শৌচাগারে দোর নেই, দুর্ভোগ স্কুলছাত্রীদের

প্রথম স্কুলটি রয়েছে লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে। দ্বিতীয়টি দুবরাজপুর পুরসভা এলাকায়। কিন্তু দু’টি স্কুলের সমস্যা এক। দু’জায়গাতেই শিক্ষিকা, ছাত্রীদের জন্য নেই কোনও শৌচাগার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৫৭
Share:

দুর্দশা: দরজা নেই স্কুলের শৌচাগারে। দুর্ভোগে শিক্ষিকা, ছাত্রীরা। দুবরাজপুরে বেলবুনী জাহ্নবী প্রাথমিক স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

দুবরাজপুরের বেলবুনী জাহ্নবী প্রাথমিক স্কুল আর দুবরাজপুর গার্লস প্রাইমারি স্কুল।

Advertisement

প্রথম স্কুলটি রয়েছে লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে। দ্বিতীয়টি দুবরাজপুর পুরসভা এলাকায়। কিন্তু দু’টি স্কুলের সমস্যা এক। দু’জায়গাতেই শিক্ষিকা, ছাত্রীদের জন্য নেই কোনও শৌচাগার।

এক দিকে কয়েক দিনের মধ্যেই ‘নির্মল’ স্বীকৃতি পেতে চলেছে বীরভূম। অন্য দিকে সেই জেলাতেই দেখা মিলছে এমন ছবির।

Advertisement

ওই সব স্কুলের এমন দুর্দশার কথা জেনে কী বলছেন বীরভূমের জেলাশাসক? পি মোহন গাঁধীর কথায়, ‘‘স্কুলের উন্নয়নে হরেক রকম বরাদ্দ থাকে। তা দিয়েই শৌচাগার তৈরি করা যায়। জেলার কয়েকটি স্কুলে পর্যাপ্ত সংখ্যক শৌচাগার নেই এটা ঠিক। কিন্তু কোনও স্কুলে ছাত্রীদের জন্য একটিও শৌচাগার না থাকা বাঞ্চনীয় নয়। এ বিষয়ে খোঁজ নেব।’’ জেলাশাসক জানিয়েছেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শক এবং সংসদের চেয়ারম্যানের কাছে শৌচাগার না থাকা স্কুলের তালিকা চাওয়া হবে। তার পরই বিভিন্ন এলাকার বিডিওদের উপযুক্ত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেবেন তিনি।

জাহ্নবী প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়া ১০৭ জন। ছাত্রীসংখ্যা ৫৭। কিন্তু শৌচকর্ম করতে এখনও তাদের ভরসা স্কুল-লাগোয়া ঝোপ। তিন বছর ধরে এমনই চলছে লক্ষ্মীনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের ওই স্কুলে। এক সময় সেখানে তিনটি শৌচাগার ছিল। কিন্তু এখন একটিরও দরজা নেই। তবে দরজা থাকলেও সমস্যা কম হওয়ার কারণ নেই। পড়ুয়াদের অভিযোগ, ওই শৌচাগারেও খুঁত রয়েছে। তা-ই তা ব্যবহার করা যায় না। ১১ মাস আগে ওই স্কুলে এক শিক্ষিকা যোগ দেওয়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

দুবরাজপুর পুরসভার অধীনে রয়েছে গার্লস প্রাইমারি স্কুল। শহরের ব্যস্ত এলাকায় ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ওই স্কুলে ১৬১ জন পড়ুয়া, চার জন শিক্ষিকা। কিন্তু শৌচাগার নেই একটিও!

জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর— বীরভূমে প্রাথমিক, আপার প্রাইমারি, মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক মিলিয়ে প্রায় শতাধিক স্কুলে শৌচাগার নিয়ে দুর্ভোগ রয়েছে। শৌচাগার না থাকা, থাকলেও অব্যবহারযোগ্য, অপর্যাপ্ত এমনকী ছাত্রীদের জন্য আলাদা শৌচাগার না থাকার সমস্যা রয়েছে। কিছু দিন আগে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি দিয়েছিল।

লক্ষ্মীনারায়ণপুরের জাহ্নবী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিচার ইন-চার্জ দীপক দত্ত বলছেন, ২০১৪ সালে স্কুলে যোগ দিয়েছি। তখন থেকেই একই অবস্থা। বিশেষত ছাত্রীদের খুবই অসুবিধা হয়। সমস্যা হয় পুরুষ শিক্ষকদেরও। কিন্তু সম্প্রতি এক শিক্ষিকা স্কুলে যোগ দেওয়ার পর পরিস্থিতি জটিল হয়েছে।

তাঁর কথায়, ‘‘দুবরাজপুরের বিডিও, স্কুল পরিদর্শক থেকে সর্বশিক্ষা মিশনে আবেদন করেছি। এখনও কোনও সুরাহা হয়নি।’’ শিক্ষিকা ইশানী বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘শৌচাগারের অভাবে যে কী অসুবিধা হচ্ছে তা বলে বোঝানো যাবে না।’’

দুবরাজপুর গার্লস প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দীপালি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্কুলে কত ছাত্রী। চার জন শিক্ষিকা। একটাও শৌচাগার নেই। কয়েক মাস আগেও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীদের প্রকাশ্যে শৌচকর্ম করতে হয়েছে।’’ তিনি জানান, সম্প্রতি স্কুলের সামনে একটি জায়গা ঘিরে অস্থায়ী শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে জল ব্যবহার করা যায় না। অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।

পড়ুয়াদের কয়েক জন অভিভাবক জানান, প্রাথমিক স্কুলের পাশেই তৈরি হয়েছে দুবরাজপুর গার্লস উচ্চমাধ্যমিক স্কুল। কিন্তু ওই স্কুলের শৌচাগার ব্যবহারের অনুমতি পায় না প্রাথমিকের ছাত্রীরা। দীপালিদেবী জানান, তিনি সমস্যা মেটাতে সংশ্লিষ্ট দফতরে আর্জি জানিয়েছেন।

জেলা প্রাথনিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষ কয়েকটি স্কুলে শৌচাগারের সমস্যা রয়েছে বলে মেনেছেন। একইসঙ্গে তিনি জানান, সব সময় সমস্যার কথা তাঁদের কাছে পৌঁছয় না। জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রেজাউল হক বলেন, ‘‘অনেক স্কুলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শৌচাগার নেই। নতুন তৈরি কয়েকটি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলেও শৌচাগারের সমস্যা রয়েছে। তবে কোনও স্কুলে একটিও শৌচাগার নেই এমন জানতাম না। খোঁজ নিয়ে দেখবো।’’ রাজাবাবু জানান, শৌচাগারের সমস্যা রয়েছে এমন স্কুলের তালিকা চাওয়া হলে তা দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন