পুরুলিয়ায় ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি, আক্রান্ত আরও এগারো জন

এ দিন এই লেনের পাশে আনন্দ সরণি এলাকা ঘুরে দেখেন তাঁরা। দেখা যায়, মহালক্ষ্মী বাগান লেনের মতোই সেখানেও বেশ কিছু বাসিন্দা জ্বরে ভুগছেন। এমনকি কোন কোন বাড়িতে একাধিক জ্বরে আক্রান্ত রোগীরও হদিস মিলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৮ ০২:১৬
Share:

পরীক্ষা: বাড়ি বাড়ি রক্তের নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র

পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পুরুলিয়া শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। শুক্রবার পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ছয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আরও ১১ জনের রক্তে খুঁজে পাওয়া গেল ডেঙ্গির জীবাণু। তাঁদের মধ্যে এক জন পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি। দু’জনকে বাইরে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকিদের বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা চলছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকেই সেই দেশবন্ধু রোড এলাকার বাসিন্দা। সব মিলিয়ে এ নিয়ে পুরুলিয়া শহরে এক সপ্তাহের কম সময়েই একই এলাকা থেকে ১৭ জনের ডেঙ্গি হওয়ার উদ্বেগ ছড়িয়েছে।

Advertisement

সব মিলিয়ে ওই এলাকার পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক, তা স্বীকার করেছে স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভা। শহরের ১ এবং ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থল এই এলাকাকে ইতিমধ্যে ‘হাইঅ্যালার্ট জোন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য দফতর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কী করা যেতে পারে, তা ঠিক করতে শনিবার জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভার মধ্যে একটি বৈঠকও হয়েছে। জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘পুরুলিয়া শহরের একটি এলাকাতেই আরও ১১ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের হদিস খুবই চিন্তার ব্যাপার। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ তবে পুরবাসীর দাবি, শুধু ওই এলাকাই নয়, পরিস্থিতির বিচারে পুরো শহরজুড়েই ডেঙ্গি রুখতে সমান সক্রিয়তা প্রয়োজন। তা না হলে সেখানেও ডেঙ্গি ছড়াবে।

এ দিন ওই এলাকায় ফের যান জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) গুরুদাস পাত্র, মহামারী বিশেষজ্ঞ সতীনাথ ভুঁইয়া, পতঙ্গ বিশারদ সঙ্কর্ষণ রায় ও পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরাও। বৃহস্পতিবার এই এলাকার মহালক্ষ্মী বাগান লেন এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িতে জ্বরে আক্রান্তদের হদিস পান তাঁরা। পরের দিন দেখা যায়, তাঁদের মধ্যে তিন জনেরই ডেঙ্গি হয়েছে।

Advertisement

এ দিন এই লেনের পাশে আনন্দ সরণি এলাকা ঘুরে দেখেন তাঁরা। দেখা যায়, মহালক্ষ্মী বাগান লেনের মতোই সেখানেও বেশ কিছু বাসিন্দা জ্বরে ভুগছেন। এমনকি কোন কোন বাড়িতে একাধিক জ্বরে আক্রান্ত রোগীরও হদিস মিলেছে।

অলকা বসু নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমার বৌমা জ্বরে ভুগছে। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।’’ কৃষ্ণা কুণ্ডু নামে এক গৃহবধূ জানান, তাঁর স্বামী ও মেয়ের তিন-চার দিন ধরে জ্বর। সমীর মহাপাত্র নামে এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমার মা, স্ত্রী ও ছেলে জ্বরে ভুগছে।’’ পাশের মহালক্ষ্মী বাগান লেনের বাসিন্দা তাপস চক্রবর্তী বলেন ‘‘আমার বাড়ি থেকে দু’জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছিল। এখনও রিপোর্ট হাতে পাইনি। তবে শুনেছি ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।’’

স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সামনে পেয়ে এ ভাবে জ্বরে আক্রান্তদের পরিজনেরা এগিয়ে আসেন। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা এ দিন থেকে প্রতিটি বাড়ি থেকেই জ্বরে আক্রান্তদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন।

কিন্তু, সব থেকে উদ্বেগের ব্যাপার এত প্রচার সত্ত্বেও এখনও লোকে জল জমিয়ে রাখছেন। এ দিনও আনন্দ সরণিতে বিভিন্ন বাড়িতে অব্যবহৃত পাত্রে জমা জলে এডিসের লার্ভা কিলবিল করতে দেখে তাজ্জব হয়ে যান স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা। পতঙ্গ বিশারদ বলেন, ‘‘এ দিনও এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে জমে থাকা জলে এডিস মশার লার্ভা মিলেছে।’’ ওই এলাকায় ডেঙ্গি ছড়িয়েছে শোনার পরেও লোকে এখনও বাড়িতে জল জমিয়ে রেখেছেন দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘বাসিন্দারা এটুকু সচেতন না হলে পুরসভা বা স্বাস্থ্য দফতর কী ভাবে ডেঙ্গিকে ঠেকাবে?’’

ওই এলাকায় একটি জলা নিয়ে বাসিন্দারা এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের কাছে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, এলাকার একটি শপিং মলের এবং আশপাশের জল জমা হচ্ছে এই নিচু জমিতে। অথচ পুরসভার কোনও হেলদোল নেই বলে তাঁদের ক্ষোভ। স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওই জমি থেকে জমা জল বের করতে হবে। স্প্রে করেও এখানে সে ভাবে ফল মিলবে না।’’

এলাকার কাউন্সিলর মিতা চৌধুরীও বলেন, ‘‘এই জলার সমস্যার কথা আমি পুরসভায় জানিয়েছি। কিছুই হয়নি।’’ পুরপ্রধান সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘ওই এলাকায় জমা জল পরিষ্কারের বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। নিচু জমি থেকেও কী ভাবে জমা জল সরানো যায়, সেই বিষয়টি আমরা দেখছি।’’

এলাকা সরজমিন পরিদর্শন করে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা পুরপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক দফা প্রস্তাব দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। গুরুদাসবাবু বলেন, ‘‘আরও ১১ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়ায় ওই এলাকাকে হাইঅ্যালার্ট জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পুরসভার সঙ্গে বৈঠকে ঠিক হয়েছে এই এলাকার প্রতিটি বাড়িতে এখন প্রতিদিন জ্বরের সমীক্ষা চালানো হবে। পাশাপাশি জ্বরে আক্রান্তদের রক্তের নমুনা সংগ্রহও চলবে। রবিবারও কাজ বন্ধ হবে না। সেই সঙ্গে শহরে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা প্রচারও চালানো হবে।’’

পুরপ্রধান সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘পুরসভা সতর্ক রয়েছে। ইতিমধ্যেই শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে ফগিং মেশিন থেকে ধোঁয়া ছড়ানো এবং মশানাশক ওষুধ ছড়ানো চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন