সময়ের মধ্যেই অধিকাংশ বোর্ড গঠন

হাতে গোনা কয়েকটি পঞ্চায়েত ও একটি মাত্র পঞ্চায়েত সমিতি বাদ দিলে প্রায় সমস্ত পঞ্চায়েতে ও সমিতিতে বোর্ড গঠন হতে চলেছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ০২:০৪
Share:

ভোটের সময়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে উঠেছিল সন্ত্রাসের অভিযোগ। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, মনোনয়ন পর্ব থেকে নির্বাচন পর্যন্ত সন্ত্রাস চালিয়েছিল তৃণমূল। তবে কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, হাতে গোনা কয়েকটি পঞ্চায়েত ও একটি মাত্র পঞ্চায়েত সমিতি বাদ দিলে প্রায় সমস্ত পঞ্চায়েতে ও সমিতিতে বোর্ড গঠন হতে চলেছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই।

Advertisement

জেলার ১৭০টি পঞ্চায়েত। চলতি অগস্টের মধ্যে বোর্ড গঠন হয়ে যাবে ১৫৭টিতে। জেলায় কুড়িটি পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে। উনিশটিতে বোর্ড গঠন হবে সেপ্টেম্বর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে। প্রশাসন সূত্রের খবর, পুরুলিয়ায় গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ১৬ থেকে ২৯ অগস্ট। পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গঠন করতে হবে ৩১ অগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে সময় দেওয়া হয়েছে ১০ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সূত্রের খবর, বিভিন্ন ব্লকের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যাচ্ছে, জেলায় ২৯ অগস্টের মধ্যেই গ্রামপঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে।

বস্তুত পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বে শাসকদলের বিরুদ্ধে সব চেয়ে বেশি সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল কাশীপুর ব্লকে। তাঁদের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি বলে অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস। দেখা যাচ্ছে, সেই কাশীপুর ব্লকেই সব থেকে বেশি পঞ্চায়েতে প্রশাসক নিয়োগ হতে চলেছে। ব্লকের ১৩টির মধ্যে ৭টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। আর কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির পাঁচটি আসনে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে। তাই গঠন হচ্ছে না পঞ্চায়েত সমিতিও। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বোর্ড গঠন হচ্ছে না কাশীপুরের বেকো, রাঙামাটি-রঞ্জনডি, কালীদহ বড়রা, হদলদা-উপড়রা, কাশীপুর আর গৌরাঙ্গডি পঞ্চায়েতে।

Advertisement

কবে কোথায়

• রঘুনাথপুর ১: ২৭-২৯ অগস্ট

• রঘুনাথপুর ২: ২৭-২৮ অগস্ট

• সাঁতুড়ি: ২৭-২৯ অগস্ট

• পাড়া: ২৮-২৯ অগস্ট

• কাশীপুর: ২৭ অগস্ট

• নিতুড়িয়া: ২৭-২৯ অগস্ট

• বরাবাজার: ২৭-২৯ অগস্ট

• মানবাজার ১: ২৭-২৯ অগস্ট

• মানবাজার ২: ২৭-২৮ অগস্ট

• আড়শা: ২৭ অগস্ট

• পুরুলিয়া ১: ২৭ অগস্ট

• পুরুলিয়া ২: ২৭-২৯ অগস্ট

• পুঞ্চা: ২৭-২৮ অগস্ট

• ঝালদা ১: ২৭-২৯ অগস্ট

• হুড়া: ২৭-২৮ অগস্ট

• জয়পুর: বিজ্ঞপ্তি হয়নি

• ঝালদা ২: বিজ্ঞপ্তি হয়নি

• বান্দোয়ান : বিজ্ঞপ্তি হয়নি

জেলার অন্য জায়গার মধ্যে বোর্ড গঠন হচ্ছে না রঘুনাথপুর ১ ব্লকের আড়রা পঞ্চায়েত, সাঁতুড়ি ব্লকের সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত, আড়শা ব্লকের বেলডি পঞ্চায়েত, নিতুড়িয়ার দীঘা পঞ্চায়েত আর পাড়ার ঝাপড়া-জবরড়া ১ পঞ্চায়েতে। এই তেরোটি পঞ্চায়েতের সর্বত্রই কোথাও একটি, কোথাও একাধিক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন তৃণমূলের প্রার্থীরা।

প্রশাসন সূত্রের খবর, যে হেতু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসনের ক্ষেত্রে কী হবে, সেই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট এখনও রায় দেয়নি, তাই ওই তেরোটি পঞ্চায়েত ও একটি সমিতিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বোর্ড গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের দেওয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী আপাতত সমস্ত পঞ্চায়েত ও সমিতিরে দৈনন্দিন কাজকর্ম দেখভাল করছেন সংশ্লিষ্ট বিডিওরা। যে সমস্ত পঞ্চায়েত ও সমিতিতে বোর্ড গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না সেগুলিতে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা আমরা হাতে পেয়ে যাব।”

তবে ঘটনা হল, বোর্ড গঠন নিয়ে যেমন কৌতূহল রয়েছে জেলাবাসীর, তেমনই কৌতূহল রয়েছে ত্রিশঙ্কু সমিতিগুলি নিয়েও। নির্বাচনে জেলার চল্লিশ শতাংশ পঞ্চায়েত সমিতিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কোনও দল। এই পরিস্থিতিতে কুড়িটি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে আটটিতে কারা বোর্ড গঠন করবে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। ওই সমিতিগুলির মধ্যে আবার বেশির ভাগ জেলার জঙ্গলমহল এলাকার। রয়েছে বরাবাজার, বাঘমুণ্ডি, আড়শা, ঝালদা ১, ঝালদা ২, জয়পুর, পুরুলিয়া ২ আর পাড়া। এর মধ্যে বরাবাজার, পুরুলিয়া ২, আড়শা, জয়পুর আর পাড়ায় প্রায় সমান আসন পেয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি। ঝালদা ১, ঝালদা ২ এবং বাঘমুণ্ডিতে ভাল সংখ্যক আসন কংগ্রেস পেয়েছে। বোর্ড গঠনে কোন দল কাকে সমর্থন করবে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।

তবে পরিসংখ্যানের নিরিখে এটা অন্তত স্পষ্ট, যে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় থাকা বেশির ভাগ সমিতিগুলিতে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের সমর্থন না পেলে বোর্ড গঠন করা সম্ভব নয় তৃণমূল বা বিজেপির পক্ষে।

অন্য দিকে, সিপিএম ও কংগ্রেস— দু’দলই বোর্ড গঠনে তৃণমূল ও বিজেপির থেকে সমান দূরত্ব বজায় রাখার নীতি নিয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘আমাদের দলের ঘোষিত সিদ্ধান্তই হচ্ছে, তৃণমূল ও বিজেপির কাউকেই বোর্ড গঠনে সমর্থন না দেওয়া। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোনও সদস্য সমর্থন দিলে তাঁর বিরুদ্ধে দলগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে প্রয়োজনে কংগ্রেসকে তাঁরা সমর্থন করবেন বলে জানিয়েছেন প্রদীপ।

কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘তৃণমূল বা বিজেপি— বোর্ড গঠনে আমরা কাউকেই সমর্থন করব না। তবে সিপিএমের সমর্থন নিয়ে সমিতি বা পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করতে আমাদের নীতিগত ভাবে আপত্তি নেই।”

আবার তৃণমূল আর বিজেপি দু’দলই দাবি করছে, ত্রিশঙ্কু হয়ে থাকা সমিতিগুলিতে তারাই বোর্ড করবে। তৃণমূলের জেলাসভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘পদ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিজেপির অন্দরে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপির অনেক সদস্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলে যোগ দিতে চাইছেন। জেলার সমস্ত সমিতিতেই তৃণমূলই বোর্ড গড়বে।”

বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বোর্ড গঠনে পুলিশ ও প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা নিলে জেলার অর্ধেকের বেশি সমিতিতে বোর্ড গড়বে বিজেপি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন