নামেই সুপার, খাওয়ার জলই নেই রামপুরহাটে

ঝাঁ চকচকে দেওয়াল। মার্বেল বসানো মেঝে। স্টিলের তৈরি বসার জায়গা। সেখানে বসেছিলেন মাড়গ্রাম থানার কানাইপুর গ্রামের মাঝবয়সী মহিলা নার্গিসা বিবি। দু’দিনের জ্বরে কাবু হয়ে থম থমে মুখ তাঁর।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ০০:৪৩
Share:

এই ঝাঁ চকচকে ভবনেই নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা। —নিজস্ব চিত্র

ঝাঁ চকচকে দেওয়াল। মার্বেল বসানো মেঝে। স্টিলের তৈরি বসার জায়গা। সেখানে বসেছিলেন মাড়গ্রাম থানার কানাইপুর গ্রামের মাঝবয়সী মহিলা নার্গিসা বিবি। দু’দিনের জ্বরে কাবু হয়ে থম থমে মুখ তাঁর।

Advertisement

রামপুরহাট হাসপাতালের নতুন বিভাগ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বর্হিবিভাগে জেনারেল মেডিসিন বিভাগে দেখাবার জন্য তিনি সকাল ১০টা থেকে বসে আছেন। ঘণ্টা খানেক ধরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে একটু জল মুখে দিয়ে জ্বর কমানোর ট্যবলেট খাওয়ার জন্য হাসপাতাল চত্ত্বরে পানীয় জলের সন্ধান করে না পেয়ে অবশেষে মেঝের এক কোণেই বসার জায়গায় বসে পড়েছেন তিনি। জানালেন “একটা ট্যাবলেট খাওয়ার জন্য জল পাচ্ছি না!”

সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে জল নেই! ঠিক বিশ্বাস হয় না। নলহাটি থানার সরধা গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বললেন, ‘‘এত সুন্দর ভবন, এত সুন্দর ব্যবস্থা অথচ হাসপাতাল চত্বরে কোথাও কোনও পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই।’’

Advertisement

শুধু মেডিসিন বিভাগ নয়, অর্থোপেডিক বিভাগ, পেডিয়াট্রিক বিভাগ, স্ত্রী রোগ বিভাগ, ফার্মাসি বিভাগ, ইঞ্জেকশন বিভাগ, হোমিওপ্যাথি বিভাগ, আর্য়ুবেদিক বিভাগ, ফিজিওথেরাপি বিভাগ— রামপুরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের কোনও বিভাগেই পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই! চূড়ান্ত অসুবিধার মধ্যে ভুগতে হচ্ছে হাসপাতালে আসা রোগীদের। একই অসুবিধা হাসপাতাল কর্মী থেকে চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতালে কর্মরত অন্যান্য কর্মীদের। প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রামপুরহাট সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের পানীয় জলের এই অবস্থা নতুন নয়।

চালু হওয়ার পর থেকে রামপুরহাট জেলা হাসপাতালের কেবলমাত্র দাঁত এবং নাক কান গলা বিভাগ ছাড়া সমস্ত বিভাগের বর্হিবিভাগে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই থেকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের চার তলা ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ কাজ শুরুর ১৫ মাসের মধ্যে এই ভবন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তরিত হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু একই ভবনে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত মেডিক্যাল কলেজের ভবন নিয়ে জটিলতায় ১৫ মাসের মধ্যে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হস্তান্তর করতে পারেনি নির্মাণকারী সংস্থা। ইতিমধ্যে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের নীচের তলায় রামপুরহাট জেলা হাসপাতালের বর্হিবিভাগ চালু হয় চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী বর্হিবিভাগে চিকিৎসার জন্য আসেন। অথচ রোগী বা রোগীর আত্মীয় পরিজনদের জন্য এখনও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়নি।

কী বলছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ?

রামপুরহাট হাসপাতাল সুপার সুবোধকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পানীয় জলের জন্য প্রতিটি ফ্লোরে পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করার কথা হাসপাতালের নির্মাণকারী সংস্থা। তাঁদের কাজ শেষ হয়নি। কাজ শেষ হওয়ার আগে নিশ্চয় কথা অনুযায়ী পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দেবে তাঁরা।’’ একই বক্তব্য রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ব্রজেশ্বর মজুমদারের। যত দিন না হচ্ছে পানীয় জলের জন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা কি করা যায় খোঁজ নিয়ে দেখছি। এ দিকে, নির্মাণকারী সংস্থার পক্ষে প্রজেক্ট ম্যানেজার সুদীপ্ত কুমার ঘোষ অফিসের কাজে পুণেতে থাকার জন্য সংস্থায় কর্মরত অন্যান্য কর্মীরা কেউ কোনও কিছু জানাতে চায়নি। তবে তাঁরা জানান, পরিস্রুত যন্ত্র বসিয়ে পানীয় জলের ব্যবস্থা তাঁরা করে দেবেন।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, যত দিন ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে পরিস্রুত পানীয় জলের যন্ত্র বসানো না হচ্ছে তত দিন পর্যন্ত বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল চত্বরে পানীয় জলের জন্য একটি বাড়তি পাইপ লাইনের জন্য বলা হয়েছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরী বিভাগকে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই পাইপ লাইন বসেনি। জনস্বাস্থ্য কারিগরী বিভাগের বাস্তুকার (সিভিল) প্রশান্ত সরকার বলেন, ‘‘সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে জলের সংযোগ দেওয়ার কোনও এক্তিয়ার জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন