বন্যার মারে ভিটেছাড়া কর্তারা, পুজো নেই গ্রামে

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কুঁয়ে নদী তীরবর্তী ওই গ্রামে এক সময় প্রায় ৬০টি পরিবারের বাস ছিল। ছিল ঘোষেদের একটি পারিবারিক এবং ঘোষ-মণ্ডল পরিবারের একটি বারোয়ারি দুর্গোপুজো।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

লাভপুর শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:০৯
Share:

মন খারাপের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গ্রামের মণ্ডপ। ছবি: কল্যাণ আচার্য

পড়ে রয়েছে কাঠামো। ভগ্নপ্রায় পুজো মণ্ডপ। গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন পুজো কর্তারা। বন্ধ হয়ে গিয়েছে পুজো। তাই লাভপুরের পারআবাদ গ্রামের বাসিন্দাদের পুজো কাটে নিরানন্দে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কুঁয়ে নদী তীরবর্তী ওই গ্রামে এক সময় প্রায় ৬০টি পরিবারের বাস ছিল। ছিল ঘোষেদের একটি পারিবারিক এবং ঘোষ-মণ্ডল পরিবারের একটি বারোয়ারি দুর্গোপুজো। ১৯৮৫ সালের বন্যায় ওই গ্রাম ছারখার হয়ে যায়। সেই থেকে প্রায় প্রতি বছরই বন্যায় গৃহস্থালি হারিয়ে বিপন্ন হয়ে পড়ে বহু পরিবার। প্রকৃতির সঙ্গে ধারাবাহিক অসম লড়াইয়ে মনোবল হারিয়ে বাসিন্দারা একে একে গ্রাম ছাড়তে শুরু করেন। বছর আটেক আগে গ্রাম ছেড়ে চলে যান ঘোষ পরিবারের সদস্যেরা। তার পর থেকেই তাঁদের পুজোটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে বারোয়ারি পুজো কমিটির কর্মকর্তারাও গ্রাম ছেড়ে যান। সেই বন্ধ বারোয়ারি পুজোটিও।

পুজো বন্ধ হয়ে গেলেও গ্রামে পড়ে রয়েছে সেই কাঠামো। পড়ে রয়েছে মণ্ডপ। সেই সব দেখেই বিষণ্ণ হয়ে পড়ে এখনও পারআবাদ গ্রামে টিঁকে থাকা কয়েক ঘর গ্রামবাসীর মন। বর্তমানে ওই গ্রামে রয়েছে মাত্র ১০টি পরিবার। অধিকাংশই দিনমজুর। যৎসামান্য জমি রয়েছে কয়েক জনের। ইচ্ছে থাকলেও নিজেদের উদ্যোগে পুজো আবার চালু করার মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই। তাঁদেরই কয়েক জন সঞ্জয় মণ্ডল, সুখেন মেটেরা বলছেন, ‘‘পুজো প্রচলন করা দূরের কথা, অন্য কোথাও চলে যাওয়ার সামর্থ্যও নেই বলে প্রকৃতি মার খেয়েও এখানে পড়ে রয়েছি!’’ এ গ্রামের বহু দুর্গাপুজোর সাক্ষী ৮৫ বছরের সুকুমার মণ্ডল, ৭২ বছরের নারায়ণ মণ্ডল, ৬০ বছরের নিদ্রা মেটে। পুজো আর না হওয়ার আক্ষেপ ঝরে পড়ে তাঁদের কণ্ঠে। বললেন, ‘‘আগে ঢাকে কাঠি পড়লেও মনে হতো মা আসছেন। আত্মীয়স্বজনে গ্রাম জমজমাট হয়ে উঠত। এখন মনটা খারাপ হয়ে যায়। পুজো দেখতে অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি চলে যায়। গ্রাম পুরো ঝিমিয়ে পড়ে।’’

Advertisement

তবে, সব থেকে মন খারাপ কচিকাঁচাদের। নবম শ্রেণির ছাত্র অতীন মণ্ডল, সপ্তম শ্রেণির তিথি মণ্ডলদের কথায়, ‘‘যখন গ্রামে পুজো হতো, তখন প্রতিদিন অনেক রাত পর্যন্ত আনন্দ করতে পারতাম। সকাল থেকে রাত কী ভাবে যে কেটে যেত, বুঝতেই পারতাম না। এখন বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে পুজো দেখতে যেতে হয়। তাই সব দিন যাওয়া হয় না। যেদিন যাওয়া হয়, সেদিনও সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসতে হয়।’’ গ্রামের বধূ চন্দনা মণ্ডল, রিনা বাগদি, চায়না মণ্ডলেরা জানান, আগে পুজোর ক'টা দিন দারুণ আনন্দে কাটত। মাকে বরণ করা থেকে সিঁদুর খেলা সবেতেই তাঁরা অংশ নিতেন। এখন পুজো এলেই সেই সব কথা ভেবে তাঁদের মন খারাপ হয়ে যায়।

‘‘প্রথম থেকে পুজো না থাকলে মন বুঝত। কিন্তু মাঝপথে পথে পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়াটা কি মন কখনও মানে?’’—প্রশ্ন চন্দনাদের। উত্তর জানা নেই তাঁদেরও। সেই মন খারাপের সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে গ্রামের মণ্ডপ আর কাঠামো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন