কলেজের অনলাইনে আবেদন করতে নাকাল ছাত্রছাত্রীদের দাবি

ভর্তির জন্য চাই একটিই সাইট

অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়াতেই পা বাড়াল বাঁকুড়ার কলেজগুলি। কিন্তু কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু না হওয়ায় ভর্তি নিয়ে ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলল না ছাত্রছাত্রীদের। প্রতিটি কলেজ একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পড়ুয়াদের প্রতিটি কলেজের ওয়েবসাইটে গিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে আবেদন জানাতে হচ্ছে। এতে সময় যেমন বেশি লাগছে, তেমনই কিছু ক্ষেত্রে বাড়তি খরচও গুনতে হচ্ছে তাঁদের। ভর্তির ফি জমা করতে ছুটে যেতে হচ্ছে একাধিক ব্যাঙ্কে।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৫ ০১:০২
Share:

স্নাতকস্তরে ভর্তি হতে বিষ্ণুপুরের একটি সাইবার কাফেতে অনলাইনে আবেদনপত্র জমা দিচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা। (ডান দিকে) বাঁকুড়ায় সারদামণি গার্লস কলেজের হেল্প ডেস্কেও সমান ভিড়। মঙ্গলবারের নিজস্ব চিত্র।

অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়াতেই পা বাড়াল বাঁকুড়ার কলেজগুলি। কিন্তু কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু না হওয়ায় ভর্তি নিয়ে ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলল না ছাত্রছাত্রীদের।
প্রতিটি কলেজ একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পড়ুয়াদের প্রতিটি কলেজের ওয়েবসাইটে গিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে আবেদন জানাতে হচ্ছে। এতে সময় যেমন বেশি লাগছে, তেমনই কিছু ক্ষেত্রে বাড়তি খরচও গুনতে হচ্ছে তাঁদের। ভর্তির ফি জমা করতে ছুটে যেতে হচ্ছে একাধিক ব্যাঙ্কে। ফলে ভর্তি নিয়ে হয়রানি কমছে না ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের। কিছু কলেজ হেল্পডেস্ক খুলেছে। সেখানে যেমন ভিড় হচ্ছে, তেমনই সাইবার কাফেগুলিতেও ভিড় উপচে পড়ছে।
অথচ চিত্রটা অনেকটাই আলাদা ছিল ২০১৩ সালে। ওই বছর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবার অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কেন্দ্রীয় ভাবে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছিল। সেই সফটওয়্যারে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় পড়া সবকটি কলেজকেই একসঙ্গে পাওয়া যাচ্ছিল। সেখান থেকে একবার রেজিস্ট্রেশনের করে পছন্দসই কলেজগুলিতে আবেদন করতে পারছিলেন পড়ুয়ারা। এতে একাধিক ব্যাঙ্কে ছুটতে হয়নি। খরচও ছিল কম। কিন্তু পরের বছর ২০১৪ সালেই অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

Advertisement

চলতি বছরে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কলেজভিত্তিক অনলাইন ভর্তিতে আপত্তি জানাননি। কিন্তু কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়াতেও সায় দেননি। তাই প্রতিটি কলেজেই অনলাইন ভর্তির পরিকাঠামো গড়তে কলেজগুলিকে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা করে দিয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। এই টাকাতে বাঁকুড়ার বেশির ভাগ কলেজই কম্পিউটার কিনে সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করেছে। ছাত্রছাত্রীদের অভিজ্ঞতা, এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি কলেজের জন্য আলাদা ওয়েবসাইটে গিয়ে টাকা দিয়ে নাম রেজিস্ট্রেশন করাতে হচ্ছে। এতে অনেকটাই সময় লাগছে ও বিষয়টি খরচ সাপেক্ষও ঠেকছে তাঁদের কাছে।

জেলার বেশিরভাগ কলেজই রেজিস্ট্রেশনের জন্য ১০০ টাকা করে ধার্য করা হয়েছে। একবার রেজিস্ট্রেশন করেই পাসকোর্স ও অনার্সে ভর্তি হওয়া যাবে। বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজে অবশ্য রেজিস্ট্রেশনের জন্য ২০০ টাকা লাগছে। বিভিন্ন কলেজ বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে সংযোগ করেছে। যেমন রাইপুর ব্লক মহাবিদ্যালয়, ছাতনা চণ্ডীদাস মহাবিদ্যালয়ের মতো বহু কলেজ ইউবিআই ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আবার বাঁকুড়া সারদামণি গার্লস কলেজ, বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের মতো কলেজগুলি এসবিআই ব্যাঙ্কের সঙ্গে সংযুক্ত। প্রত্যেকটি কলেজে নাম রেজিস্ট্রেশনের জন্য সংশ্নিষ্ট ব্যাঙ্কেই রেজিস্ট্রেশনের টাকা জমা দিতে হবে। এর ফলে রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিতে চালান নিয়ে একাধিক ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইন দিতে হচ্ছে অভিভাবকদের। যদিও নেট ব্যাঙ্কিং বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমেও রেজিস্ট্রেশনের টাকা দেওয়া যাচ্ছে। তবে এই জেলার বহু মানুষই এখনও নেট ব্যাঙ্কিং বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করেন না। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সফটওয়্যার চালু করার দাবি উঠছে সব মহল থেকেই।

Advertisement

জেলার একটি কলেজের অধ্যক্ষের কথায়, “ওড়িশা সরকার কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করেছে। সেখানে একটি সফটওয়্যারে একটি রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে রাজ্যের সবকটি কলেজেই ভর্তির আবেদন করা যাচ্ছে। ওরা যদি পারে, আমরা পারব না কেন?” রাজ্য সরকারের একটু সদিচ্ছা থাকলেই ওড়িশার মতো এখানেও কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া চালু হতে পারে বলেই তাঁর অভিমত।

বাঁকুড়ার সিনেমারোড এলাকার একটি সাইবার কাফেতে ২০১৩ সালেও অনেক পড়ুয়াই অনলাইনে ভর্তির আবেদন করেছিলেন। এ বারও ওই সাইবার কাফে থেকে অনলাইনে ভর্তির আবেদন করা হচ্ছে। সে বার আর এ বারের তুলনা করতে গিয়ে সাইবার কাফের মালিক পিঙ্কেশ ঠাক্কর, পরেশ ঠাক্কররা বলেন, “১০০ টাকায় অনেকগুলি কলেজে রেজিস্ট্রেশন করা যাচ্ছিল। একটি ওয়েবসাইটেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কলজেগুলি পাওয়া যাচ্ছিল বলে সময়ও লাগছিল অনেক কম। কিন্তু কলেজগুলি এ বার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় এক একটি কলেজের জন্য ১০০ টাকা করে রেজিস্ট্রেশন করাতে লাগছে। এতে সময়ও বেশি লাগছে। গরিব ছাত্রছাত্রীদের সে সামর্থও নেই। ওদের দেখলে খারাপ লাগছে।’’

রাধানগর হাইস্কুল থেকে কৌশিক সিংহ কলা বিভাগ থেকে ৪১৪ নম্বর পেয়ে এ বার উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে। তার বাবা পেশায় ঠিকা শ্রমিক। কৌশিক জানায়, সে ভূগোলে অনার্স নিয়ে পড়তে চায়। এ জন্য অন্তত পাঁচটি কলেজে সে আবেদন করবে বলে ঠিক করেছে। তার কথায়, “আমরা খুবই গরীব। দারিদ্রের কারণে পড়াশোনা চালাতে পারব কি না তাই নিশ্চিত নয়। তাও ভূগোলে অনার্স করার জন্য অনেকগুলি কলেজেই আবেদন করব। কিন্তু সব কলেজে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আলাদা করে টাকা দিতে হলে অনেক খরচ হবে। তার চেয়ে একটা রেজিস্ট্রেশনে সব কলেজে আবেদনের সুযোগ পেলে সুবিধা হতো।”

সিপিএম প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক ধর্মেন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, “প্রথম বছর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। তাতে পড়ুয়াদের অনেক সুবিধা হয়েছিল। কিন্তু বিচ্ছিন্ন ভাবে এ বছর যা হচ্ছে, এতে আখেরে কিছুই লাভ হচ্ছে না।” তাঁর দাবি, শিক্ষাকে আরও সরলীকরণ করতে কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করার উদ্যোগ নিতে হবে রাজ্য সরকারকে।

বাঁকুড়ার ছাত্র ও যুব নেতা শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে রাজ্য সরকার নানা চিন্তাভাবনা করছে। আগামী দিনে অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ার আরও উন্নত পরিকাঠামো হবে বলেই আমরা আশাবাদী। তাতে ছাত্রছাত্রীদের সমস্যাও কাটবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন