পরীক্ষা শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই পরীক্ষা কেন্দ্রের জানলার জালের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে এসেছিল প্রশ্নপত্রের প্রথম পাতা। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন শুক্রবার রামপুরহাটের এস এম বিদ্যায়তন পরীক্ষা কেন্দ্রের ওই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই উদ্বেগ বেড়ে যায় প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা দফতরের। রামপুরহাটের মহকুমা শাসক উমাশঙ্কর এস প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রের খোলা জানালায় জাল লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন আগেই। কিন্তু তারপরও ওই কাণ্ড ঘটনায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে শিক্ষা দফতরের। উদ্বিগ্ন প্রশাসনও। কিন্তু এখনও মহকুমা এলাকার বেশ কিছু পরীক্ষা কেন্দ্রের জানলায় জাল লাগানো হয়নি। আর এতেই নির্বিঘ্নে পরীক্ষা পরিচালনা করা প্রশাসনের কাছে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
এমনিতেই রামপুরহাট মহকুমার বেশ কিছু স্কুলে প্রায় প্রতিবছর ধারাবাহিক ভাবে টুকলি জোগান দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। তা নিয়ে প্রতিবার হইচই হলেও অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হলে রীতিমতো কার্নিস বেয়ে কিংবা বাঁশ ঝাড় বেয়ে দোতলার জানলার কাছে টুকলি নিয়ে হাজির হয়ে যাচ্ছেন কিছু ছেলে। টুকলি জোগানে মেয়েরাও যে পিছিয়ে নেই, তাও দেখা গিয়েছে। আর টুকলির আনাগোনা হয়েছে খোলা জানলা পথেই। কিন্তু এ বার রামপুরহাট এস এম বিদ্যায়তন পরীক্ষা কেন্দ্রের ১০ নম্বর ঘর থেকে রামপুরহাট এইচ এম বি হাইস্কুলের এক পরীক্ষার্থী বাংলা প্রশ্নপত্র পেয়েই যে ভাবে জানালার জাল ফাঁক করে প্রশ্নপত্রের একটি অংশ স্কুল লাগোয়া গলিতে ফেলে দিয়েছিল, তাতে প্রশাসন বেশ বিব্রত হয়ে পড়ে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ওই ঘরের পরিদর্শকের বিষয়টি নজরে আসে। তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। প্রথমে ওই পরীক্ষার্থী ঘটনাটি অস্বীকার করলেও, তাঁর কাছে প্রশ্নপত্রের বাকি অংশ নেই দেখে পরিদর্শক চাপ দেন। এস এম বিদ্যায়তন পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেনু ইনচার্জ নন্দকিশোর দাস বলেন, “পরে গলিতে ফেলে দেওয়া প্রশ্নপত্রটি কুড়িয়ে আবার ওই পরীক্ষার্থীকে দেওয়া হয়।” বিষয়টি মহকুমাশাসক ও স্কুল শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদেরও জানান হয়।
মহকুমা শাসক বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর আগেই মহকুমার প্রত্যেকটি পরীক্ষা কেন্দ্রের ইনচার্জ-সহ শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। সেখানে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির ভাল ভাবে নিরাপত্তার জন্য জানালা, দরজা ঠিক করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বেশ কিছু পরীক্ষা কেন্দ্রের জানালায় এখনও জাল লাগানো হয়নি। পরীক্ষার প্রথম দিনেই একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে একজন পরীক্ষার্থী জানলা দিয়ে প্রশ্নপত্র ফেলে দেয়। সেই ঘটনার পর প্রত্যেকটি পরীক্ষাকেন্দ্রের ইনচার্জদের সতর্ক করা হয়। এবং জানালায় নেট লাগানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” এ দিকে শুক্রবার এসডিও ওই নির্দেশ দেওয়ার পরে তিন দিন পেরিয়ে গেলেও রবিবার রামপুরহাট এস এম বিদ্যায়তন, রামপুরহাট হাইস্কুল, রামপুরহাট নিশ্চিন্তপুর মাধ্যমিক স্কুল এই সমস্ত স্কুল ঘুরে দেখা গেল বেশ কিছু ঘরের জানলায় জাল লাগানো হয়নি। এ দিকে মহকুমা শাসকের নির্দেশ মতো জরুরি ভিত্তিতে ওই কাজ করতে গেলে তাঁদের কাছে এখনই পর্যাপ্ত টাকা নেই বলে জানিয়েছেন অধিকাংশ স্কুলের শিক্ষকরা। রামপুরহাট এস এম বিদ্যায়তনের টিচার ইনচার্জ নন্দকিশোর দাস জানান, স্কুলের সব জানালায় জাল লাগানো আছে। তবে কোনও জানলায় হয়তো জাল পুরনো হয়ে থাকতে পারে, তা সারানোর চেষ্টা চলছে। রামপুরহাট হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক মহম্মদ নুরউজ্জামান বলেন, “মহকুমাশাসকের অফিসের কর্মীরা স্কুল পরিদর্শন করে গিয়েছেন। স্কুলের তহবিলের সীমাবদ্ধতার কথা তাদের জানিয়েছি।”
রামপুরহাট নিশ্চিন্তপুর মাধ্যমিক স্কুলের টিচার ইনচার্জ আশিস দালাল স্বীকার করেছেন, তাঁর স্কুলের অধিকাংশ জানালায় জাল নেই। স্কুলের তহবিল থেকে জাল লাগানেওা এই মুর্হূতে সম্ভব নয়।” এতো গেল মহকুমা শহরের স্কুলগুলির হাল। গ্রামাঞ্চলের পরীক্ষা কেন্দ্রের কী হবে? মহকুমাশাসক বলেন, “বিডিও-দের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। দেখা যাক কি হয়।”