এই মডেলেই পঞ্চায়েত ভোট: কেষ্ট

ফাঁকা মাঠে টিএমসিপি-র জয়

ভোট-ই হল না! তার আগেই বীরভূমের কলেজ-ভোটে নিরঙ্কুশ আধিপত্য পেল টিএমসিপি। ফল জেনে জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা পঞ্চায়েত ভোটের ট্রেলার। এই মডেলেই পঞ্চায়েত ভোট হবে। কোনও সন্ত্রাস হবে না। সবাই এখন আমাদের লোক।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩০
Share:

পাহারা। রামপুরহাট কলেজের সামনে বহিরাগতদের ভিড়ে মাড়গ্রামের দুই পরিচিত দাপুটে তৃণমূল কর্মী (চিহ্নিত অংশ)। সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজ দখল করে টিএমসিপি-র উল্লাস। বৃহস্পতিবারের নিজস্ব চিত্র।

ভোট-ই হল না! তার আগেই বীরভূমের কলেজ-ভোটে নিরঙ্কুশ আধিপত্য পেল টিএমসিপি। ফল জেনে জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা পঞ্চায়েত ভোটের ট্রেলার। এই মডেলেই পঞ্চায়েত ভোট হবে। কোনও সন্ত্রাস হবে না। সবাই এখন আমাদের লোক।’’

Advertisement

বৃহস্পতিবার জেলার কলেজগুলিতে মনোনয়ন তোলার দিন ছিল। দিনের শেষে দেখা গিয়েছে, কোনও কলেজ থেকেই বিরোধী ছাত্র সংসদের কেউ মনোনয়ন তোলেনি। যার অর্থ, ভোটের আগে জেলার ১৬টি কলেজের ছাত্র সংসদের সবক’টিতেই দখল নিশ্চিত করল টিএমসিপি। তা দেখে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম বলছেন, ‘‘বিরোধী-শূন্য করাটাই তো ওদের কাছে গণতন্ত্রের নতুন মডেল। এর ফল ভুগতেই হবে। নিজেদের কবর নিজেরাই খুঁড়ছে ওরা।’’

এ দিন রামপুরহাট কলেজের সামনে গিয়ে দেখা গেল, গেটের সামনে জড়ো হয়ে রয়েছেন অনেকে। এসএফআইয়ের অভিযোগ, এঁদের কেউ তৃণমূলের ব্লক, শহর তৃণমূলের নেতা, কেউ কাউন্সিলরের স্বামী। কেউবা আবার পঞ্চায়েত প্রধান বা কাছাকাছি এক পঞ্চায়েতের সদস্য। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই জমায়েতে এলাকার বালি মাফিয়া থেকে ঠিকাদার, সমাজবিরোধীদেরও দেখা গিয়েছে। কলেজ ভোটের সময়ে আপনারা কেন? কেউ জানালেন, মনোনয়ন-পর্ব যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে মেটে তা দেখতে এসেছেন। কেউ বললেন, ‘‘কেউ এসে যাতে অশান্তি করতে না পারে সেটা দেখতে এসেছি।’’

Advertisement

আর পুলিশ? রামপুরহাট কলেজের ১০০ মিটারের মধ্যে দেখা গেল পুলিশও। এসএফআই-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, পুলিশ থাকলেও একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিল। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক শতদল চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘রামপুরহাট ও সিউড়ি বিদ্যাসাগরের কলেজ—সংগঠনের তরফে মাত্র দু’টি কলেজে মনোনয়ন তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। টিএমসিপি-র নেতৃত্বে কলেজের বাইরে বহিরাগতেরা জমায়েত করে সেটাও তুলতে দেয়নি। প্রশাসনকে আগেভাগে জানিয়েও কাজ হয়নি।’’ এ ব্যাপারে রামপুরহাটের আইসি স্বপনকুমার ভৌমিককে ফোন করা হলে তিনি জবাব দেননি। বহিরাগতদের এনে মনোনয়ন আটকানোর অভিযোগ মানতে চাননি টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি সুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘পায়ের তলার মাটি হারিয়েই অযৌক্তিক কথা বলছে বিরোধীরা।’’ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তপন ভট্টাচার্যও কলেজে বহিরাগতদের উপস্থিতির অভিযোগ মানতে চাননি।

বীরভূমে কলেজ রয়েছে ১৭টি। তার মধ্যে সাম্প্রতিক গোলমালের জন্যে মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা লপসা হেমব্রম কলেজ বাদে এ বার ছাত্র সংসদের ভোট হওয়ার কথা ছিল ১৬টিতে। এর মধ্যে রামপুরহাট ও সিউড়ির বিদ্যাসাগর কলেজে এসএফআই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা জানিয়েছিল। সেটুকুও করতে না পেরে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের উপরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক। শতদলের অভিযোগ, ‘‘ভোটের নামে প্রহসন হল। গত কয়েক দিনের ঘটনাক্রম থেকে আমাদের মনে হয়েছিল তৃণমূলের বহিরাগতদের যা দাপাদাপি তাতে সুষ্ঠুভাবে বিরোধীদের পক্ষে মনোনয়ন তোলা সম্ভব নয়। সে আশঙ্কার কথা প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। প্রশাসন আশ্বাস দিলেও কথা রাখেনি।’’

সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের ৪৬ আসনে ৪৬টি, সিউড়ি মহাবিদ্যলয়ে ২৪টি আসনে ২৪টি মনোনয়ন তোলা হয়েছে। এক তরফা মনোনয়ন হলেও এলাকার কলেজের রাশ কার হাতে থাকবে সে প্রশ্নে বিরোধ বাধে হেতমপুর কৃষ্ণচন্দ্র কলেজে। শেষমেষ অবশ্য ব্লক তৃণমূলের নির্দেশে কলেজ ২৪টি আসনেই মনোনয়ন তোলা হয়। অন্য দিকে, তৃণমূলের দ্বন্দ্বে বেশ কিছু দিন কয়েক ধরেই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে খয়রাশোল। খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা, তৃণমূল নেতা দীপক ঘোষের উপরে গুলি চালানো নিয়ে তৃণমূলের দু’গোষ্ঠীর উত্তেজনা তুঙ্গে। কলেজ ভোটের মনোনয়ন তোলাকে ঘিরেও উত্তেজনা ছিল। ছিল পুলিশও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement