ডাইনি অপবাদ দিয়ে মহিলাকে মারধরের নালিশ

পুরুলিয়ায় ফের ডাইনি অপবাদ দিয়ে এক মহিলাকে মারধরের অভিযোগ উঠল। এ বারের ঘটনাস্থল, পাড়া থানা এলাকার ইন্দ্রপ্রস্থ গৌরডি গ্রাম। প্রসাদ খাওয়ার পরে এক কিশোর পেটে ব্যথা অনুভব করায় প্রসাদ বিতরণকারী প্রৌঢ়াকে ডাইনি অপবাদ দেন গ্রামের কিছু মাতব্বর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাড়া শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৫ ০০:২০
Share:

পুরুলিয়ায় ফের ডাইনি অপবাদ দিয়ে এক মহিলাকে মারধরের অভিযোগ উঠল। এ বারের ঘটনাস্থল, পাড়া থানা এলাকার ইন্দ্রপ্রস্থ গৌরডি গ্রাম।

Advertisement

প্রসাদ খাওয়ার পরে এক কিশোর পেটে ব্যথা অনুভব করায় প্রসাদ বিতরণকারী প্রৌঢ়াকে ডাইনি অপবাদ দেন গ্রামের কিছু মাতব্বর। পরে বাড়িতে চড়াও হয়ে প্রৌঢ়া ও তাঁর ছেলেকে মারধর করে ওই মাতব্বরেরা বলেও অভিযোগ। প্রৌঢ়াকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তিও হতে হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত গত ২৫ জুলাই বিপত্তারিণী পুজোর দিন। ইন্দ্রপ্রস্থ-গৌরাডি গ্রামের ওই প্রৌঢ়া, পেশায় পরিচারিকার মন্দির থেকে পুজো দিয়ে ফেরার পথে কয়েকটি ছেলে তাঁর কাছে প্রসাদ চায়। পুজোর দিন দুয়েক পরেই ওই প্রসাদ খেয়ে এক কিশোরের পেটে ব্যথা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে তার বাবা, মা ও বাড়ির লোকজন ওই প্রৌঢ়ার বাড়িতে চড়াও হন। তখন বাড়িতে প্রৌঢ়া ও তাঁর বড় ছেলে ছিলেন। অভিযোগ, কিশোরের বাড়ির লোকজন তাঁর মাকে গালিগালাজ করায় বড় ছেলে প্রতিবাদ করলে তাঁকে মার খেতে হয়। এর পরে প্রৌঢ়াকেও মাটিতে ফেলে হালমাকারীরা বুকে লাথি মারে। খবর পেয়ে তাঁর স্বামী মাঠ থেকে ছুটে আসেন। প্রৌঢ়াকে সে দিনই পাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।

Advertisement

ওই পরিবারের আরও অভিযোগ, পরের দিন গ্রামে কিশোরের পেট ব্যথাকে কেন্দ্র করে সালিশি সভা বসে। সেই সভায় প্রৌঢ়া ও তাঁর স্বামীও ছিলেন। সভায় জানিয়ে দেওয়া হয়, ওঝার নিদান মোতাবেক ওই প্রৌঢ়াই ডাইনি। সে কারণেই কিশোরের পেট ব্যথা হয়েছে। সালিশি সভায় প্রৌঢ়ার পরিবারের ১৫ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। কিন্তু হতদরিদ্র পরিবার কোথা থেকে এত টাকা জোটাবে এই চিন্তায় তাঁর স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানান ওই প্রৌঢ়া। তিনি বলেন, ‘‘স্বামীকেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করতে হয়। টানা ১২ দিন ভর্তি থাকার পরে ১৪ অগস্ট তিনি ছুটি পান।’’ প্রৌঢ়ার স্বামীর কথায়, ‘‘বাড়ি ফেরার পরে মাব্বরদের নির্দেশে আমাদের সারাক্ষণ নজরবন্দি করে রাখা হচ্ছিল।’’

রবিবার স্বামী-স্ত্রী কোনও ভাবে গ্রামবাসীর নজর এড়িয়ে সোজা বাস ধরে রঘুনাথপুরে গিয়ে আইনজীবীদের খোঁজ করতে থাকেন। শেষে আদালত চত্বরে এসে এই দম্পতি সহৃদয় কয়েক জন মানুষের সহযোগিতায় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তাঁরা পাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। যে পরিবারের ছেলেটির প্রসাদ খেয়ে পেটে ব্যথা হয়েছিল, সেই পরিবারের কেউ কথা বলতে চাননি। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানান, ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন