চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্বভারতীর যাবতীয় ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইনে হবে বলে জানিয়ে দিলেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভর্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতেই এই ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা। ভর্তির আবেদন অনলাইনে করা গেলেও, একটা বড়ো অংশ অফলাইনে হত। সেটাও এই বছর থেকে অনলাইনে করা যাবে।’’
২০১৩ সালে শেষবার হাতে লেখা ফর্ম জমা দিতে হয়েছিল আবেদনকারী পড়ুয়াদের। বিশ্বভারতী উল্লেখিত নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখা থেকে ফর্ম তুলে সেটি পূরণ করে অ্যাডমিশন কো-অর্ডিনেশন সেলে জমা দিতে হত। এর পরে ত্রুটিহীন আবেদনকারীদের বিশ্বভারতী কমন অ্যাডমিশন টেস্ট (ভিবি-ক্যাট) পরীক্ষার জন্য অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গের অন্য জেলা সহ ভিন্রাজ্যেও ভিবি-ক্যাট পরীক্ষার কেন্দ্র থাকত। স্নাতকস্তরের ক্ষেত্রে ভিবি-ক্যাট পরীক্ষা দেওয়ার পরে মেরিট লিস্ট এবং উচ্চ মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বরের যোগ্যতামান পূরণ হয়েছে কিনা দেখে পড়ুয়াদের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ভর্তি হতে হত। ২০১৪ সালে প্রথম ভর্তির আবেদন পূরণ করা শুরু হয় অনলাইনে। যদিও পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলি আগের বছরের মতো ছিল। ভিবি-ক্যাট পরীক্ষার মেরিট লিস্ট নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ২০১৫ সাল থেকে ভিবি-ক্যাট বন্ধ হয়ে যায়। সে বার স্নাতকস্তরে পড়ুয়াদের ভর্তি করা হয় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের উপরে ভিত্তি করে। সেই পদ্ধতিই এত দিন চলে আসছিল। অর্থাৎ প্রথমে অনলাইনে আবেদন করা, এর পরে রেজাল্ট বেরোনোর পরে আবার নম্বর আপলোড করা, প্রাপ্ত নম্বরের উপরে ভিত্তি করে মেরিট-লিস্ট বেরোনো, কাউন্সেলিংয়ের দিন ঘোষণা, বিশ্বভারতীর লিপিকা প্রেক্ষাগৃহ নতুবা ভাষা-বিদ্যা বিল্ডিংয়ে এসে টাকা জমা দেওয়া, কর্তৃপক্ষকে আসল মার্কশিট দেখানো, সবশেষে ভর্তি হওয়া— দীর্ঘ পথ পেরোতে হত। জটিলতা সরিয়ে স্বচ্ছতা আনতে এ বছর থেকে তাই পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনে হওয়ার ফলে বিশ্বভারতীর স্নাতক, স্নাতকোত্তর সহ সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা সব কোর্সেই মেরিট লিস্টে নাম থাকা পড়ুয়ারা বাড়িতে বসেই অনলাইনে বিভাগ অনুযায়ী ভর্তির টাকা জমা দিতে পারবেন। গোটা দেশে এই প্রক্রিয়া কাজ করবে। টাকা জমা দেওয়া হল মানেই সেই পড়ুয়ারা বিশ্বভারতীতে ভর্তি হয়ে গেলেন। আর আলাদা কোনও কাউন্সেলিং হবে না। এর পরে একমাত্র আসল মার্কশিট ভেরিফিকেশনের যে দিন দেওয়া থাকবে, সে দিন এসে ওই কাজটি করলেই ভর্তি সম্পূর্ণ হবে।
এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবক থেকে শুরু করে ছাত্র, কর্মীরা। অভিভাবকদের একটি অংশ জানাচ্ছেন, কাউন্সেলিংয়ের দিনে তাঁদের সবাইকে আসতে হত। মেরিট লিস্টে অনেক পরে নাম থাকলেও ভর্তির আশা রেখে অনেকে আসতেন। শেষ পর্যন্ত ভর্তি হওয়া হতই না, দিনভর বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়তেন। সেই সব থেকেও এ বারে মুক্তি মিলবে বলে মনে করছেন অভিভাবকদের একাংশ।
বিশ্বভারতীর কর্মিসভার সভাপতি দেবব্রত (গগন) সরকার এবং অধ্যাপকসভার সম্পাদক গৌতম সাহা বলেন, ‘‘ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইন হওয়ার ফলে মনে হয়, যে কোনও দুর্নীতি থেকে মুক্ত থাকবে ভর্তি প্রক্রিয়া।’’ ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্য এবং সম্পাদক বিকাশচন্দ্র গুপ্তের কথায়, ‘‘দূরদূরান্ত থেকে পড়ুয়াদের আসতে হত। অনলাইন চালু হলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার পাশাপাশি তাঁদেরও কষ্ট কমবে।’’ প্রাক্তন ছাত্রনেতা ভ্রমর ভাণ্ডারী অবশ্য মনে করেন, ‘‘এই প্রক্রিয়া আরও আগে শুরু হওয়া দরকার ছিল। তাতে ভর্তি সংক্রান্ত দুর্নীতির জট আগেই খুলে যেত।’’