Durga Puja 2022

তরবারি ও গীতা নিয়ে দীক্ষা নিতেন বিপ্লবীরা, বাঁকুড়ার অম্বিকানগরের পুজো জীবন্ত ইতিহাস

কথিত আছে, এই রাজবাড়ির দুর্গা মন্দিরের সামনে এক হাতে তরবারি এবং অন্য হাতে গীতা নিয়ে মন্ত্রগুপ্তির শপথ নিয়েছিলেন বহু বিপ্লবীই। সেই রাজবাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:৪৭
Share:

অম্বিকানগর রাজবাড়ির সেই দুর্গাদালান। — নিজস্ব চিত্র।

এক সময় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল বাঁকুড়ার অম্বিকানগরের রাজবাড়ি। এই রাজবাড়ির রাজা রাইচরণ ধবলদেও স্বয়ং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। রাজবাড়িতে আনাগোনা ছিল বারীন্দ্রনাথ ঘোষ, ভূপেশ দত্ত, প্রফুল্ল চাকীর মতো বিপ্লবীদের। কথিত আছে, এই রাজবাড়ির দুর্গা মন্দিরের সামনে এক হাতে তরবারি এবং অন্য হাতে গীতা নিয়ে মন্ত্রগুপ্তির শপথ নিয়েছিলেন বহু বিপ্লবীই। সেই রাজবাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত। কিন্তু অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের স্মৃতি আঁকড়ে রাজবাড়ির দুর্গাদালানে আজও হয় দেবীর আরাধনা। শারদোৎসবের সময় এই পুজোকে ঘিরে আবেগে ভাসেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

এক সময় অম্বিকানগরের রাজা রাইচরণ প্রত্যক্ষ ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনে। মূলত তাঁর উদ্যোগেই ছেঁদাপাথর এলাকায় একটি সুড়ঙ্গের মধ্যে গড়ে ওঠে বিপ্লবীদের অস্ত্র তৈরি এবং অস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেই কেন্দ্রে যাতায়াত ছিল বারীন্দ্রনাথ ঘোষ, প্রফুল্ল চাকী, ভূপেশ দত্তের মতো বিপ্লবীদের। কথিত আছে, অম্বিকানগর রাজবাড়ি থেকে প্রতি রাতে রাইচরণ যেতেন সেই গোপন ডেরায়। নিজের হাতে পৌঁছে দিতেন অস্ত্রশস্ত্র এবং রসদ। গুপ্তচরের মাধ্যমে রাজার এই বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড জানতে পারে ব্রিটিশ পুলিশ। এর পর তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়। আলিপুর বোমা মামলায় কিছু দিন কারাবাসের পর প্রমাণের অভাবে মুক্ত হন রাইচরণ। সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে অম্বিকানগর রাজপ্রাসাদ। সেই প্রেক্ষাপটেই পুজো এলে দুর্গাদালানে বেজে ওঠে ঢাক, শঙ্খ। আজও পুজো এলে আবেগে ভাসেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বিপ্লবীর স্মৃতিচিহ্ন বইছে অম্বিকানগর রাজবাড়ি। — নিজস্ব চিত্র।

রাজপরিবারের বর্তমান সদস্য গৌরীশঙ্কর নারায়ণ দেও বলেন, “এক সময় আমাদের বিশাল রাজত্ব ছিল। রাজত্বের আয়ে দুর্গাপুজার জেল্লা ছিল অনেক বেশি। রাজবাড়ির পুজো হওয়ায় এই পুজোর অনেক ব্যাতিক্রমী রীতি-রেওয়াজ রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে খরচও অনেক বেশি হয়। এখন পুজোতে গ্রামবাসীরা কিছুটা সাহায্য করেন। তা ছাড়া রাজ্য সরকারের অনুদানও পেয়ে থাকি। বাকি খরচ আমাদেরই চালাতে হয়।’’ বিপ্লবী রাজার এই পুজোকে ঘিরে এলাকার মানুষের আবেগ তীব্র। পুজো দেখতে শুধু এলাকার মানুষ নয়, দূরদূরান্ত থেকেও আসেন অনেকে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন