প্রামাণ্য: গ্রামে ‘বাঘের’ পায়ের ছাপ। শুক্রবার গরুঝোরায়। —নিজস্ব চিত্র।
সন্ধের অন্ধকার তখন ঘিরেছে গোটা গ্রাম। সিউড়ি শহরের লাগোয়া গরুঝোরায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, কোনও কাজে ঘর থেকে বাড়ির উঠোনে সবে নামতে যাবেন আলি মহম্মদ। হঠাৎ তাঁর মনে হয়, উঠোনে দাঁড়িয়ে বড় কোনও একটা জন্তু। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে ঘরে ঢুকে যান তিনি। আলি জানান, পুরনো টায়ার জ্বালিয়ে ফের বাইরে আসতেই দেখেন লাফিয়ে উঠোনের পাঁচিল টপকে গেল প্রাণীটি। সেটির গা যেন ডোরাকাটা!
স্থানীয় সূত্রে খবর, ভয় পেয়ে ‘বাঘ, বাঘ’ বলে চিৎকার জুড়ে দেন তিনি। ওই সময় রাস্তা দাঁড়িয়েছিলেন আলির আত্মীয়া মবিনাবিবি। চিৎকার শুনে বাড়ির দিকে ঘুরতেই তিনিও অন্ধকারে বড় একটা প্রাণীকে চলে যেতে দেখেন। আলির দাবি, সেটি সম্ভবত চিতাবাঘ। বৃহস্পতিবার রাতেই ওই খবর পৌঁছয় পুলিশের কাছে। খবর শুনে ওই গ্রামে পৌঁছন বন দফতরের আধিকারিকেরাও। তত ক্ষণে লাঠি, বটি, দা হাতে নিয়ে মশাল জ্বালিয়ে রাস্তায় নেমেছেন গরুঝোরার বাসিন্দারা। আতঙ্কে গোটা গ্রাম।
বনকর্মীদের বক্তব্য, ওই বাড়ির উঠোনে অচেনা জন্তুর পায়ের ছাপ দেখা গিয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন গ্রামবাসীদের একাংশ। কিন্তু সেই উঠোনে ভিড় জমে থাকায় পরে আর তেমন কিছু দেখতে পাননি বনকর্মীরা। আতঙ্কিত গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ওই গ্রামে প্রচুর গবাদি পশু রয়েছে। গ্রামের চারপাশে কৃষিজমি, ঝোপঝাড়়। তাই মাংসাশী প্রাণী গ্রামে ঢুকতেই পারে। হয়তো গ্রামে লুকিয়ে রয়েছে। সেটি খুঁজে বের করা জরুরি। তবে ওই গ্রামের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের শেখ সাজু বলছেন, ‘‘জীবনে কখনও এমন কথা শুনিনি। কিন্তু সবাই বলছে গ্রামে নাকি বাঘ ঢুকেছিল!’’ তাঁর মতোই বলেছেন কেউ কেউ।
মাসদু’য়েক আগে গণপুর জঙ্গল লাগোয়া গ্রামেও বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। কিন্তু সেখানে বাঘের দেখা মেলেনি। বন দফতরের কর্তারা প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন, গরুঝোরায় বাঘরোল বা ‘সিভেট ক্যাট’ জাতীয় প্রাণী ঢুকতে পারে। তবে তা-ও এই মুহূর্তে নিশ্চিত ভাবে বলার মতো পরিস্থিতি নেই। এডিএফও বিজনকুমার নাথ বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টিতে নজর রাখছি। ঠিক কোন প্রাণী ওই গ্রামে ঢুকেছিল তা শনিবার দুপুরের আগে বলা যাবে না।’’