আজ শুরু মনোনয়ন

প্রার্থী বাছতে বিপাকে সব শিবির

সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে ত্রিস্তরীয় নির্বাচনের মনোনয়ন গ্রহণ। চলবে ৯ মে মাস পর্যন্ত। যদিও কোনও দলই এখনও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে উঠতে পারেনি। তাই পঞ্চায়েতগুলি দখলে রাখতে তৃণমূল যেমন ঠিক মতো প্রার্থী বাছাইয়ে তৎপর, দখল করতে ততটাই মরিয়া বিরোধীরা।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৮ ০১:২০
Share:

বাঁশি বাজিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তার পর থেকেই দৌড় শুরু করে দিয়েছে সব দলই। প্রার্থী বাছতে হিমসিম অবস্থায় শাসক থেকে বিরোধী। এমনই অবস্থা এখন পুরুলিয়ায়।

Advertisement

আজ, সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে ত্রিস্তরীয় নির্বাচনের মনোনয়ন গ্রহণ। চলবে ৯ মে মাস পর্যন্ত। যদিও কোনও দলই এখনও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে উঠতে পারেনি। তাই পঞ্চায়েতগুলি দখলে রাখতে তৃণমূল যেমন ঠিক মতো প্রার্থী বাছাইয়ে তৎপর, দখল করতে ততটাই মরিয়া বিরোধীরা। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে শুধু দলের প্রতীকই শেষ কথা নয়, প্রার্থীর ভাবমূর্তির উপরেও নির্ভর করে জয়-পরাজয়। আর সেই প্রার্থী যদি আগের নির্বাচিত সদস্য হন, তো সে ক্ষেত্রে, তিনি কাজ কেমন করেছেন, তাও বিবেচ্য দলের কাছে। এই বাড়তি চাপটা রয়েছে শাসকদলের।

তার উপরে সংরক্ষণের গেরোয় তৃণমূলের বহু নির্বাচিত সদস্য এ বার তাঁদের পুরনো আসনে প্রার্থী হতে পারছেন না। তাই নির্বাচনের প্রাথমিক পর্বে প্রার্থী বাছাইয়ের লড়াইয়ে তারা যে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন, মানছেন শাসকদলের অনেক নেতাই।

Advertisement

রবিবার পুরুলিয়ার এক জেলা নেতারই স্বীকারোক্তি, ‘‘পঞ্চায়েতে স্থানীয় বিভিন্ন সমীকরণ কাজ করে। তারপরে গত পাঁচ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে আমরা জেলার বেশির ভাগ পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতায় আছি। স্থানীয় স্তরের বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা মিটিয়ে দলের অন্দরের সমীকরণ সামলে দ্রুত প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা তাই যথেষ্ঠ জটিল ও কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’

তৃণমূল সূত্রের খবর, এক সপ্তাহ আগে দলের জেলা নেতৃত্ব ব্লকগুলিকে বুথ স্তরে আলোচনা করে প্রার্থী স্থির করার নির্দেশ দেয়। ফলে প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া সদ্য শুরু হয়েছিল। তারই মধ্যে নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে দেওয়ায় বিপাকে পড়ে গিয়েছেন ব্লক স্তরের নেতারা। তবে তৃণমূলের পুরুলিয়ার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যতম সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালির দাবি, ‘‘প্রার্থী বাছাই নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। ব্লক ও অঞ্চল নেতারা প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে।’’

বস্তুত, জুন বা জুলাই মাসে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে, এমনই আশা করেছিল তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা। কিন্তু মে মাসের প্রথম দিনেই পুরুলিয়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে দেওয়ায় তড়িঘড়ি প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে নাজেহাল অবস্থায় অনেক নেতা।

পুরুলিয়ায় ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের ১৭০টি পঞ্চায়েতে আসন সংখ্যা ১,৯৪৪। ২০টি পঞ্চায়েত সমিতিতে আসন আছে ৪৪৬। আর জেলা পরিষদের আসন ৩৮। অর্থাৎ আট দিনের মধ্যে জেলার প্রায় আড়াই হাজার (২,৪২৮) আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ শেষ করতে বেগ পেতে হচ্ছে অঞ্চল থেকে শুরু করে ব্লক ও জেলাস্তরের নেতাদের।

রাজ্যের কয়েকটি উপনির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বিজেপি-র জেলা নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, তাঁদের প্রার্থী তালিকা প্রায় প্রস্তুত। দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর ব্যাখ্যা, ‘‘শীর্ষ নেতৃত্ব কয়েক মাস আগেই জানিয়েছিলেন, মে মাসেই পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। সেই থেকে প্রস্তুতি নিয়ে প্রার্থী তালিকা মোটামুটি তৈরি হয়ে গিয়েছে।’’ তিনি জানান, আজ, সোমবার তাঁরা জেলা সমন্বয় কমিটির বৈঠকে বসে জেলা পরিষদের আসনগুলির প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেলবেন। পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের প্রার্থী স্থানীয় নেতারা তৈরি করে ফেলেছেন। তবে তৃণমূলের প্রার্থী দেখেই তাঁরা নিজেদের দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে চাইছেন বলে বিদ্যাসাগরবাবু জানিয়েছেন।

যদিও তাঁদের দল সূত্রেই জানা যাচ্ছে, পঞ্চায়েতের প্রস্তুতি সম্পর্কিত সভা জেলার ৪৪টি মণ্ডলের মধ্যে অর্ধেক জায়গায় হয়েছে। সোমবার থেকে মনোনয়ন শুরু হয়ে যাওয়ায় বাকি মণ্ডলগুলিতে সভা করা কার্যত অসম্ভব। তাছাড়া জেলার একশোর বেশি বুথ কমিটি এখনও তৈরি করতে পারেনি বিজেপি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে প্রার্থী তালিকা সম্পূর্ণ করে ফেলার দাবি করেছে গেরুয়া শিবির?

প্রায় একই অবস্থা সিপিএমের। জেলা নেতৃত্ব পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে সাংগঠিনক বৈঠক করলেও সেখানে প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার কাজ খুব বেশি এগোয়নি বলেই জানা যাচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন ব্লকে নিচুতলার কর্মীদের নিয়ে পঞ্চায়েতের প্রস্তুতি সভা শুরু করে সিপিএম। যদিও জেলা নেতৃত্বের দাবি, সংগঠিত দল হওয়ায় কারা প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে সবাই দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে মেনে নেবেন। তৃণমূল ও বিজেপিকে রুখতে বেশ কিছু জায়গায় ‘সর্বসম্মত নির্দল’ প্রার্থী দিতে চাইছে সিপিএম। দলের নেতাদের কথায় বৃহত্তর বামফ্রন্ট ধাঁচে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত কয়েকটি জায়গায় নেওয়া হবে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রক্রিয়া আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। নির্বাচনের দিন ঘোষণার পরে তা আরও গতি পেয়েছে সর্বস্তরে। প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করে তাহলে পঞ্চায়েতে বামফ্রন্ট সাম্প্রদায়িক শক্তি বা তৃণমূল দু’দলকেই কঠিন লড়াইতে ফেলবে।” কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘তড়িঘড়ি নির্বাচন ডাকায় সমস্ত দলই সমস্যায় পড়েছে। তবে সবরকম প্রতিবন্ধকতা কাটিয়েই নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন