জঙ্গল ধ্বংস করে খনি নয়, হুঁশিয়ারি গাঁওতার

খয়রাশোল ব্লকের গঙ্গারামচক মৌজায় পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম খোলামুখ কয়লাখনি তৈরির জন্য ১০১ হেক্টর বনভূমি সাফাইয়ের কাজে হাত দিয়েছে। কয়লাখনির জন্য বিস্তীর্ণ বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খয়রাশোল শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৯ ০০:০১
Share:

প্রতীকী ছবি।

জঙ্গল ধ্বংস করে কয়লাখনি নয়। সেটা করতে হলে তাঁদের জীবন জীবিকা সুরক্ষিত রেখেই করতে হবে। জোড়া শর্ত সামনে রেখে বৃহস্পতিবার বিশাল জমায়েত করে খয়রাশোলের বিডিওকে স্মারকলিপি দিল আদিবাসীদের দুটি সংগঠন, আদিবাসী গাঁওতা ও বীর বানচাও কমিটি।

Advertisement

খয়রাশোল ব্লকের গঙ্গারামচক মৌজায় পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম খোলামুখ কয়লাখনি তৈরির জন্য ১০১ হেক্টর বনভূমি সাফাইয়ের কাজে হাত দিয়েছে। কয়লাখনির জন্য বিস্তীর্ণ বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। এতে তাঁদের জীবন জীবিকায় আঁচ পড়বে, এই আশঙ্কায় ভুগছেন প্রস্তাবিত খনি এলাকা সংলগ্ন বাস্তবপুর, সগড়ভাঙ্গা, বেলডাঙা, ভাদুলিয়া, গঙ্গারামচক, দেবগঞ্জ এলাকার আদিবাসীরা। বৃহস্পতিবার ওই জঙ্গল কাটা বন্ধ করার আর্জি নিয়ে খয়রাশোলে বিশাল জমায়েত বুঝিয়ে দিল আলোচনা না করে কাজ হাত দিলে সমস্যা রয়েছে।

এ দিন খয়রাশোলের গোষ্টমেলার মাঠে আদিবাসীদের জমায়েত হবে আগাম খবর ছিল প্রশাসনের কাছে। সেই জন্য প্রস্তুত ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। খয়রাশোলের ব্লক ও জেলার অন্য প্রান্ত থেকেও সংগঠনের সদস্যরা এসেছিলেন। বেলা ২টো নাগাদ মিছিল করে বিডিও অফিসে গিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। নেতৃত্বে ছিলেন আদিবাসী নেতা সুনীল সরেন। তবে খনির জন্য জঙ্গল ধ্বংস ছাড়াও, জীবিকা সুরক্ষিত রাখা, এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট, রাস্তাঘাটের উন্নতি, জাহের থান সংস্কার সহ আদিবাসীদের সঙ্গে বঞ্চনার নানা অভিযোগ তুলে ধরেন আদিবাসীরা।

Advertisement

২০১৪ সালে কয়লার ব্লক-বণ্টন বাতিল হওয়ার আগে খয়রাশোলের কৃষ্ণপুর-বড়জোড় ও গঙ্গারামচক মৌজার মাটির নীচে কয়লা উত্তোলনের বরাত পায় ‘এমটা’। সেই কয়লা বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করার পরিকল্পনা ছিল ওই সংস্থার। ২০১১ সালের পর থেকে কৃষ্ণপুর-বড়জোড় অঞ্চল এবং তার পরে গঙ্গরামচকে কিছু অংশে খোলামুখ খনি গড়ে কয়লা উত্তোলন শুরু করেছিল তারা। কিন্তু ২০১৪ সালে সারা দেশে ২০৪টি কোল-ব্লক বাতিলের তালিকায় ছিল খয়রাশোলের দুটি ব্লক-ও।

২০১৫ সালে নতুন কয়লা ব্লক বণ্টন আইনের আওতায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম রাজ্যে যে পাঁচটি কোল ব্লক থেকে কয়লা উত্তোলনের দায়িত্ব পায়, সেই তালিকায় নাম ওঠে খয়রাশোলের বড়জোড় ও গঙ্গারামচক মৌজার। কিন্তু পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন না মেলায় ২০১৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সেখানে কয়লা উত্তোলন করা যায়নি। জট কাটিয়ে ২০১৭ সালের শেষ দিকে খয়রাশোলের কৃষ্ণপুর-বড়জোড় মৌজা থেকে কয়লা উত্তোলনের প্রস্ততি শুরু হয়। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম মেনে ১০১ হেক্টর জায়গা নিজেদের নামে নিয়ে সেখানে জঙ্গল কাটাচ্ছে নিগম।

তা নিয়েই আপত্তি তুলছেন এলাকার আদিবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে না বলে পিডিসিএল বেমালুম প্রস্তাবিত কয়লাখিনি ঘেঁষে থাকা লোকজনের কথা ভুলে যাচ্ছে। সেটা হতে দেব না। সুনীল সরেন বলেন, ‘‘প্রস্তাবিত খনি এলাকা সংলগ্ন বাস্তবপুর, সগড়ভাঙ্গা, বেলডাঙা, ভাদুলিয়া গঙ্গারামচক, দেবগঞ্জ এলাকার আদিবাসীদের বসতে এখনই হাত পড়বে না, কিন্তু যে ভাবে জঙ্গল কেটে কয়লাখনি তৈরির কাজ চলছে, তাতে ঘুরিয়ে তাঁদের উচ্ছেদের পরিকল্পনাই করা হয়েছে। কারণ জঙ্গল না থাকলে জীবিকা কী ভাবে হবে। দু’দিন বাদে খনিতে বিস্ফোরণে ঘর ফেটে গেলে উচ্ছেদ হতে হবে। তাই আলোচনার ভিত্তিতে সহমতে না আসা পর্যন্ত জঙ্গল কটা চলবে না।’’ প্রশাসন সূত্রে খবর, অশান্তির ভয়ে

আপাতত গাছ কাটা বন্ধ রেখেছে পিডিসিএল। খয়রাশোলের বিডিও সঞ্জয় বলছেন, ‘‘কয়লা খনির জন্য জঙ্গল নিয়ে সিদ্ধান্ত আমার নেওয়ার কথা নয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বাকি দাবি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন