নির্বিঘ্নে ভোট করানোই চ্যালেঞ্জ

রাঢ়বঙ্গের দুই জেলা পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় পুরভোটে পুলিশের বিশেষ নজর থাকছে পুরুলিয়া ও সোনামুখী শহরে। একদিকে প্রচার চলাকালীন একের পর এক হামলায় পুরুলিয়া শহরে শান্তিবজায় রাখা পুলিশের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, তৃণমূল বহিরাগতদের সোনামুখীতে ঢুকিয়ে ভোটে সন্ত্রাস চালাতে পারে বলে সিপিএম আগেই অভিযোগ তুলেছিল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৫
Share:

টহল ও তল্লাশি। পুরুলিয়া ও বিষ্ণুপুরে। শুক্রবারের নিজস্ব চিত্র।

রাঢ়বঙ্গের দুই জেলা পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় পুরভোটে পুলিশের বিশেষ নজর থাকছে। পুরুলিয়া ও সোনামুখী শহরে। একদিকে প্রচার চলাকালীন একের পর এক হামলায় পুরুলিয়া শহরে শান্তিবজায় রাখা পুলিশের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, তৃণমূল বহিরাগতদের সোনামুখীতে ঢুকিয়ে ভোটে সন্ত্রাস চালাতে পারে বলে সিপিএম আগেই অভিযোগ তুলেছিল। শুক্রবার সেখানে তৃণমূলের ৩৭ জনকে বহিরাগত সন্দেহে বামপন্থী কর্মীরা আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পরে সিপিএমের আশঙ্কা সত্যি হল বলে অনেকে মনে করছেন। এর ফলে এই শহরে নির্বিঘ্নে ভোট করানোটা পুলিশের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

Advertisement

প্রচার চলাকালীন পুরুলিয়ার একাধিক ওয়ার্ডে বেশ কয়েকটি অশান্তির ঘটনা ঘটায় শনিবারের ভোটগ্রহণ ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শহরে ঢোকার একাধিক রাস্তায়, বস্তি এলাকা ও উত্তেজনাপ্রবণ ওয়ার্ডগুলিতে পুলিশি টহল শুরু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড যেমন ৫, ১১, ১৬, ১৭, ১৮ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রকে স্পর্শকাতর হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তবে প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তার মতে, ‘‘আমাদের কাছে শহরের সব ক’টি ওয়ার্ডই স্পর্শকাতর।’’

শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজাতে পুলিশ নিরাপত্তার বিষয়টিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছে। জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘আমরা এইচআরএফএস, কিউআরটি এ রকম কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছি। এর পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডেই পুলিশি টহল জারি রয়েছে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এইচআরএফএস অর্থে হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড, যেখানে একটি বড় গাড়িতে পুলিশের নিজস্ব ওয়্যারলেশ সহ বেশি সংখ্যক পুলিশ বাহিনী থাকবে। কিউআরটি অর্থে ক্যুইক রেসপন্স টিম, এই দলে তুলনামূলক ছোট গাড়িতে বাহিনী থাকবে। ছোট গলির মধ্যেও ওই গাড়ি ঢুকে প্রয়োজনে গোলমালের মোকাবিলা করবে। পাশাপাশি মোটরবাইক মোবাইলও রাখা হচ্ছে। মোটরবাইক মোবাইলে কমান্ডো বাহিনী কাজ করবে। এ ছাড়া কয়েকটি স্পর্শকাতর ওয়ার্ডের জন্য পৃথক বাহিনীও রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোথাও কোন ঘটনা ঘটলে যাতে সেখানে দ্রুত পুলিশ পৌঁছে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রের মতোই রাস্তাঘাটেও আমাদের নজর থাকছে।’’

Advertisement

পুরুলিয়া শহরকে কয়েকটি সেক্টরে ভাগ করেছে প্রশাসন। জেলাশাসক জানিয়েছেন, ‘‘পুরুলিয়ায় ১৪টি, রঘুনাথপুরে ৩টি ও ঝালদায় ৩টি সেক্টর কাজ করবে। সিভিল সেক্টরের পাশাপাশি পুলিশ সেক্টর রাখা হচ্ছে। সিভিল সেক্টরে একজন সেক্টর ইনচার্জ, একজন সেক্টর ম্যাজিষ্ট্রেট, একজন সহকারী সেক্টর ম্যাজিষ্ট্রেট উপস্থিত থাকবেন। পুলিশ সেক্টরে একজন ইনস্পেক্টরের সঙ্গে ছ’জন করে সশস্ত্র পুলিশ মজুত রাখা হবে।’’ তিনি জানান, যেখানে একটি ভোটকেন্দ্র রয়েছে সেখানে দু’জন করে সশস্ত্র পুলিশ, যেখানে দু’টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে সেখানে দু’জন সশস্ত্র পুলিশের পাশাপাশি দু’জন হোমগার্ড বা এনভিএফ রাখা হবে। যেখানে তিনটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে সেখানে তিন জন সশস্ত্র পুলিশ ও তিনজন হোমগার্ড বা এনভিএফ রাখা হচ্ছে। আর কোনও স্কুলে তিন বা তার বেশি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থাকলে চারজন সশস্ত্র পুলিশ ও যতগুলি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ততজন এনভিএফ বা হোমগার্ড রাখা হচ্ছে। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলিকে ক্যামেরার নজরদারি থাকবে। তিনটি বা তার বেশি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থাকলে সেই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলির বাইরে সিসিটিভি, ভিতরে ভিডিও ক্যামেরা রাখা হচ্ছে। অন্য কেন্দ্রগুলিতে কোথাও ডিজিট্যাল ও ভিডিও ক্যামেরাও রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া শহরের হোটেল ও লজে নজরদারি চালানো হচ্ছে।

এ দিকে, পাত্রসায়র ও ইন্দাস থেকে তৃণমূলের বহিরাগত কিছু দুষ্কৃতী সোনামুখী পুরশহরে ঢুকে পড়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বাঁকুড়া জেলার বাম নেতারা। ভোটের দিন অশান্তি এড়াতে সোনামুখীতে কী পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাওয়া হলে জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, “ভোটের দিন উচ্চপদস্থ পুলিশের একাংশ সোনামুখীতে উপস্থিত থাকবেন। বিভিন্ন এলাকায় তাঁরা ভাগ হয়ে থাকবেন। বহিরাগতরা যাতে ভোটের দিন এলাকায় না থাকে তাই ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে, শহরের লজগুলিতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। শহরে ঢোকার মুখে নাকাবন্দি করা হয়েছে।” বিষ্ণুপুরের কাটানধার এলাকায় পুলিশ গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বাঁকুড়া শহরের ৯৮টি বুথ স্পর্শকাতর, বিষ্ণুপুরের ৪৯টি বুথ স্পর্শকাতর এবং সোনামুখীর ২৪টি বুথ স্পর্শকাতর হিসেবে বাছা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন