বসন্ত উৎসবে কেবল রবীন্দ্রনাথ, বাকিতে নিষেধ

আশ্রমে দোল মানেই যে ‘তালেগোলে হরিবোল’ নয়— সে কথা বুঝিয়ে দিতে বসন্তোৎসবের আগেই ফের তৎপর বিশ্বভারতী। সারা দেশে যে দিন দোল খেলা চলে, রবি ঠাকুরের গানে-নাচে বিশ্বভারতীর সে দিন বসন্তোৎসব।

Advertisement

মহেন্দ্র জেনা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৭ ০২:৩৪
Share:

আশ্রমে দোল মানেই যে ‘তালেগোলে হরিবোল’ নয়— সে কথা বুঝিয়ে দিতে বসন্তোৎসবের আগেই ফের তৎপর বিশ্বভারতী। সারা দেশে যে দিন দোল খেলা চলে, রবি ঠাকুরের গানে-নাচে বিশ্বভারতীর সে দিন বসন্তোৎসব। কিন্তু শান্তিনিকেতন আশ্রমের একান্ত নিজস্ব এই উৎসবে কবেই সামিল হয়েছে দেশ-বিদেশের মানুষ। বহিরাগতদের ভিড়ের দাপটে মাঝে মাঝেই টাল খেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অনুষ্ঠান। প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তা নিয়ে। এ বারও তাই বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠানের নিজস্বতা বজায় রাখতে নানা নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চলেছে বিশ্বভারতী। সোমবার এ কথা জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপনকুমার দত্ত।

Advertisement

এ বার আশ্রম এলাকায় রবীন্দ্রনাথের নাচ, গান ছাড়া অন্য কিছু করা যাবে না। অন্য কোনও ভাষার গান বা অন্য কোনও নাচও চলবে না। আশ্রমে ‘পলাশ নিধনে’ সামিল না হওয়ার আর্জিও থাকছে। শুধু তাই নয়, আশ্রমে তরল রঙ ব্যবহার যেমন নিষিদ্ধ থাকছে, তেমনই ভেষজ আবির ব্যবহারের উপর জোর দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। স্বপনবাবু বলেন, “আশ্রম এলাকায় মূল অনুষ্ঠানের আগে ও পরে রবীন্দ্রনাথের নাচ, গান ছাড়া অন্য কোনও নাচ, গান হবে না।”

রবিবার শান্তিনিকেতনের আশ্রম মাঠে হতে এই উৎসব নিয়ে ইতিমধ্যেই জেলা পুলিশ, প্রশাসন-সহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিশ্বভারতী। সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার, উর্দিধারীদের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুরুষ ও মহিলা পুলিশ কর্মী মোতয়েন থাকছে। অবাঞ্ছিত কাজকর্ম রুখতে কড়া নজরদারির ব্যবস্থাও নিয়েছে জেলা পুলিশ। ফি বছর বসন্ত উৎসবের আগে, পলাশ ফুলের জন্য আশ্রম এবং সংলগ্ন এলাকার বহু গাছে চলে নানা অত্যাচার। পলাশ ফুল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও, আশ্রমের ফুল ও গাছ বাঁচাতে তাই উদ্যোগী বিশ্বভারতী।

Advertisement

ঘটনা হল অতীতে এমন নিষেধের পরেও অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেছে। অনুষ্ঠান চলাকালীন বেড়া টপকানো, অনুষ্ঠানের মাঝে রঙ খেলা, জোর করে রঙ মাখানো, মদ্যপ অবস্থায় মহিলাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের নজির রয়েছে। অনুষ্ঠানের পরে বহিরাগতদের একাংশকে আশ্রম চত্বরে নিজদের মতো গান-বাজনা করতে দেখা গিয়েছে।

আশ্রমিকদের কেউ কেউ বলছেন, অতীতে আশ্রমের মধ্যে বহিরাগতরা নানা ভাষায় গান এবং নানা রকমের নাচ করত বসন্ত উৎসবের দিন। প্রথম দিকে শোনা যেত হিন্দি হোলির গানও। কোনও কোনও ভবনে সেই পুরাতন গানের চলও রয়েছে। প্রবীণ এক আশ্রম সদস্য বলেন, ‘‘নিষেধাজ্ঞা জারি করেই কি বিশ্বভারতী ফেরাতে পারবে সাবেক দিনের বসন্তোৎসব? মনে হয় না। এটা ঠিক, দর্শকদের একাংশ শান্তিনিকেতনে দোল খেলতে আসেন। কোন গান বিশ্বভারতী গাইল বা নাচল— তাতে তাঁদের কিছু যায় আসে না। নিজেদের মতো করেই সেজে আসেন তাঁরা। তবে এমন নিষেধাজ্ঞার পরে যদি কেউ রাঙামাটির বাউল গান ধরেন দোলের দিন? বিশ্বভারতীকে কি তাঁকে নিষেধ করবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন