিক বাউরিরা জানান, বিয়ের ভোজের খরচে টানাটানি হচ্ছে শুনে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। গ্রামের বাসিন্দাদের থেকে রেশন কার্ড সংগ্রহ করা হয়। তার কিছুটা দিয়ে হয় রান্না। কিছুটা বিক্রি করে কেনা হয় রান্নার অন্য জিনিসপত্র।

শনিবার রাতে বরযাত্রীদের সঙ্গে বসে পাত পেড়ে গ্রামের সবাই খেয়েছেন ভাত, ডাল, কুমড়োর তরকারি, মুরগির মাংস, চাটনি আর বোঁদে। সোমবার গ্রাম ছাড়ার সময় ভেজা চোখে নববধূ হীরাও বলেন, ‘‘আমার জন্য গ্রামের কাকু-জেঠুরা যা করলেন কোনও দিন ভুলব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন