Sonamukhi

ভাসানে বাজি বন্ধে সায় শহরের

সোনামুখীর কালী বিসর্জন সমন্বয় কমিটির সভাপতি তথা পুরসভার প্রশাসক সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কালীপুজোয় সংযত থেকে সোনামুখীবাসী সুনাগরিকের পরিচয় দেবেন। সোনামুখীর মানুষের প্রতি আমার সে ভরসা রয়েছে।’’

Advertisement

শুভ্র মিত্র

সোনামুখী শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৫৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাঁকুড়ার সোনামুখীর কালীপুজোর ভাসান মানেই আলো আর আতশবাজি প্রদর্শনী। এটাই এই প্রাচীন শহরের অন্যতম ঐতিহ্য হয়ে উঠেছিল। তবে এ বার প্রতিমা ভাসানে শোভাযাত্রা থাকছে না। বন্ধ থাকবে সব রকম বাজি পোড়ানোও। তাতে সোনামুখীর বহু বাসিন্দা দুঃখ পেলেও অনেকে করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে প্রশাসন ও হাইকোর্টের এই নির্দেশকে স্বাগত জানাচ্ছেন। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) প্রিয়ব্রত বক্সী বলেন, ‘‘নিয়ম পালনের জন্য কঠোর ভাবে পুলিশের নজরদারি থাকবে। সব রকম বাজি বিক্রি ও ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আইন অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Advertisement

প্রতি বছর ভাসানের সময় শহরের চৌমাথায় পুজো কমিটিগুলি একে একে এসে আতশবাজির রোশনাই দেখায়। কদম ঝাড়, রাধাচক্র, তুবড়ি-সহ প্রচুর বাজি পোড়ানো হয়। ইদানীং অনেক কমেছে আসমান গোলার বিকট শব্দ। বাজির জন্য কমিটিগুলি লক্ষাধিক টাকা বাজেট রাখত। প্রবীণেরা জানান, বিয়েবাড়ির ভিয়েন বসানোর মতোই বাজির কারিগরেরা উপকরণের হিসেব মিলিয়ে চটকদার বাজি তৈরি করতেন। গোপন থাকত তাঁদের আস্তানা। আরও গোপন রাখা হত বাজির রাসায়নিক সূত্র।

ইদানীং শব্দবাজির জায়গা নিয়েছে আতশবাজি। পাশের রানিগঞ্জ, আসানসোল থেকে আতশবাজি আসা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া, ইন্দাস আর পাত্রসায়রের কিছু কারিগরের হাতে তৈরি হয় কদমঝাড় আর রাধাচক্র।

Advertisement

পুজোর আয়োজকেরা এ বার সব রকম বাজি বন্ধ রাখার পক্ষেই মত দিচ্ছেন। সোনামুখী শহরের চামুণ্ডা কালী পুজো কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা ধর্মেন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অতিমারির সময়ে সোনামুখী শহরের মানুষ সুস্থ থাকুক, সংক্রমণ যাতে না বাড়ে, এটাই আমরা চাই। সে জন্য প্রশাসনের নির্দেশ আমরা মেনে চলব। এ বার অসময়ে আনন্দ বন্ধ থাকুক। বরং সামনের বছরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবাইকে নিয়ে ফের আলোর উৎসবে মাতব।’’ শহরের অন্যতম বড়পুজো রক্ষাকালী পুজো কমিটির তরফে সূর্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আতশবাজি প্রদর্শনী দেখতে শুধু এই শহর নয়, আশপাশের বহু গ্রামের মানুষ অপেক্ষা করে থাকেন। তবে এ বার আদালতের নির্দেশ মেনে সব আয়োজন করা হচ্ছে।’’

সোনামুখী বি জে হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন চোংরে বলেন, ‘‘করোনা রোগীদের সুস্থ থাকার জন্য এবং সংক্রমণ রুখতে বাজি পোড়ানোর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তকে স্বাগত। সোনামুখীর শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষজন সচেতন হবেন। বিরত থাকবেন বাজি পোড়ানো থেকে।’’

সোনামুখী ব্লকেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম নয়। সোনামুখীর ব্লক মেডিক্যাল অফিসার সব্যসাচী কোনার জানান, রবিবার পর্যন্ত সোনামুখী ব্লকে সংক্রমিত হয়েছেন ৪৩৫ জন। তার মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৭৮ জন। বর্তমানে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৫৭ জন। তাঁর কথায়, ‘‘বর্তমানে পরিস্থিতি স্থিতিশীল। তবে সবার সাবধানে থাকা প্রয়োজন। যাঁরা কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন, বা যাঁরা সবে সুস্থ হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বাজির ধোঁয়া খুবই ক্ষতিকারক। এতে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বাড়ে। সে জন্য এ বার সব রকম বাজি বন্ধ করা দরকার।’’

সোনামুখীর কালী বিসর্জন সমন্বয় কমিটির সভাপতি তথা পুরসভার প্রশাসক সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কালীপুজোয় সংযত থেকে সোনামুখীবাসী সুনাগরিকের পরিচয় দেবেন। সোনামুখীর মানুষের প্রতি আমার সে ভরসা রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন