রোগীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন বাঁকুড়ায়

ঝুলছে তার, মেডিক্যাল যেন জতুগৃহ

কলকাতায় আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরে রাজ্যের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে অগ্নিনির্বাপক পরিকাঠামো গড়ার দিকে বিশেষ নজর দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই সময় বাঁকুড়া মেডিক্যালের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেও নানা বিপদের সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছিলেন দমকল বিভাগের কর্মীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩৩
Share:

বিপজ্জনক। বিভিন্ন জায়গায় খোলা ইলেকট্রিকের স্যুইচবোর্ড। বাঁকুড়া মেডিক্যালে শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

কলকাতায় আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরে রাজ্যের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে অগ্নিনির্বাপক পরিকাঠামো গড়ার দিকে বিশেষ নজর দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই সময় বাঁকুড়া মেডিক্যালের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেও নানা বিপদের সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছিলেন দমকল বিভাগের কর্মীরা। সতর্ক হওয়ার নির্দেশও দিয়েছিল দমকল বিভাগ। কিন্তু শনিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের অগ্নিকাণ্ডের পরে বাঁকুড়া মেডিক্যাল হাল দেখতে গিয়ে দেখা গেল, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কতটা অবহেলিত।

Advertisement

মেডিক্যালের সব তলাতেই বিপজ্জনক ভাবে ঝুলতে দেখা গিয়েছে ইলেকট্রিক তার। অপারেশন থিয়েটারের সামনে খোলা স্যুইচ বোর্ড। জায়গায় জায়গায় ঝুলছে ব্যাকটেপ দিয়ে মোড়া বিদ্যুতের তার। একটি তারের সঙ্গে আর একটি তারের ছোঁয়া লাগলে যা থেকে অনেক সময়েই শর্টসার্কিট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গোটা হাসপাতাল চত্বরে এমন খোলা স্যুইচ বোর্ড ও জোড়াতাপ্পি দেওয়া তার বহু জায়গায় নজরে পড়েছে। রোগীর আত্মীয়দের আশঙ্কা, কোনও ভাবে বৃষ্টির জল ওই খোলা বোর্ডের তারে এসে লাগলে কে কী ভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যাবে তার ঠিক নেই।

অথচ হাসপাতাল চত্বরে ঘণ্টাখানেক ইতিউতি ঘুরেও দু’-একটি বিশেষ জায়গা ছাড়া অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র সে ভাবে চোখেই পড়ল না। হাসপাতালের দু’তলায় পুরুষ মেডিসিন বিভাগের বাইরে শয্যা না পাওয়ায় বহু রোগীকে মাটিতেই শুয়ে থাকতে হয়। সেখানেই একটি খোলা স্যুইচ বোর্ডের তলায় একজন অচৈতন্য রোগীকে শুয়ে স্যালাইন টানতে দেখা গেল। অপারেশন থিয়েটারের বাইরে একটি খোলা স্যুইচ বোর্ডের নীচে কাঠের চেয়ারে বসে গল্প করছিলেন রোগীদের কয়েকজন আত্মীয়। তাঁদের মধ্যে ওন্দার বাসিন্দা অরূপ দত্ত, রাইপুরের শিবম কর্মকারদের কথায়, “ওয়ার্ডের ভিতরেও এই রকম খোলা স্যুইচ বোর্ড রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় তাপ্পি দেওয়া তার ঝুলছে। বিপদ ঘটতেই পারে যে কোনও মুহূর্তে।’’

Advertisement

হাসপাতালের কর্মীরা জানাচ্ছেন, বড় মাপের না হলেও এই হাসপাতালেও ছোট-খাটো অগ্নিকাণ্ড বেশ কয়েকবারই ঘটেছে। বছর খানেক আগেই স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগের নিচের তলায় মেইন স্যুইচে শর্টসার্কিট হয়ে অগ্নিকাণ্ড বাঁধে। ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় গোটা ওয়ার্ড। ভয় পেয়ে অনেকেই ওয়ার্ড থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন।

আমরি কাণ্ডের পরে বাঁকুড়া মেডিক্যালের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর বিষয়ে প্রশাসনিক স্তরে কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। পাঁচ বছর আগের আমরিকাণ্ডের স্মৃতি উস্কে দিয়েছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের অগ্নিকাণ্ড। অথচ মাঝের এতটা সময়ের মধ্যে বাঁকুড়া মেডিক্যালের পরিকাঠামো কতটা বদল হল প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আমরি কাণ্ডের পর স্বাস্থ্যভবনের নির্দেশ মতো হাসপাতালের অধিকাংশ পুরনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত পাল্টে নতুন মেশিন লাগানো হয়েছে। সেই সময়ই হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি।

হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু পূর্ত দফতরকে (বিদ্যুৎ) স্যুইচ বোর্ডগুলি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি জানান, ৪৫ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে হাসপাতালে নতুন অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কেনা ও বিদ্যুতের তার ঢেকে রাখার ব্যবস্থা সহ আরও কিছু কাজের জন্য। শীঘ্রই ওই প্রকল্পটির অর্থ বরাদ্দের জন্য স্বাস্থ্য ভবনে আবেদন জানানো হবে। কিন্তু এ সব এখনও হয়নি কেন? তাঁর কথায়, “সবই ধাপে ধাপে করা হচ্ছে। তবে বাঁকুড়া মেডিক্যাল অনেকটা জায়গা নিয়ে গঠিত। হাসপাতালে ঢোকা ও বের হওয়ার বেশ কয়েকটি দরজা রয়েছে। বিপদ হলে রোগীদের বের করতে সমস্যা হবে না। তবে পুরো হাসপাতালকে বিপদমুক্ত করতে সব রকমের ব্যবস্থাই ধাপে ধাপে নেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন