লোবায় ভিড়। —নিজস্ব চিত্র
প্রতিমা জলে পড়তে পড়তে বিকেল গড়িয়ে যায়। তারপরে শীত শীত বাতাসে ভেসে, অন্ধকার পথে গাঁয়ে ফেরা। বাড়ি ফিরে বিসর্জনের গল্প!
লোবায় সেই বিসর্জন দেখাতেই নিজের বছর চারেকের দুটি যমজ বাচ্চাকে সাইকেলে চাপিয়ে ছুটছিলেন শেখ আজম। কেবল আজম নন, বধূ শেফালি দাস, গণেশ সরকার, স্কুলছাত্রী পিউ পালদের মতো বহুমানুষই রবিবার লোবা-মুখো। কেউ হেঁটে, কেউ সাইকেলে-ট্রেকারে-বাইকে, কেউ বা আবার গাড়ি ভাড়া করে গাঁ খালি করে চলেছেন কালী বিসর্জন দেখতে। আজমের কথায়, ‘‘বাচ্চাগুলো সকাল থেকে বায়না জুড়েছিল।’’
লোবার কালী পুজো পাঁচশো বছরেরও বেশি পুরনো। লোবার কালী দেখতে আসেননি বা নাম শোনেননি এমন মানুষ পড়শি গাঁয়েও বিরল। পুজো ঘিরে যেমন উন্মাদনা যেমন বিসর্জনেও তাই। সারা রাত পুজোর শেষে কালীপুজোর ঠিক পরের দিনই লোবা গ্রাম ঢুকতেই কালীভাসা পুকুরে বিসর্জন হয়। পুজোকে ঘিরে বসে একদিনের মেলা। হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন। তবে শুধু লোবার কালী নয় পাশের গ্রাম বাবুপুরের কালীও একসঙ্গে বিসর্জন হয়। বাবুপুরের কালী ও লোবার কালীকে নিয়ে এলাকায় নানা জনশ্রুতি রয়েছে। অনেকে বলেন দুই বোন। দুই বোনের সঙ্গে বিসর্জন হয় গ্রামের আরও একটি কালী। যেটি এলাকায় খ্যাপা মা বলে পরিচিত।
বিসর্জন দেখতে লোবায় দুপুর থেকেই নামে মানুষের ঢল। বহু বছর ধরে এটাই রীতি।
লোবার কালী পুজোটি গ্রামের ঘোষ পরিবারের। কিন্তু দীর্ঘ দিন আগেই সেই পুজো এখন সর্বজনীনের চেহারা নিয়েছে। গ্রামের সকলে এই পুজোকে নিজেদের পুজো বলেই মনে করেন। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে তৈরি লোবা কালী মন্দির থেকে প্রতিমা বের করে এনে প্রথমে সামনের খোলা জায়গায় রাখা হয়। আসে বাবুপুরের কালী। তারপরে সেখান থেকে ঘোষদের পরিবারে নিয়ে যাওয়া হয় বরণের জন্য। পরিবারের মেয়েরা মা-কে বরণ করেন।
ঘোষ পরিবারের দুই সদস্য কাঞ্চন ঘোষ, তৃপ্তি ঘোষরা জানালেন, যুগ যুগ থেকে এমনই রীতি। সেখান থেকে কাঁধ দোলায় কালীভাসায়। প্রতিমা জলে পড়ে শেষ বিকেলে। আর তারপরেই মনখারাপ করে বাড়ি ফেরা ফি বছর! অন্ধকারে লোবা ফিরতি পথে সেটাই বলছিলেন আজম, শেফালি, গণেশরা।