গন্ধেশ্বরীর দখলমুক্তি অভিযান শুরু

ঘোষণা করে দু’বার পিছিয়ে এসেছিল প্রশাসন। অবশেষে রবিবার গন্ধেশ্বরী নদীর পাড়ে জবরদখল মুক্ত করতে অভিযান শুরু হল। প্রচুর পুলিশ নামিয়ে নদী সংলগ্ন বাইপাস রাস্তা ঘিরে ফেলা হয়। ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) বাপ্পাদিত্য ঘোষ, বাঁকুড়া সদর থানার আইসি রাজর্ষী দত্ত সকাল থেকেই এলাকায় টহল দেওয়া শুরু করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:১০
Share:

ভেঙে ফেলা হচ্ছে অবৈধ নির্মাণ। —নিজস্ব চিত্র।

ঘোষণা করে দু’বার পিছিয়ে এসেছিল প্রশাসন। অবশেষে রবিবার গন্ধেশ্বরী নদীর পাড়ে জবরদখল মুক্ত করতে অভিযান শুরু হল। প্রচুর পুলিশ নামিয়ে নদী সংলগ্ন বাইপাস রাস্তা ঘিরে ফেলা হয়। ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) বাপ্পাদিত্য ঘোষ, বাঁকুড়া সদর থানার আইসি রাজর্ষী দত্ত সকাল থেকেই এলাকায় টহল দেওয়া শুরু করেন। মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা গোটা অভিযানের নেতৃত্ব দেন। অভিযান পর্বে অবশ্য কোথাও বাধা পায়নি প্রশাসন। অনেকে আগেভাগেই দোকান খালি করে দিয়েছিলেন। কেউ কেউ নিজেরাই অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলেছিলেন।

Advertisement

তিনটি বুলডোজার নামিয়ে সতীঘাট ও লক্ষাতড়া মহাশ্মশান এলাকায় নদীর এলাকায় গড়ে ওঠা অবৈধ নির্মাণের বেশিরভাগই এ দিন ভেঙে ফেলে প্রশাসন। বহু মানুষের ভিড়ও জমে যায়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বিভিন্ন দোকান ও ঘরবাড়ির গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। মহকুমাশাসক বলেন, “আমরা একাধিকবার মাপজোক করে রেকর্ড দেখে অবৈধ নির্মাণ চিহ্নিত করেছি। যাঁরা অবৈধ নির্মাণ করেছিলেন নদী এলাকায়, তাঁদের আগে নোটিসও দেওয়া হয়। তারপরে অভিযানে নেমেছি। এ দিন দুপুর পর্যন্ত অন্তত ৬০টি অবৈধ নির্মাণ ভাঙা হয়।’’

গন্ধেশ্বরীর নদীর পাড় ক্রমশ ভরাট করে গত কয়েক দশকে যেমন দোকান-বাড়ি তৈরি হয়েছে, ইদানীং নদীর ভিতরে উঁচু জায়গায় আরও কিছু নির্মাণ হচ্ছিল। দীর্ঘদিন ধরে ওই সব নির্মাণ ভাঙার দাবি উঠছিল। গত জুন মাসে সতীঘাট এলাকায় পুরসভার রামানন্দ পাম্পিং স্টেশনের বিপরীতে গন্ধেশ্বরী নদীর বুকে একটি নির্মাণ কাজকে নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে। তার প্রেক্ষিতেই জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা গন্ধেশ্বরী নদী পরিদর্শনে গিয়ে এই রকম বহু অবৈধ নির্মাণ দেখতে পান। নদী এলাকার মধ্যে এমন ৫০টির বেশি নির্মাণকে অবৈধ বলে চিহ্নিত করে তা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।

Advertisement

তবে নানা জটিলতায় সেই অভিযান আটকে যায়। এরপর পুজো মরসুম শেষ হওয়ার পরপরই ফের এলাকায় মাইকে প্রচার করে নদীবক্ষের অবৈধ নির্মাণ ভাঙার অভিযান শুরু হবে বলে জানায় প্রশাসন। অথচ ঘোষণার করেও অভিযানে নামেনি প্রশাসন। অথচ ওই নদী বর্ষায় যে কত ভয়াবহ হয়ে ওঠে, এ বার তা চাক্ষুস করেছেন বাসিন্দারা। নদীপাড়ের একটি আবাসনের ভিতের একাংশ বানের জল সাফ করে দিয়েছিল। বেশ কয়েকটি বাড়িও ডুবে যায়। তখনও বাসিন্দারা দাবি তুলেছিলেন, জবরদখল উচ্ছেদ করে নদীর নাব্যতা ফেরানো হোক।

সম্প্রতি ‘গন্ধেশ্বরী নদী বাঁচাও কমিটি’ বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে দ্রুত নদীটিকে দখল মুক্ত করার দাবি জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত রবিবার প্রশাসন সেই বহু প্রতীক্ষিত অভিযানে নামে। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে গন্ধেশ্বরী নদী বাঁচাও কমিটি। ওই সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক সন্তোষ ভট্টাচার্য বলেন, “নদী বাঁচাতে প্রশাসনের ফাঁকা আওয়াজ শুনে শুনে আমরা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত প্রশাসন নড়চড়ে বসায় আমরা খুশি। তবে আমরা চাই নদীটিকে দখল মুক্ত করার অভিযান যেন সম্পূর্ণ হয়।”

মহকুমাশাসক বলেন, “নদীটিকে সম্পূর্ণ দখল মুক্ত করাই লক্ষ।” আগামী ক’দিন অভিযান চালানো হবে বলে প্রশাসনি সূত্রে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন