পঞ্চায়েত ভোটের আর ক’টা মাস বাকি। তার মধ্যেই দুবরাজপুরের বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে ফের অনাস্থা এল।
পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১১ আসন বিশিষ্ট পঞ্চায়েতের আট সদস্য অনাস্থা প্রস্তাবে সই করে শুক্রবার বিডিওকে জমা দিয়েছিলেন। আস্থা ভোটের পক্ষে থাকা সদস্যদের অভিযোগ, প্রধান বাকি সদস্যদের পাত্তা না দিয়ে একক ভাবে পঞ্চায়েত চালাচ্ছেন। ব্যহত হচ্ছে উন্নয়নের কাজ। দুবরাজপুরের বিডিও বনমালি রায় বলেন, ‘‘সোমবার সই মিলিয়ে দেখার সময় উপস্থিত ছিলেন ছয় সদস্য। আমি ১৫ দিনের মধ্যে তলবি সভা ডাকব।’’
বছর তিনেক আগে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দলেরই বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান শিবঠাকুর মণ্ডলের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন সাত তৃণমূল সদস্য। বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের মোট সদস্য সংখ্যা ১১। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৯টি আসন নিয়ে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। দু’টি আসন পায় সিপিএম। তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে দলের সদস্যরাই অনাস্থা আনায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল তৃণমূল নেতৃত্বকে। সেই অস্বস্তি ঢাকতে বহু চেষ্টায় তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব ভোটাভুটি পর্যন্ত গড়াতে দেননি নেতৃত্ব। সেই অভিযোগই আবার ফিরে এল। এমন কাজকে দলবিরোধী বলে জানাচ্ছেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি হান্নান মোল্লা ও ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্র। তাঁদের দাবি, ‘‘এই বিষয়ে বিন্দুবিসর্গও জানি না।’’
স্থানীয়দের অনেকেই জানাচ্ছেন, এ বার কী হবে জানা নেই। তবে আগের বার নাটক অনেক দূর গড়িয়েছিল। সে বার বিক্ষুব্ধদের অনমনীয় মনোভাব দেখে হস্তক্ষেপ করতে হয় খোদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। সেই সময় দলের তরফে ঠিক করা হয়, ভোটাভুটির প্রয়োজন নেই। এমনিতেই সরিয়ে দেওয়া হবে প্রধান শিবঠাকুর মণ্ডলকে। দলীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে বিক্ষুব্ধ সদস্যেরা ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ভোটাভুটির দিন অনুপস্থিত ছিলেন। তাতে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়।
আগের নিয়ম অনুযায়ী কেউ আর ওই প্রধানের বিরুদ্ধে এক বছর অনাস্থা আনতে পারতেন না। আর ঘটনাচক্রে তারপরই পঞ্চায়েত আইন সংশোধন করে জানানো হয়, আড়াই বছরের আগে কোনও পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধেই অনাস্থা আনা যাবে না। শিবঠাকুরবাবু এটাকেই হাতিয়ার করেন। তারপরেই দল প্রধান পদে ইস্তফা দিতে নির্দেশ দেয় তাঁকে।
তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর, তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং দলের মধ্যে সঙ্ঘাত আরও বাড়তে থাকে। দলের নির্দেশ অগ্রাহ্য করায় দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে তাঁকে। চাপের কাছে নতিস্বীকার করে শেষ পর্যন্ত সরতে হয় তাঁকে। প্রধান হন বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর মৌসুমী বাগদি। তাঁকে সাহায্য করার জন্য ১৬ জনের একটি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়। এ বার মৌসুমীর বিরুদ্ধেই অনাস্থা আনা হল। আড়াই বছর প্রধান পদে থাকার পরই।
পঞ্চায়েত সূত্রেরই খবর, এ বার সই যাঁরা করেছেন, তাঁদের মধ্যে দুই বিরোধী সদস্য (যদিও তাঁরা এখন তৃণমূলে দাবি শাসকদলের) ছাড়া বাকি তৃণমূল সদস্যদের সঙ্গে রয়েছেন প্রাক্তন প্রধান শিবঠাকুর মণ্ডলও। বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মৌসুমীদেবী অবশ্য এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর দাবি, টাকাপয়সা লুঠপাটের জন্যই ফের এই ফন্দি। এর মধ্যে একে অপরের সদস্যকে অপহরণের অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে দুই শিবির।
ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্র বলছেন, ‘‘দলবিরোধী এই কাজ সমর্থন করছি না। যাঁরা এ কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’’