কয়েন নিয়ে ভোগান্তি, গুজব চলছে ১ টাকাতেও

গঙ্গাজলঘাটির প্রত্যন্ত খাঁটা এলাকার বাসিন্দা নিমাই বাউরির কথায়, “গ্রামে চারটি দোকান রয়েছে। কোনও দোকানদারই কয়েন নিতে চাইছেন না। পাঁচ টাকা, এক টাকা, দু’ টাকা— কোনও কয়েনই চলছে না। সবাই বলছে, কিনতে হলে দশ টাকার জিনিস কিনতে হবে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ১২:৩০
Share:

প্রতীকী ছবি।

এত দিন সমস্যাটা ছিল শুধু দশ টাকার কয়েন নিয়ে। গুজবের জেরে ওই কয়েন বাঁকুড়ার বাজারে প্রায় অচল হতে বসেছিল। এ বারে তার দোসর হয়েছে এক টাকার ছোট কয়েন। গুজবের জেরে হিমসিম খাচ্ছেন ক্রেতা এবং বিক্রেতারা। কোথাও কোথাও আবার শুধু এক টাকা নয়, সমস্ত কয়েন নিয়ে ছড়িয়েছে গুজব।

Advertisement

বাঁকুড়া শহরের স্কুলডাঙার বাসিন্দা সব্যসাচী চক্রবর্তী বলেন, “কিছু দিন আগেও সব ঠিকঠাক ছিল। গত দু’দিন পানগুমটি থেকে বড় গোলদারি দোকান— কোথাওই ছোট এক টাকার কয়েন দিয়ে কেনাকাটা করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। জেলা শহরের বাজার ছাড়িয়ে এই সমস্যা ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামের বাজারগুলিতেও।

গঙ্গাজলঘাটির প্রত্যন্ত খাঁটা এলাকার বাসিন্দা নিমাই বাউরির কথায়, “গ্রামে চারটি দোকান রয়েছে। কোনও দোকানদারই কয়েন নিতে চাইছেন না। পাঁচ টাকা, এক টাকা, দু’ টাকা— কোনও কয়েনই চলছে না। সবাই বলছে, কিনতে হলে দশ টাকার জিনিস কিনতে হবে।’’

Advertisement

মাস খানেক আগেই দশ টাকার কয়েন সংক্রান্ত গুজব নিয়ে পদক্ষেপ করার দাবিতে বিডিও-কে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন বড়জোড়ার বাসিন্দারা। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসন বা ব্যাঙ্ক— কেউই খুব একটা এগিয়ে আসেনি। বড়জোড়ার বাসিন্দা অরুণ সমাদ্দার বলেন, ‘‘অনেক করেও বাজারে দশ টাকার কয়েন ঠিক ভাবে চালু করা গেল না। এ বার দেখছি সমস্ত খুচরো নিয়েই একই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অবিলম্বে সমস্যা মেটাতে প্রশাসন ও ব্যাঙ্কের উদ্যোগী হওয়া দরকার।’’

কেন খুচরো কয়েন নিতে চাইছেন না ব্যবসায়ীরা? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বাঁকুড়ার মাচানতলা মোড়ের এক আনাজ বিক্রেতার কথায়, “হোল-সেলাররা কয়েন নিতে চাইছেন না। ফের কিছু একটা গুজব ছড়িয়েছে বলে ক্রেতারাও কয়েন নিতে চাইছেন না। তাই বাধ্য হয়ে আমরাও কয়েন নিচ্ছি না।”

বাঁকুড়া চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপার কথায়, “বাজারে প্রচুর খুচরো কয়েন এসে পড়েছে। ব্যাঙ্কগুলি সেই কয়েন জমা নিতে চাইছে না। অবিলম্বে বাজার থেকে কিছুটা কয়েন তুলে নিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পদক্ষেপ করা দরকার।”

সমস্যা মেটাতে প্রশাসন কি আদৌ কোনও পদক্ষেপ করবে?

মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা জানান, লিখিত ভাবে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাঁকুড়া জেলার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সঞ্জীব নন্দীর কথায়, “বাজারে খুচরো কয়েন নিয়ে যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে তা আমাদের নজরে রয়েছে। শীঘ্রই ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে বৈঠক করে এর সুরাহা করার বিষয়ে আলোচনা করব।”

একই সমস্যা দেখা দিয়েছে বিষ্ণুপুরেও। সোমবার বিষ্ণুপুরের সাধারণ মানুষ, সংবাদপত্র বিক্রেতা ও চেম্বার অফ কমার্সের প্রতিনিধিরা বিষ্ণুপুর মহাকুমাশাসকের কাছে স্বারকলিপি দেন। তাঁদের অভিযোগ, অধিকাংশ ক্রেতা বিক্রেতা এক টাকা এবং দু’টাকার কয়েন নিতে চাইছেন না। চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক আশীষ দে বলেন, ‘‘গুজবের জেরে সবাই খুবই সমস্যায় পড়েছেন।’’

তবে বিষয়টি নিয়ে মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) কিছু বলতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন