বেহাল রাস্তার জন্য দায়ী এই সব ওভারলোডেড ট্রাকও। মঙ্গলবার যানজটে আটকে পড়েছে সেগুলিই।
রেলসেতুর নীচে বালি বোঝাই ট্রাক বিকল হয়ে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় যান চলাচল বন্ধ রইল সাঁইথিয়া-বহরমপুর রাজ্য সড়কে। তার জেরে প্রবল যানজটে মঙ্গলবার দিনভর ভোগান্তি পোহালেন নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে ট্রাক চালকেরা।
সোমবার রাত ১২টা নাগাদ সাঁইথিয়া-তালতলা সংলগ্ন ময়ূরাক্ষী নদীর রেলসেতুর নীচে দুর্ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, রাস্তা খারাপের কারণেই ওই ঘটনা। এ দিকে, রাস্তা সংস্কারের প্রসঙ্গে সামনে এসেছে পূর্ত দফতরের ও রেলের দায় ঠেলাঠেলির পালা। কেমন?
পূর্ত দফতরের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মণীশ মণ্ডলের দাবি, ‘‘রেল সেতুর নীচ ও দু’দিকের প্রায় ১৫-২০ মিটার করে রাস্তা রেলের এক্তিয়ার ভুক্ত। এ দিন যেখানে ট্রাকটি বিকল হয়েছে সেটাও রেলেরও।’’ সে দায় অবশ্য নিয়েছেন রেলের বোলপুর শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র মুকুল কুমার। তবে একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমাদের কাছে খবর আছে ওই রাস্তা দিয়ে খুব বড় বড় ভারি ভারি গাড়ি চলাচল করে।’’ তবে ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখে সংস্কারের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে, এত দিন সেটা হয়নি কেন! রাস্তার হাল দেখে পূর্ত দফতরই বা কেন রেলের সঙ্গে কথা বলে সংস্কারে এগিয়ে এল না? পূর্ত দফতরের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মণীশ অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমরা আগেই রাস্তা সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছিলাম। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদন করেননি।’’ এই তরজা দেখে ক্ষোভ গোপন করেননি ভুক্তভোগীরা। স্থানীয় বাস ও ট্রাক চালক গৌর রায়, তন্ময় মণ্ডলরা বলেন, ‘‘যে কোন সময় আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।’’স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁইথিয়া-তালতলা এলাকার ওই রেলসেতুর নীচের রাস্তা দীর্ঘ দিন ধরেই বেহাল। সোমবার গভীর রাতে সিউড়ির দিক থেকে বালি বোঝাই ট্রাকটি বালুরঘাটের দিকে যাওয়ার সময় রাস্তার মধ্যে তৈরি হওয়া বড় গর্তে পড়ে যায়! সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যায় ট্রাকের অ্যাক্সেল। ট্রাক চালক গজু শেখ বলেন, ‘‘রাস্তায় খাল থাকায় সাবধানে যাচ্ছিলাম। কিন্তু বিপদ থেকে রক্ষা হল না।’’
বিকল্প পথ ভাসা ব্রিজ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ আরও বাড়ে। ময়ূরাক্ষীর জল বাড়ায় গত দেড় মাস বন্ধ হয়ে আছে সাঁইথিয়া শহরের সঙ্গে তালতলা এলাকা যোগাযোগের দ্বিতীয় বিকল্প এই পথটি। যার ফলে বহরমপুর, রামপুরহাট, রামনগর, তারাপীঠ-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা থমকে। যাত্রী বোঝাই সরকারি ও বেসরকারি বাস-সহ বহু গাড়ি রেলসেতুর পূর্বে বহরমপুর, রামপুরহাট, রামনগর পশ্চিমে মহম্মদবাজার এবং ময়ূরাক্ষীর সড়ক সেতু হয়ে সাঁইথিয়া-সিউড়ি রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়িয়া যায়। মোটরবাইক, সাইকেল ও পায়ে হেঁটে চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
ট্রাক চালক মহম্মদ সাদেক, বরুণ দে-রা বলেন, ‘‘গভীর রাত থেকে দাঁড়িয়ে আছি। পিছনে সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় ঘুরিয়ে অন্য পথ দিয়ে যাওয়ারও উপায় নেই।’’ পরে পরিস্থিতি দেখে রাস্তার পাশের ফুকো দিয়ে সাময়িক যান চলাচলের ব্যবস্থা করে পুলিশ ও প্রশাসন। বিকেল তিনটে নাগাদ ওই পথ দিয়ে খালি ও হালকা যান চলাচল শুরু হয়। —নিজস্ব চিত্র