বিডিও-র সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানরা

ই-গভর্নেন্সের দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেল বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের রাইপুর ব্লক। সমস্যা পড়ে আর কাজ ফেলে বিডিও-র সঙ্গে দেখা করতে আর ব্লক অফিসে ছুটতে হচ্ছে না পঞ্চায়েত প্রধানদের। কোনও প্রকল্প নিয়ে আলোচনাই হোক বা মাসিক বৈঠক, অথবা কোনও সমস্যার কথা সরাসরি বিডিওকে জানাতে গেলেও কয়েক মিনিটের মধ্যে পঞ্চায়েতে বসেই তাঁরা সাক্ষাৎ পাচ্ছেন বিডিও-র। দুই প্রান্তেই কম্পিউটারের মাধ্যমে ‘ভিডিও কনফারেন্স’-এ কথাবার্তা চলছে। এতদিন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী বা নরাজ্যের শীর্ষকর্তারা এ ভাবেই আলোচনা চালাতেন। এ বার সে ভাবেই আলোচনা শুরু হয়েছে রাইপুরেও। এতে একদিকে যেমন কাজে গতি বেড়েছে, তেমনই সরকারের খরচও খানিকটা সাশ্রয় হচ্ছে বলে দাবি ব্লক প্রশাসনের।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

রাইপুর শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০১:৫৯
Share:

ই-গভর্নেন্সের দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেল বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের রাইপুর ব্লক।

Advertisement

সমস্যা পড়ে আর কাজ ফেলে বিডিও-র সঙ্গে দেখা করতে আর ব্লক অফিসে ছুটতে হচ্ছে না পঞ্চায়েত প্রধানদের। কোনও প্রকল্প নিয়ে আলোচনাই হোক বা মাসিক বৈঠক, অথবা কোনও সমস্যার কথা সরাসরি বিডিওকে জানাতে গেলেও কয়েক মিনিটের মধ্যে পঞ্চায়েতে বসেই তাঁরা সাক্ষাৎ পাচ্ছেন বিডিও-র। দুই প্রান্তেই কম্পিউটারের মাধ্যমে ‘ভিডিও কনফারেন্স’-এ কথাবার্তা চলছে। এতদিন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী বা নরাজ্যের শীর্ষকর্তারা এ ভাবেই আলোচনা চালাতেন। এ বার সে ভাবেই আলোচনা শুরু হয়েছে রাইপুরেও। এতে একদিকে যেমন কাজে গতি বেড়েছে, তেমনই সরকারের খরচও খানিকটা সাশ্রয় হচ্ছে বলে দাবি ব্লক প্রশাসনের।

রাইপুর ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতেই গড়ে তোলা হয়েছে ‘ভিডিও কনফারেন্সিং’ ব্যবস্থা। প্রত্যন্ত জঙ্গলমহলের এই ব্লকে ইন্টারনেট পরিষেবার হাল ভাল না হওয়ায় ব্লক প্রশাসন নিজের উদ্যোগে ‘ওয়াইফাই’ ব্যবস্থা গড়ে নিয়েছে ব্লক জুড়ে। যার ফলে হাইস্পিড ইন্টারনেট পরিষেবা মিলছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের কম্পিউটারগুলিতে ওয়েবক্যাম লাগানো থেকে ওয়াইফাই সংযোগের যন্ত্র কেনা, সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে বলে ব্লক দফতর সূত্রে খবর। পঞ্চায়েত সমিতির তহবিল থেকেই এই টাকা নেওয়া হয়েছে। বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “উদ্যোগটি খুবই ভাল। রাইপুরের মতো জেলার আরও কয়েকটি ব্লকও এই পদক্ষেপ করছে। এতে প্রশাসনিক কাজে নিসন্দেহে দ্রুততা আসবে।”

Advertisement

উল্লেখ্য, প্রযুক্তির ব্যবহার করে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা গত কয়েক বছর ধরেই শুরু করেছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। বছর খানেক আগেই বাঁকুড়া ১ ব্লক প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ‘বায়োমেট্রিক অ্যাটেন্ডেন্স’ শুরু করে। এই প্রক্রিয়ায় দফতরে কর্মীদের আসা-যাওয়া অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। ওই ব্লকের বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বায়োমেট্রিক অ্যাটেন্ডেন্স পদ্ধতির জেরে কর্মসংস্কৃতির হাল ফিরেছে। কর্মীরা এখন নির্দিষ্ট সময়ে দফতরে আসেন।’’

প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হওয়ায় রাইপুর ব্লকেও প্রশাসনিক কাজের গতি বাড়বে বলেই জানাচ্ছেন বিডিও দীপঙ্কর দাস। তাঁর কথায়, ‘‘বিশেষ কোনও বিষয়ে আলোচনার জন্য আলাদা করে বৈঠক ডেকে প্রধানদের ব্লক অফিসে তলব করতে হচ্ছে না। ১০ মিনিটের মধ্যে সমস্ত প্রধানরা নিজের পঞ্চায়েত থেকেই বিডিওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন।’’ বিডিও জানান, তাঁরা হিসেব করে দেখেছি ওয়াইফাই কানেকশনের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া চালাতে বছরে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হবে। অন্যদিকে সারা বছরে যত বৈঠকের আয়োজন করা হত তাতে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়ে যেত প্রশাসনের। ফলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনার ব্যবস্থা করায় কাজে যেমন গতি বেড়েছে, তেমনই আর্থিক সাশ্রয়ও হচ্ছে বলেই মত তাঁর।

এই নয়া পদ্ধতি চালু হওয়ায় ব্লক অফিসে ঘন ঘন ছুটে আসা থেকে রেহাই পেয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধানরা। রাইপুর ব্লক অফিস থেকে মেলাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত ও সোনাগাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। মেলাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান রাজকুমার সিংহ বলেন, “যে দিন ব্লক অফিসে যেতাম সে দিন পঞ্চায়েতের কাজ আর দেখাশোনার সুযোগ থাকত না। ভিডিও কনফারেন্স চালু হওয়ায় এখন ব্লক অফিসে যাতায়াত কমেছে। পঞ্চায়েতে সময় বেশি দিতে পারছি।”

একই কথা জানান সোনাগাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মথুরানাথ মাহাতোও। রাইপুরের ঢেক্যো গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ব্লক অফিসের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। ওই পঞ্চায়েতের প্রধান সন্ধ্যামণি সোরেন বলেন, “সব সময় পঞ্চায়েতে গাড়ি থাকে না। ব্লক অফিসে বৈঠক করতে তাই বাস অথবা কারও মোটরবাইকেই যেতাম। তাতে সমস্যা হতো। তবে এ বার পঞ্চায়েতে থেকেই বি়ডিও-র সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে।’’

গত একমাস হল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথাবার্তা শুরু হয়েছে এই ব্লকে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়ে গিয়েছে বলেও জানাচ্ছেন বিডিও। রাইপুরের পাশাপাশি বাঁকুড়ার ওন্দা ও বাঁকুড়া ১ ব্লকেও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থা চালুর কাজ শুরু হয়েছে। ওন্দা ব্লকে এই কাজ প্রায় শেষ।

ওন্দার বিডিও শুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতেই ভিডিও কনফারেন্স চালুর কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আমরা আনুষ্ঠানিক ভাবে ভিডিও কনফারেন্স শুরু করতে পারব বলে মনে হচ্ছে।” বাঁকুড়া ১ ব্লকেও কয়েক মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া চালু হবে বলে জানিয়েছেন বিডিও সুপ্রভাতবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন