নয়া সোয়েটারে উত্তাপ ছড়াল আদিবাসী গ্রামে

মায়ের ফিনফিনে শাড়ির আঁচলের আড়ালে কাঁপছিল সেখানকার কচিকাঁচারা। কেউ কেউ চাদর করেছিল পাতলা গামছা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:০৮
Share:

রঙিন: কাশীপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

ঠাণ্ডায় কাবু আদিবাসী জনপদে উষ্ণতা ছড়াল ‘খোলা হাওয়া’!

Advertisement

মায়ের ফিনফিনে শাড়ির আঁচলের আড়ালে কাঁপছিল সেখানকার কচিকাঁচারা। কেউ কেউ চাদর করেছিল পাতলা গামছা। ময়ূরেশ্বরের কাশীপুরের আদিবাসী পাড়ায় দুঃস্থ, অসহায় সেই আট থেকে আশির হাতে রঙচঙে শীত-পোশাক, কম্বল তুলে দিলেন হোয়াটস-অ্যাপের ‘খোলা হাওয়া’র সদস্যরা। একগাল হাসি ফিরল ছোট্ট ওই বসতির সবার মুখে। ঠাণ্ডার দাপট কিছুটা কমল তাতেও।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আদিবাসী ওই জনপদে থাকে ১৫টি পরিবার। শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সংখ্যা প্রায় ৩০। সব মিলিয়ে সেই গ্রামের জনসংখ্যা ৮০। অধিকাংশই দিনমজুর। অনটন তাঁদের নিত্যসঙ্গী।

Advertisement

বড়রা তো বটেই, সেই জনপদে ছোটরাও গায়ে গামছা দিয়ে শীত রোখে— সে কথা শুনেছিলেন খোলা হাওয়ার সদস্যরা। এর পরই সেখানে শীতবস্ত্র পৌঁছনোর সিদ্ধান্ত নেন ওই দলের সোমা দে, রানা বৈদ্য, উজ্বল দে-রা। তাঁরা বলেন— ‘‘ওই আদিবাসী পাড়ায় কত জন শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, দুঃস্থ মানুষ রয়েছেন তার হিসেব আগে করে নেওয়া হয়েছিল। সেই মতো শীত-পোশাক জোগাড়ের কাজ শুরু হয়।’’

ওই হোয়াটস-অ্যাপ গ্রুপের সদস্যরা একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্টে টাকা জমা করতে শুরু করেন। শীতবস্ত্র কেনার কথা জানানো হয় ওই দলেরই সদস্য হাওড়ার বাসিন্দা রাজকুমার সাহা ও মুরারীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সোমবার শীত-পোশাক নিয়ে সকলে যান কাশীপুরের আদিবাসী গ্রামে। রাজকুমারবাবু জানান, এমন উদ্যোগের কথা জেনে কোনও বিক্রেতাই লাভ রাখেননি। কেনা দামেই পোশাক দিয়েছেন।

চারপাশে ধূ ধূ সবুজ মাঠ। তারই মাঝখানে ওই জনপদ। শীতের সকালে কনকনে হাওয়া। গামছায় তা মানে না। ঠকঠকিয়ে কাঁপছিল কচিকাঁচারা। তখনই সেখানে পৌঁছয় ‘খোলা হাওয়া’। বাচ্চাদের পরিয়ে দেওয়া হয় সোয়েটার। বিলি হয় চকোলেটও। ছোটদের গায়ে রঙবেরঙের শীত-পোশাকে ‘উত্তাপ’ ছড়ায় গ্রামে। খুশিতে খিলখিলিয়ে ওঠে ৪ বছরের অঞ্জলি হাঁসদা, বছর পাঁচেকের সনমনি হাঁসদা। ফিসফিসিয়ে তারা বলল, ‘‘কী সুন্দর গো। এক দম ঠাণ্ডা লাগছে না আর!’’

একই কথা শোনা গেল সীতারাম মাড্ডি, রতন টুডু, বুদিন মুর্মূ, শিবদাসী টুডুর মতো প্রবীণদের মুখেও। হাতে নতুন কম্বল নিয়ে বুদিন বলেন, ‘‘প্রতি বার শীতে খুব কষ্ট পাই। এ বার রেহাই পেলাম।’’ গ্রামের বধূ লতিকা হেমব্রম, তুলসী হেমব্রম, ফুলি টুডুরাও এতে খুশি। তাঁরা জানান, আগে কেউ এ ভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শীত-পোশাক দেননি। পাড়ার প্রত্যেক পরিবার ২-৩টি করে পোশাক পেয়েছে।

‘খোলা হাওয়া’র সদস্য অম্বিকানন্দন মণ্ডল, অমিতাভ ভদ্র জানান, দরিদ্র আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে তাঁরাও খুশি। শুধু শীত-পোশাক নয়, ওই গ্রামে সহায়-সম্বলহীন শয্যাশায়ী এক প্রতিবন্ধীর দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাঁরা। দীর্ঘদিন ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত বছর পঁয়ষট্টির যুগল টুডু থাকেন কাশীপুরের ভাঙাচোরা একটি বাড়িতে। অভিযোগ, কোনও সরকারি সাহায্য তিনি পাননি। এ দিন তাঁকে কম্বল, সোয়াটার দেওয়ার পাশাপাশি কিছু টাকাও দেওয়া হয়। ওই দলের প্রসেনজিৎ মুখোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, ওই বৃদ্ধকে সরকারি সাহায্য পাইয়ে দিতে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা। তার আগে পর্যন্ত তাঁদের তরফে ওই বৃদ্ধকে নিয়মিত যথাসাধ্য সাহায্য করে যাওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন