পোড়ো বাড়ি থেকে ফিরবে কি স্বাস্থ্য

সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুদীপ মাহাতো। স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় উঠে আসে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রশান্ত পাল। তার থেকে রইল বাছাই কিছু প্রশ্নোত্তর। • বড় উরমা পঞ্চায়েতের মণ্ডলপাড়ার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটিতে পাকা বাড়ি নেই। খোলা আকাশের নীচে রান্নাবান্না হয়। কেন্দ্রটি কি পাকা বাড়িতে হবে? তাপস মণ্ডল, ডুমারি

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩২
Share:

বলরামপুরের বেলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মালতী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির চেহারা এখন এমনটাই। —প্রদীপ মাহাতো।

• বড় উরমা পঞ্চায়েতের মণ্ডলপাড়ার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটিতে পাকা বাড়ি নেই। খোলা আকাশের নীচে রান্নাবান্না হয়। কেন্দ্রটি কি পাকা বাড়িতে হবে?

Advertisement

তাপস মণ্ডল, ডুমারি

Advertisement

সহ-সভাপতি: অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিজস্ব ঘর না থাকার সমস্যা শুধু এই গ্রামেই নয়, আরও কিছু জায়গায় রয়েছে। এই পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার বিভিন্ন গ্রামে ৭৬টি এ রকম কেন্দ্র তৈরি করা হবে বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জেলা প্রশাসনকেও জানানোও হয়েছে। টাকা পেলেই কাজ শুরু করা হবে।

• দঁড়দা খেলু হেমব্রম বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে একটি জোড় রয়েছে। কিন্তু তার উপরে সেতু না থাকায় বর্ষাকালে হাড়াত, শালডি, চাকুলিয়া, অতেবালা, আরাহাঁসা গ্রামগুলির পড়ুয়াদের বর্ষাকালে সমস্যায় পড়তে হয়। রাস্তাটিও কাঁচা। এই সমস্যা কবে কাটবে?

দশরথ মান্ডি, জুরাডি

সহ-সভাপতি: ওই জোড়ে একটি গার্ডওয়াল ছিল। তা গত বর্ষায় ভেঙে গিয়েছে। তাতেই ওই জায়গায় বর্ষাকালে রাস্তা চলাচলে কিছুটা সমস্যা হয়। সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতই ওই গার্ডওয়াল নির্মাণ করবে। দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়াও হয়ে গিয়েছে। এ বার কাজ শুরু হবে।

• দঁড়দা ও ঘাটবেড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এলাকায় চাষের জল নিয়ে এখনও কিছু সমস্যা রয়েছে। বর্ষাকালে জোড় বা ছোট নদীগুলি দিয়ে জল বয়ে চলে যায়। সেই জল ধরে রেখে কোনও বন্দোবস্ত করা যায় না? তাহলে বিকল্প চাষও হতে পারে।

ফুলচাঁদ হেমব্রম, জুরাডি

বিশ্বনাথ মাহাতো, মাচাটাঁড়

সহ-সভাপতি: গত বছরে দাঁড়দার কুড়নি ও কেঁদরাডি নদীতে দু’টি চেকড্যাম তৈরি হয়েছে। বর্ষার জল ধরে রাখতে ওই এলাকায় আরও পাঁচটি চেকড্যাম তৈরি হবে। দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঘাটবেড়া, যুগিডি ও গিটিংলহর এলাকায়ও তিনটি চেকড্যাম হয়েছে। আরও চারটি হবে।

• ঝালদা অনেকদিন আগেই পুরসভা হিসেবে গড়ে উঠলেও বলরামপুর বিশেষ গুরুত্ব পায়নি। এই বিষয়ে কি কোনও পরিকল্পনা রয়েছে?

নিমাই হালদার, বলরামপুর

সহ-সভাপতি: এই বিষয়টি তো পঞ্চায়েত সমিতির এক্তিয়ারভুক্ত নয়। তবে জেলা প্রশাসনকে এই প্রস্তাবের কথা জানাব।

• বেলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মালতী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি অনেকদিন ধরেই বেহাল। এলাকা ছাড়াও লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের একাধিক গ্রামের মানুষ এখানে চিকিৎসা পরিষেবা পেতেন। দশ শয্যার যে ইন্ডোর ছিল সেটাও কি ফের চালু করা যায় না?

বিশ্বনাথ লোহার, মালতী

সহ-সভাপতি: এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি সত্যিই অনেক দিন ধরে বেহাল। বলরামপুর সদরে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি আগে কেমন ছিল তা এলাকার মানুষজন জানেন। আমরা সেটির হাল ফেরানোর দিকে নজর দিয়েছিলাম। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র জেলার একমাত্র ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা গ্রামীণ হাসপাতাল হিসেবে সেরার সম্মান পেয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর-সহ সবার মিলিত প্রচেষ্টাতেই এটা সম্ভর। মালতি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির অবস্থাও আমাদের নজরে রয়েছে। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী বলরামপুরেরই বিধায়ক। তাঁর দফতর থেকে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল ফেরানোর জন্য ২০ লক্ষ টাকার একটা প্রস্তাব দিয়েছি। টাকা পেলেই কাজ শুরু হবে।

• বলরামপুর সদরে নিকাশি একটা বড় সমস্যা। নালা বুজে যাবার পরে রাস্তার উপর দিয়ে নোংরা জল বইতে থাকে। বর্ষার সময়ে বাসস্ট্যান্ড থই থই করে। সমাধানের জন্য কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে?

মহম্মদ মজহর আনসারি, বলরামপুর

সহ-সভাপতি: বলরামপুরে নিকাশি ব্যবস্থা আগেও খুব ভাল ছিল না। বেশ কয়েকটি রাস্তার ধারে নিকাশি নালা উপচে জল উঠে আসত। সেগুলি সংস্কার করে সমস্যা কিছুটা কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে। আরও কয়েকটি এলাকা আমাদের নজরে রয়েছে। তার মধ্যে সদরও রয়েছে। বিষয়টিও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে টাকা পেলে কাজ শুরু হবে।

• বলরামপুরে মেয়েদের জন্য পৃথক একটি জিমন্যাসিয়াম প্রয়োজন। এলাকায় অনেক ক্রীড়া প্রতিভা রয়েছে। সীমিত পরিকাঠামোয় অনুশীলন করে তারা রাজ্যস্তরে সাফল্যও পায়। খেলার জন্য ঘেরা মাঠ, সুইমিং পুল হলেও ভাল হয়।

শুক্লা কুণ্ডু, গোশালা রোড

সহ-সভাপতি: আমরা সাধ্যমত খেলাধুলায় সহায়তা করার চেষ্টা করি। বিভিন্ন ক্লাবকেও খেলায় উৎসাহ দিতে অনুদান দেওয়া হয়। তবে মেয়েদের আলাদা কোনও জিমন্যাসিয়াম এখনও নেই। বলরামপুরে একটিই মাত্র গার্লস স্কুল। আরও একটি গার্লস স্কুল তৈরি হলে সেখানে পৃথক জিমন্যাসিয়াম গড়ার প্রস্তাব রাখব। কলেজের মাঠটিও ঘেরার চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে এই কাজ পঞ্চায়েত সমিতির একার পক্ষে সম্ভব নয়।

• কুমারী কাননকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায় না? কাছেই অযোধ্যা পাহাড়। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভাল।

দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়, কালীতলা,

সহ-সভাপতি: আমাদের ভাবনায় রয়েছে পর্যটন কেন্দ্রের ব্যাপারটা। কাজও চলছে।

• বলরামপুর দিয়ে ৩২ নম্বর জাতীয় সড়ক চলে গিয়েছে। তার উপরে দিন দিন চাপ বাড়ছে। পাশেই জনপদ। যে কোনও দিন বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। বাইপাস গড়ে তোলা দরকার।

অরিজিত পাল, বলরামপুর

সহ-সভাপতি: বাইপাস সত্যি দরকার। কিন্তু এই কাজ আমাদের এক্তিয়ারে পড়ে না। প্রশাসনের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।

• ডাকবাংলো ময়দান একটি স্কুলের অধীনে রয়েছে। অদূরেই ইটভাটা। যত্রতত্র পার্থেনিয়াম গজিয়ে উঠছে। সংস্কারের জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে কি?

স্বপন মুখোপাধ্যায়, বলরামপুর

সহ-সভাপতি: বিষয়টি ভাবনার মধ্যে রইল।

• বলরামপুরের বিভিন্ন স্থানে পুরাতত্ত্বের একাধিক নিদর্শন খোলা মাঠে বা গাছের তলায় পড়ে রোদে-জলে নষ্ট হচ্ছে। মিউজিয়ম গড়ে তোলা যায় না?

শিবশঙ্কর সিংহ, বলরামপুর

সহ-সভাপতি: এটা এক কথায় সম্ভব নয়। আমরাও বিষয়টি ভেবেছিলাম। কিন্তু মূর্তিগুলি স্থানীয় মানুষজন পুজো করে আসছেন অনেক দিন ধরে। বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে।

• ব্লকের মালতী-বড়চাতরমা, গড়গা-ভাঙ্গিডির মতো অনেক রাস্তাই কাঁচা। স্থানীয় মানুষজন খুবই সমস্যায় থাকেন। এগুলিকে পাকা করে যাত্রী পরিবহণ চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে কি?

অবনী সিংহ পাতর, বড়চাতরমা

সহ-সভাপতি: ব্লকের বেশ কিছু রাস্তা পাকা বা ঢালাই করা হবে বলে ঠিক হয়ছে। যেমন মালতি-বড়চাতরমা রাস্তা ঢালাই হবে। গড়গা-ভাঙ্গিডি রাস্তাটির কিছুটা কাজ হয়েছ। অযোধ্যা পাহাড়ের উপর থেকে কলাবেড়া জনপদটিকেই সমতলে নামিয়ে এনেছি। বাড়ি করে দেওয়া হয়েছে। গ্রামে ঢালাই রাস্তাও হয়েছে। অন্য রাস্তাগুলি করে মুখ্যমন্ত্রীর গতিধারা প্রকল্প কাজে লাগিয়ে যাত্রী পরিবহন চালু করা যায় কি না সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

• বলরামপুরে কোনও কমিউনিটি হল নেই। যে হলটি ছিল তা এখন পুলিশ ক্যাম্প। একটি পৃথক মঞ্চ বা হল গড়ার কোনও পরিকল্পনা রয়েছে কি?

মায়া দাস (বিশ্বাস), বলরামপুর

সহ-সভাপতি: বলরামপুর ক্ষণপ্রভা নামে যে কমিউনিটি হলটি ছিল সেখানে বর্তমানে পুলিশ শিবির রয়েছে। এটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। আমাদের কিছু করার নেই। তবে ওই হলটির কাছাকাছি জেলা পরিষদের জমি রয়েছে। সেখানে হল গড়া নিয়ে প্রথামিক আলোচনা হয়েছে। আমরা প্রস্তাব পাঠাব।

• বলরামপুর লাক্ষা শিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখানে লাক্ষা ক্লাস্টার গড়ে তোলার কথা ঘোষণা হয়েছে। জমি চিহ্ণিত হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ছ’ বছর ধরে কাজ হয়নি। প্রকল্পটি কোন স্তরে আটকে রয়েছে?

রঞ্জিত মাঝি, বলরামপুর

সহ-সভাপতি: এই প্রকল্প মুখ্যমন্ত্রী নিজে ঘোষণা করেছেন। বলরামপুরে রথতলাতে জমিও চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। ব্লকে একটি বৈঠক হয়েছে। এটা শিল্প দফতর করছে বলেই জানি। খোঁজ নেব। দ্রুত যাতে কাজ শেষ হয় প্রশাসনকে তার জন্য বলব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন