নগদ তবু মিলছে, খানিক স্বস্তি

টানা দেড় মাস কেটেছে ভোগান্তি আর উৎকণ্ঠায়। নিজের টাকা জমা রয়েছে অ্যাকাউন্টে। অথচ তুলতে গিয়ে নাজেহাল হয়েছে আম-জনতা। সৌজন্যে, কেন্দ্রের নোট-বাতিলের সিদ্ধান্ত। নতুন বছরের প্রথম কাজের দিনটি অবশ্য একটু অন্য রকম কাটল। অন্তত টাকা তুলতে বেরিয়ে হয়রানি একটু কম হয়েছে তাঁদের— এমনই বলছেন পুরুলিয়াও বাঁকুড়ার সাধারণ মানুষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:২১
Share:

মাস মাইনে তোলার লাইন। পুরুলিয়া শহরে সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।

টানা দেড় মাস কেটেছে ভোগান্তি আর উৎকণ্ঠায়। নিজের টাকা জমা রয়েছে অ্যাকাউন্টে। অথচ তুলতে গিয়ে নাজেহাল হয়েছে আম-জনতা। সৌজন্যে, কেন্দ্রের নোট-বাতিলের সিদ্ধান্ত। নতুন বছরের প্রথম কাজের দিনটি অবশ্য একটু অন্য রকম কাটল। অন্তত টাকা তুলতে বেরিয়ে হয়রানি একটু কম হয়েছে তাঁদের— এমনই বলছেন পুরুলিয়াও বাঁকুড়ার সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে এটিএম থেকে দৈনিক টাকা তোলার সীমা আড়াই থেকে বাড়িয়ে সাড়ে চার হাজার টাকা করায় স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন বহু মানুষ।

Advertisement

সোমবার বেতনের বেশির ভাগ টাকা তুলতে পেরে স্বস্তি পেয়েছেন বাঁকুড়ার সরকারি কর্মীরা। বছরের প্রথম মাসের বেতন সবে অ্যাকাউন্টে এসে ঢুকেছে সরকারি কর্মীদের। অথচ পুরনো পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিলের ডিসেম্বরে বেতন তুলতে গিয়ে চরম নাকাল হতে হয়েছিল তাঁদের। অনেকেই পর্যাপ্ত টাকা তুলতে না পেরে হতাশ হয়েছিলেন। এ বার পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানাচ্ছেন সরকারি কর্মীরা। শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র বাঁকুড়া সদর মহকুমা সম্পাদক আশিস পান্ডের কথায়, “সরকার সর্বোচ্চ ২৪ হাজার পর্যন্ত টাকা তোলার সীমারেখা করে দিয়েছে। গত মাসে ওই টাকা তুলতে আমাকে কত বার যে ব্যাঙ্কে গিয়ে হত্যে দিতে হয়েছে, তার হিসেব নেই। খুবই সমস্যায় পড়েছিলাম। তবে এ বার এক দফাতেই চেকে ওই টাকা তুলতে পেরেছি।’’ একই অভিজ্ঞতা পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি-র জেলা সভাপতি গৌতম দাসের। তিনি এ দিন বলেন, “ব্যাঙ্কের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বেতন তোলা অনেক সময় সাপেক্ষ। তাই এটিএম থেকে দৈনিক চার হাজার টাকা করে তুলছি। গতবার এই সুবিধাটাও ছিল না।’’

জেলার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি এক সপ্তাহের সর্বোচ্চ সীমার টাকা দিতে পারলেও জেলার বহু গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এ দিন ১০ হাজার টাকা করেই দিতে পেরেছে। মেজিয়া ব্লকের প্রত্যন্ত কালীদাসপুর এলাকার ভাড়া মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতনের শিক্ষক স্বপন কর্মকার স্থানীয় গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে বেতন তোলেন। স্বপনবাবুর কথায়, “গত মাসে মাথা কুটেও ব্যাঙ্ক থেকে পর্যাপ্ত টাকা তুলতে পারিনি। ধার করে সংসার চালিয়েছি। এ বার তবু এক লপ্তে ১০ হাজার টাকা তোলা যাচ্ছে। এ ছাড়া এটিএমগুলিও সচল হয়ে যাওয়ায় সমস্যা অনেকটা মিটেছে।’’

Advertisement

পুরুলিয়াতেও পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অন্তত কিছুদিন আগেও ব্যাঙ্ক বা এটিএমের সামনে গ্রাহকদের যে দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ছিল, তা কমেছে। পুরুলিয়া শহরে অধিকাংশ এটিএম থেকেই টাকা মিলেছে। এ দিন সকালের দিকে শহরের প্রাণকেন্দ্রে বেশ কিছু এটিএমে কিছুটা লাইন চোখে পড়লেও বেলা গড়াতে তা ক্রমে ফাঁকা হয়েছে। পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা পিয়ালি দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আমি এটিএম থেকে টাকা তুললাম। সাড়ে চার হাজারই পেলাম।’’ পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক, হুড়ার বাসিন্দা বিপত্তারণ মাহাতোর কথায়, ‘‘আজই মাইনে হয়েছে। সোটা এটিএম চলে গেলাম। টাকা পেয়েও গেলাম। কিছুদিন আগেও এটা ভাবতে পারতাম না।’’ পুরুলিয়া ২ ব্লকের একটি স্কুলের শিক্ষক দীনেশ মাহাতো আবার জানালেন, ক’দিন আগে ব্যাঙ্ক থেকেই ২৪ হাজার টাকা পেয়ে যাওয়ায় এ দিন আর এটিএম মুখো হননি।

তবে, নগদ টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তোলা গেলেও সরকারি কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ দাবি তুলছেন টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়ার। অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লইজ অ্যাসোসিয়েশনের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক সাগর রায়ের বক্তব্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে নগদের জোগান আরও বাড়ানো এবং এটিএমগুলিতেও টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো দরকার অবিলম্বে। সাধারণ মানুষের হাতে কিছু নগদ টাকা আসায় অনেকেই ব্যাঙ্কে সেই টাকা জমা করছেন। এই কারণেই ব্যাঙ্কের নগদের জোগান খানিক বেড়ে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন