West Bengal Panchayat Election 2023

ভোটদানের সুযোগ মিলবে তো!

বাম আমল থেকে বিষ্ণুপুর মহকুমার এই চারটি ব্লক ‘রাজনৈতিক সন্ত্রাস’ কবলিত হিসেবে পরিচিত। এক সময়ে ব্লকগুলিতে একচ্ছত্র রাজনৈতিক আধিপত্য ছিল সিপিএমের।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর গুপ্ত

বাঁকুড়া, ইন্দাস শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২৩ ০৯:৪৪
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ কবে পঞ্চায়েত ভোট দিয়েছেন, মনে পড়ে না। এ বারেও দিতে পারবেন কি না, তা সময়ই বলবে—আক্ষেপ ঝরে পড়ছিল পাত্রসায়রের এক প্রৌঢ়ের কথায়।

Advertisement

তড়িঘড়ি পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হলেও মনোনয়ন-পর্বের প্রথম দিন থেকে জেলায় বিরোধী দলগুলির সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে। দু’দিন শেষে দেখা যাচ্ছে, মনোনয়ন জমা দেওয়ার নিরিখে প্রথমে রয়েছে বিজেপি। তার পরে, সিপিএম। আজ, সোমবার থেকে তৃণমূলের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর কথা। তবে প্রথম দু’দিনে জেলায় পঞ্চায়েত স্তরে প্রায় দেড় হাজার ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে তিনশোর বেশি মনোনয়ন জমা পড়লেও পাত্রসায়র, কোতুলপুর, ইন্দাস ও জয়পুর ব্লকে একটিও মনোনয়ন জমা পড়েনি।

বাম আমল থেকে বিষ্ণুপুর মহকুমার এই চারটি ব্লক ‘রাজনৈতিক সন্ত্রাস’ কবলিত হিসেবে পরিচিত। এক সময়ে ব্লকগুলিতে একচ্ছত্র রাজনৈতিক আধিপত্য ছিল সিপিএমের। বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনে ব্লকগুলির বহু পঞ্চায়েতে বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে হত না বলে অভিযোগ তুলত তৃণমূল। রাজনৈতিক হানাহানিও ঘটেছে।

Advertisement

রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরেও ছবিটা বিশেষ বদলায়নি বলে দাবি। এখন তবে অভিযোগের তির ঘুরে গিয়েছে তৃণমূলের দিকে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই চারটি ব্লক-সহ বিষ্ণুপুর মহকুমার কোনও ব্লকেই ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের আসন দখল করে তৃণমূল। বিরোধীদের মনোনয়ন দেওয়া আটকাতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্লক অফিসে দুষ্কৃতী জমায়েত করে সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। তৃণমূল যদিও তাঅস্বীকার করেছিল।

এ বারেও ওই চার ব্লকে শাসকদলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-র অভিযোগ, শনিবার পাত্রসায়র ব্লকে বিজেপি প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে গেলে বোমা ছোড়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ যদিও মানেনি তৃণমূল। জয়পুর, কোতুলপুর ও ইন্দাস ব্লকেও বিরোধীদের মনোনয়ন দেওয়া রুখতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘চাপা সন্ত্রাস’ চালানোর অভিযোগ উঠছে। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিল্লেশ্বর সিংহ জানান, আজ, সোমবার পাত্রসায়রে দল বেঁধে বিজেপি প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে যাবেন। সঙ্গে থাকার কথা দলের সাংসদ, বিধায়কদের। তিনি বলেন, “আমরা একটি আসনও বিনা লড়াইয়ে তৃণমূলকে ছাড়ব না। পাত্রসায়র, ইন্দাস, জয়পুর ও কোতুলপুর, সর্বত্র লড়াই হবে। আমাদের প্রার্থীরা তৈরি। পুলিশকে ইমেল করে আমরা নিরাপত্তা দিতে বলেছি।” সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতিরও অভিযোগ, “ইন্দাসে আমাদের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা করতে গেলে ব্লক অফিস থেকে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। জোর-জুলুম করে পঞ্চায়েত দখলের এই চেষ্টার বিরুদ্ধে আমরা সর্বশক্তি দিয়ে লড়ব।”

বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগ যদিও অস্বীকার করেছেন শাসকদলের সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতৃত্ব। পাত্রসায়রের তৃণমূল নেতা তথা যুব তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুব্রত দত্ত, জয়পুর ব্লক সভাপতি কৌশিক বটব্যাল, ইন্দাস ব্লক সভাপতি সেখ হামিদ ও কোতুলপুর ব্লক সভাপতি তরুণ নন্দীগ্রামীদের একযোগে দাবি, এলাকায় বিজেপি বা সিপিএমের কোনও সংগঠন নেই। তাই তারা পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী দিতে না পেরে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছেন। তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে। কোথাও কাউকে মনোনয়ন দিতে বাধা দেওয়ার প্রশ্নই নেই। দলের কেউ যদি এমনটা করে, পদক্ষেপ হবে। তবে বিরোধীরা নিজেদের সাংগঠনিক ব্যর্থতার দায় এ ভাবে তৃণমূলের উপরে চাপালে মানুষ তা মেনে নেবেন না।”

জেলা পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নির্দেশমতো মনোনয়ন জমা দেওয়ার কেন্দ্রগুলিতে পুলিশ নিরাপত্তা বলয় গড়েছে। জেলায় এখনও কোথাও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। কোথাও কিছু ঘটলে পুলিশ দ্রুত তা মোকাবিলায় তৎপর রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন