তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার বাড়ল মাত্র দু’জন, প্রশ্নে সচেতনতা

এ বারই প্রথম ‘অন্যান্য’ থেকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হয়েছেন তাঁরা। কিন্তু ভোটার তালিকায় তার ছাপ পড়ল কই ? গত লোকসভা নির্বাচন থেকে এ বারের বিধানসভা ভোট পর্যন্ত গোটা বীরভূম জেলায় তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার বেড়েছে মাত্র দু’টি ।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৩৪
Share:

এ বারই প্রথম ‘অন্যান্য’ থেকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হয়েছেন তাঁরা। কিন্তু ভোটার তালিকায় তার ছাপ পড়ল কই?

Advertisement

গত লোকসভা নির্বাচন থেকে এ বারের বিধানসভা ভোট পর্যন্ত গোটা বীরভূম জেলায় তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার বেড়েছে মাত্র দু’টি। রাজ্যের রূপান্তরকারী ও হিজরাদের নিয়ে কাজকর্ম করা এক সংগঠনের প্রশ্ন, ‘‘এটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য?’’ এই সংখ্যাটাই দেখিয়ে দিচ্ছে তৃতীয় লিঙ্গের থেকে গিয়েছেন ভোটার তালিকার বাইরে— মত তাঁদের।

লোকসভা নির্বাচনের আগে সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দেয়। কেন্দ্র ও সব রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়, তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের সরকারি চাকরিতে বিশেষ সুবিধা, ভোটার কার্ড, পাসপোর্টেরও ব্যবস্থাও করতে হবে। সেই নির্দেশের পরেও মাত্র দু’জন ভোটার বাড়ার খবর শুনে অনেকেই বলছেন আসলে জনমানসে সার্বিক সচেতনতাই তৈরি হয়নি।

Advertisement

কেন তৃতীয় লিঙ্গের সংখ্যাটা নামমাত্র বেড়েছে? রূপান্তরকামী বা হিজরাদের সঠিক প্রতিফলন কেন ভোটার তালিকায় নেই? জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সামনে প্রশ্নটা তুলেছিলেন নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকেরা। জেলা প্রশাসনের কর্তারা তার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

বীরভূম জেলা নির্বাচনী দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ বারে জেলায় মোট ভোটার ২৫ লক্ষ ২৮ হাজার ১০ জন। মহিলা ভোটার ১২ লক্ষ ৮১ হাজার ৭৬৮ জন। সেখানে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের তথ্য বলছে, বীরভূমে ‘অন্যান্য’ ভোটারের ছিল ২০। এ বার সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ২২।

পড়শি বর্ধমানে ছবিটা মন্দের ভাল। গত লোকসভার ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ শ্রেণিতে ভোটারের সংখ্যা যেখানে ২৯ ছিল, সেটাই এ বার বেড়ে প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। আসানসোল উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে সব থেকে বেশি ১০ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। অন্য দিকে, দুর্গাপুর পূর্ব, দুর্গাপুর পশ্চিম, কালনা, পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রে এক জন করে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। আবার রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, আউশগ্রাম, ভাতার, কাটোয়া, মন্তেশ্বর কেন্দ্রে কোনও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার নেই!

কিন্তু, কোনও জায়গাতেই কেন প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না?

রূপান্তরকারী ও হিজরাদের নিয়ে কাজকর্ম করা এক সংগঠনের তরফে দাবি, প্রকৃত তথ্য উঠে না আসার পিছনে প্রধান কারণ হল এত দিন পর্যন্ত যে ভাবে জনগণনা করা হয়েছে তাতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সঠিক সংখ্যা তুলে আনার কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। নেই রাজনৈতিক সদিচ্ছাও। সেটা হলেও তৃতীয় লিঙ্গের দাবি ও অধিকার আদায়ে অনেক সুবিধা হত। তা হলে অল্প হলেও নাম উঠছে কী করে? ওই সংগঠনের প্রধান রঞ্জিতা সিংহের মতে, ‘‘ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম উঠেছে তাঁরা একান্ত ভাবেই নিজের উদ্যোগে তা করেছেন।’’

জেলার কয়েক জন রূপান্তরকামীর বক্তব্য, আইনের কথা তাঁদের জানা নেই। এঁদেরই একজনের কথায়, ‘‘তবে এটা ঠিক। ভোটার তালিকায় সকলের নাম নেই।’’ দীর্ঘ দিন ধরে রূপান্তরকামীদের নিয়ে গবেষণার কাজ যুক্ত রয়েছেন চিরশ্রী মিশ্র। বর্তমানে ‘হেল্থ প্রোজেক্ট কনসালটেন্ট’ হিসাবে কাজ করা কলকাতার বাসিন্দা চিরশ্রী বলছেন, ‘‘আইন যতই হোক, সামাজিক স্বীকৃতি এবং সহমর্মিতা না পেলে চট করে কে আর নিজেকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে ঘোষণা করে বিব্রত হতে চাইবেন। সেলিব্রিটি বা অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে থাকা মানুষজনের পক্ষে এটা তুলনামুলক সহজ হলেও, যাঁরা পিছিয়ে রয়েছেন তাঁদের পক্ষে এটা অত্যন্ত কঠিন।’’ সচেতনতা বৃদ্ধিই একমাত্র দাওয়াই বলে মনে করেন তিনি। সে ক্ষেত্রে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ ভুক্ত যাঁরা হতে চাইছেন প্রথম পদক্ষেপটাও তাঁদেরই নিতে হবে বলেও মনে করছেন চিরশ্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন