মেলা দেখতে গিয়ে যুবক খুনের ঘটনার একদিন পরেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারল না পুলিশ। বুধবার রাতে গোয়ালতোড়ের খয়েরবনি গ্রামে মনসা পুজোর মেলা দেখতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি তালড্যাংরার নিয়োগীডাঙার বাসিন্দা অরুণ সর্দার (২৮)। পরেরদিন বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় একটি বাঁধের পাড়ে তাঁর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে গোয়ালতোড় থানার পুলিশ। এলাকায় সিপিএমের সক্রিয় কর্মী ছিলেন অরুণ। তাই এই খুনের ঘটনায় প্রথম থেকেই তৃণমূলের হাত রয়েছে বলে সিপিএম দাবি করে আসছে। যদিও সেই দাবি ভিত্তিহীন বলে দাবি করছে তৃণমূল। পুলিশও জানিয়েছে, অরুণের স্ত্রী অর্চিতা তাঁর স্বামীকে খুনের যে অভিযোগ গোয়ালতোড় থানায় দায়ের করেছেন, তাতে তৃণমূলের লোকজন খুন করেছে বলে উল্লেখ করা নেই। অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেই খুনের অভিযোগ করেছেন তিনি।
এ দিকে দেহ উদ্ধারের একদিন পরে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ওই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করা তো দূর, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক পর্যন্ত করতে পারেনি। যা থেকে ঘটনার তদন্ত সঠিক পথে হচ্ছে কি না তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মনোরঞ্জন পাত্রের অভিযোগ, “পুলিশ ঠিকঠাক তদন্ত করছে না। ঘটনার পিছনে তৃণমূলের হাত রয়েছে বলেই পুলিশ এমনটা করছে। তদন্ত যদি সঠিক পথে না হয় তাহলে আমরা আদালতের দ্বরস্থ হব।” বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তৃণমূলের শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় শুক্রবার এসএমএস করে ওই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন।
তালড্যাংরা থানার আমড্যাংরা গ্রাম পঞ্চায়েতের নিয়োগীডাঙা এলাকাটি বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। এ বারের বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী শ্যামবাবুকে পরাজিত করেছেন জোটের কংগ্রেস প্রার্থী তুষারকান্তি ভট্টাচার্য। ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই একাধিক রাজনৈতিক সংঘাতের অভিযোগ উঠে এসেছে বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত আমড্যাংরা ও সংলগ্ন শালতোড়া এবং সাতমৌলি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে। শালতোড়ায় কংগ্রেস বিধায়ক তুষারকান্তিবাবুর উপর এলাকার তৃণমূল কর্মীরা হামলা চালায় বলেও অভিযোগ। প্রায় দিনই এই সব এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বোমাবাজি, বিরোধী কর্মীদের উপর হামলা হচ্ছে বলে দাবি সিপিএমের। তৃণমূলের মোটরবাইক বাহিনীও এলাকা দাপাচ্ছে বলে অভিযোগ।
যদিও পুলিশের দাবি, ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত সিপিএমের বিরুদ্ধে তিনটি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। সম্প্রতি পরিস্থিতি স্বাভাবিকও হয়ে আসছিল বলে দাবি পুলিশের। তবে অরুণের খুনের ঘটনায় ফের থমথমে হয়ে পড়েছে গোটা আমড্যাংরা এলাকা। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওই এলাকার পরিস্থিতির উপর আমাদের নজর রয়েছে।”